রামেকে শতাধিক পাখি হত্যা: বনবিভাগ বলছে ‘মামলা আমরা ডাইরেক্ট করতে পারি না’

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৩:২৬

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনের অর্জুন গাছে বাসা বেঁধেছিল কয়েকশত শামুকখোল পাখি। সম্প্রতি সেখান থেকে ড্রেন নির্মাণের জন্য দুটি গাছ কেটে ফেলে কর্তৃপক্ষ। আর এতে গাছে থাকা বাসা ভেঙে পড়ে প্রাণ হারায় অন্তত শতাধিক শামুকখোল পাখির ছানা। এদিকে রাজশাহীর সহকারী বন সংরক্ষক বলছেন, ‘মামলা আমরা ডাইরেক্ট করতে পারি না’।

৪ সেপ্টেম্বর (শনিবার) দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে পাখির সঙ্গে ঘটে যায় এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের সামনে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। আর তাই সেখানে কাটা হয়েছে দু’টি অর্জুন গাছ। সেই গাছ থেকেই পড়েছে পাখির ছানাগুলো। এ সময় বেশিরভাগ ছানা গাছ থেকে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়। আরও জানা যায়, যে ছানাগুলো বেঁচে ছিল সেগুলোকে জবাই করে নিয়ে গেছেন নির্মাণ শ্রমিক ও স্থানীয়রা।

যে ছানাগুলো বেঁচে ছিল সেগুলোকে জবাই করে নিয়ে গেছেন নির্মাণ শ্রমিক ও স্থানীয়রা।

ঘটনার সময় সামনে উপস্থিত ছিলেন পাবনার দাশুরিয়া থেকে আসা মিলন প্রামাণিক (৪০) নামের এক রোগীর আত্মীয়।

মিলন জানান, ঘটনার সময় শতাধিক পাখির ছানা মাটিতে মৃত অবস্থায় দেখেছি। দুপুরের দিকে কিছু পাখির ছানা নিয়ে গেছেন হাসাপাতালে আসা অনেক রোগীর স্বজনেরাও।

রামেকের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ প্রকৃতিপ্রেমী নাগরিকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠছে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়। 

এ বিষয়ে প্রাণ প্রকৃতি বিষয়ক পরিবেশ বিষয়ক সাংবাদিক হোসেন সোহেল সাহস২৪.কমকে বলেন, ‘প্রথমত, মেডিক্যাল কলেজ, বনবিভাগের থেকে অনুমতি নিয়েছে ৩৭টি গাছ কাটবে। দুইটি গাছ কাটার ফলেই সেখানে মারা গিয়েছে প্রায় একশর উপর শামুকখোল পাখির মা ও ছানা। সেখানে অন্তত ২০টি গাছে শামুকখোল, পানকৌড়ি ও অন্যান্য প্রজাতির অসংখ্য পাখির বসবাস আছে। বাকী ৩৫টি গাছ কাটলে বিষয়টি আরও মর্মান্তিক হয়ে দাঁড়াবে।’ 

‘দ্বিতীয়ত গত বছরে রামেকের পরিচালক বলেছিলেন মাথায় পাখির বিষ্ঠা পড়ে। তাই এই গাছগুলো কেটে ফেলা হবে। কিন্তু জনরোষের তোপে গাছ না কাটার কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি রাখেননি সে কথা। এখন তিনি ‘সাইলেন্টলি’ (গোপনে) গাছগুলো কেটে ফেলেছেন। যা আমরা গণমাধ্যমের রিপোর্টে দেখতে পাই।’

সারাদেশের প্রাণ প্রকৃতিকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হলে উচ্চপদস্থদের এগিয়ে আসা উচিত জানিয়ে হোসেন সোহেল বলেন, ‘শিক্ষিত মানুষরাই যদি এমন মর্মান্তিক অপকর্ম করেন তাহলে তাদেরকে বোঝাবে কারা! উনারাই যদি সচেতন না হন, প্রান্তিক মানুষদের উপরেতো আমরা আশা রাখতে পারি না।’

বন্যপ্রাণি হত্যার অভিযোগে এ বিষয়ে মামলা হওয়া উচিত বলে তিনি বলেন, ‘বন বিভাগ  কেন মামলা করছে না আমি জানি না।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের পোস্টে সবাই বলছে মামলা করার কথা। তবে সূত্রে জেনেছি, পরিচালকের ক্ষমতার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি কুলিয়ে উঠতে পারছে না বনবিভাগ।’ 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী ও উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌসের নম্বরে কল করা হলে তারা রিসিভ করেননি।

রাজশাহীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহমদ নিয়ামুর রহমানের সাথে কথা বললে, দায়িত্বশীল অন্য অন্য এক কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

শতাধিক পাখির হত্যার পরও কেন বন বিভাগ মামলা করছেন না, জানতে চাইলে সহকারী বন সংরক্ষক জিল্লুর রহমান সাহস২৪.কমকে বলেন,  ‘মেডিক্যাল অথোরিটিকে আমরা জানাইছি (জানিয়েছি)। ডাইরেক্ট (সরাসরি)মেডিক্যাল অথোরিটির বিরুদ্ধে আমরা মামলা করতে পারি না। একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান আরেকটা সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে  মামলা করতে পারে না। উনাদের কতৃপক্ষকে জানানো হইছে’।

জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জানিয়ে জিল্লুর বলেন, ডিসি মহোদয় পরিবেশ বন কমিটির সভাপতি। ডিসি মহোদয় মেডিক্যালের পরিচালকের সাথে কথা বলবেন। এ বিষয়টি মন্ত্রণালয়েও জানানো হবে।

এর আগেও একবার লিখিত অভিযোগের কথা জানিয়ে এ সহকারী বন সংরক্ষক বলেন, ‘এক দফায় ডায়রেক্টর (রামেক পরিচালক) সাহেব আমাদের বলছিলেন ব্যবস্থা নিবেন। এখনও উনি একই কথা বলছেন ব্যবস্থা নিবেন। আমাদের  পক্ষে যতটুকু করার আমরা করছি। মামলা আমরা ডাইরেক্ট করতে পারি না’।

সাহস২৪.কম/এবি/এসটি/এসএ.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত