দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে ঢাকা

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:১২

সাহস ডেস্ক

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে সোমবার সকালে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। বাতাসের গুণগতমানের ক্রমগত বিপর্যয় কোভিড-১৯ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে দেশের চলমান লড়াইয়ের এক বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে জনবহুল এই শহরের একিউআই স্কোর ছিল ৩২৩ যাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। এ অবস্থায় প্রত্যেকেই মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়তে পারেন।

একিউইআই মান ৩০০ এর বেশি হলে মানুষকে বাইরের সকল কাজ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের জন্য কোনো ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা জানায়।

একিউআই সূচক অনুসারে, দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ২৯৪ে স্কোর নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর দ্বিতীয় এবং ২৯৩ স্কোর নিয়ে ভারতের কলকাতা তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

বায়ু দূষণের সাথে ঢাকার সম্পর্ক অনেক পুরনো। সাধারণত বর্ষার মৌসুমে শহরের বাতাসের মানের উন্নতি হয়। তবে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বাতাসের মানের দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করেছে।

পিএম২.৫ এর জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। বিশ্ব বায়ু মান প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে ঢাকা দ্বিতীয় দূষিত বাতাসের শহরের উঠে আসে। শহরের আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে স্থাপন করা ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়াকে বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে দায়ী করা হয়।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দুষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।

এদিকে বায়ু দূষণ বন্ধে গত ২৪ নভেম্বর ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সাথে ৩০ দিনের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিচারপতি মো.আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। পরিবেশ অধিদপ্তর, উত্তর সিটি করপোরেশন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন যথাক্রমে অ্যাডভোকেট আমাতুল করিম, অ্যাডভোকেট তৌফিক ইনাম টিপু ও অ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমিন।

ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বায়ু দূষণ বন্ধে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা এক রিট আবেদনে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট ৯ দফা নির্দেশনা জারি করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়।

মনজিল মোরসেদ জানান, নির্দেশনাগুলো হলো- ১. ঢাকা শহরে মাটি/বালি/বর্জ্য পরিবহনকৃত ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা, ২.নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি/বালি/সিমেন্ট/পাথর/নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা, ৩. সিটি করপোরেশন রাস্তায় পানি ছিটাবে, ৪. রাস্তা/কালভার্ট/কার্পেটিং/খোড়াখুড়ি কাজে টেন্ডারের শর্ত পালন নিশ্চিত করা, ৫. কালো ধোয়া নিঃসরণকৃত গাড়ি জব্দ করা, ৬. সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও উত্তীর্ণ হওয়া সময়সীমার পরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা, ৭. অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা, ৮ পরিবেশ লাইসেন্স ব্যতীত চলমান সকল টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা এবং ৯. মার্কেট/দোকান গুলিতো প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগ ভরে রাখা এবং অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনকে পদক্ষেপ নেয়া।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত