বজ্রপাত প্রতিরোধে তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা বাতিল

প্রকাশ | ১১ মে ২০২২, ১৮:৪২

অনলাইন ডেস্ক

বজ্রপাতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত এক কোটি তালগাছের চারা লাগানোর যে পরিকল্পনা নিয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। বুধবার (১১ মে) দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত “দুর্যোগ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত আমরা” শীর্ষক সংলাপে তিনি একথা বলেন। বিএসআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের উপস্থাপনায় সংলাপের সভাপতিত্ব করেন তপন বিশ্বাস।

জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে দেশে বজ্রপাতের ঘটনা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। ওই বছর দেশে বজ্রপাতে নিহত হন প্রায় সাড়ে চারশ’ মানুষ। এর মধ্যে একদিনেই মারা যান ৮২ জন। বিষয়টি তখন সংবাদমাধ্যমসহ সর্বত্র ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এ ঘটনায় কালবৈশাখী-ঘূর্ণিঝড়, বন্যা-জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প-অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে নতুন দুর্যোগ হিসেবে যুক্ত হয় বজ্রপাত। বিষয়টি সরকারকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এটিকে নতুন দুর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যাপক আলোচনা ও পর্যালোচনা করে। এরপর ২০১৭ সালে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে সারা দেশে রাস্তার দুই পাশে তালগাছের চারা-আঁটি রোপণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর কাবিখা-টিআর প্রকল্পের আওতায় তালগাছের চারা-আঁটি লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক কোটি তালগাছের চারা লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ৩৮ লাখ তালগাছ লাগানোর পর দেখা গেলো যত্নের অভাবে গাছগুলোর বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এটা বাতিল করে দিয়েছি। তিনি বলেন, একটা তালগাছ উঁচু হতে ৩০-৪০, ৫০ বছর লাগে। বজ্রপাত প্রতিরোধে এটা ততোটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে না। এখন বজ্রপাত প্রতিরোধে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি প্রবর্তন হয়েছে। আমরা সেটাকেই এখন আমাদের দেশে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে আশ্রয়কেন্দ্র ও লাইটনিং এ্যারেস্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সচেতনতা প্রচারণা ও আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম চালু করবো। ৪০ মিনিট আগেই মোবাইল অ্যাপে সতর্ক করতে পারবে। খোলা জায়গায় যারা থাকবে তাদের জন্য ছোট করে লাইটনিং সেন্টার ও লাইটনিং এ্যারেস্টার স্থাপন করা হবে। ডিপিপি অনুমোদন হলে শুরু করবো। পরীক্ষামূলকভাবে ৪০টি বসিয়েছি। প্রতিমন্ত্রী জানান, আসন্ন বাজেটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মৃত্যু বরণ করেছেন ২ হাজার ১৬৪ জন মানুষ। এক্ষেত্রে ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১১ সালে ২০১ জন, ২০১৩ সালে ১৮৫ জন, ২০১৪ সালে ১৭০ জন, ২০১৫ সালে ১৬০ জন, ২০১৬ সালে ২০৫ জন, ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৮ সালে ৩৫৯ জন, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন ও ২০২০ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৩৬ জন। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ২১৬ জনের বেশি মানুষ প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে মৃত্যুবরণ করেছে। আর ২০২১ সালে বজ্রপাতে অন্তত ৩৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

চলতি বছরে ২০২২ সালের ৩ মে পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩৫। বুধবার (০৪ মে) সকালেও কক্সবাজার একজন লবণ চাষি ও ফরিদপুরে একজন কৃষক মারা গেছেন। ঐ কৃষকের সঙ্গে তাঁর গরুটিও মারা গেছে। এমনকি ঈদের দিন দেশে বজ্রপাতে মারা গেছে অন্তত আট জন মানুষ।