কক্সবাজারে দুই বছরে ১৩টি বন্যহাতি ‘হত্যা’

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১২:৫২

ঢাকা ট্রিবিউন

কক্সবাজারে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরি ও বনভূমি ধ্বংসের কারণে একের পর এক বন্যহাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হচ্ছে। চলতি নভেম্বর মাসে শুধুমাত্র কক্সবাজার জেলায় অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ৩টি বন্যহাতির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই বছরে ১৩টি বন্যহাতির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।   

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী কর্মীরা বলছেন, চলতি মাসের ৬ নভেম্বর থেকে কক্সবাজারের রামু ও চকরিয়ায় বিদ্যুৎ শক এবং গুলি করে হত্যা করা হয়েছে ৩টি বন্যহাতি। গত দুই বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের অঞ্চলে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছে ১৩টি বন্যহাতির। 

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ২৬৮টি মহাবিপন্ন এশিয়ান হাতির দুই-তৃতীয়াংশের বাস কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। কিন্তু, কক্সবাজার ও পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চলে রেললাইন, বিভিন্ন প্রকল্প, অবৈধ দখলসহ বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে হাতির আবাসস্থল উজাড়, চলাচলের করিডোরে চরমভাবে বাধাগ্রস্থ ও খাদ্য সংকটে পড়েছে এসব হাতি। ফলে বাধ্য হয়েই খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হানা দেওয়ায় বন্যহাতি ও মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে ফসল রক্ষায় এসব হাতিকে বিদ্যুৎ শক দিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। 

গত ৬ নভেম্বর চকরিয়ার খুটাখালী বনাঞ্চলে একটি বাচ্চা হাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১০ দিনের ব্যবধানে ১৬ নভেম্বর রামুর জোয়ারিয়ানালা বনাঞ্চলে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩০ বছর বয়সী স্ত্রী হাতি মারা যায়। এক দিনের ব্যবধানে ১৭ নভেম্বর রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়িতে বিদ্যুতের শক ও গুলি করে আরও একটি হাতিকে হত্যা করা হয়। একইভাবে গত দুই বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের অঞ্চলে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হয়েছে ১৩টি বন্যহাতির। 

কক্সবাজারে একের পর এক এশিয়ান হাতির মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি, খাদ্য সংকট দূর করা, হাতি চলাচলের করিডোর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন রাখা, হাতি হত্যায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা, মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা, বনভূমি দখল রোধ, নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টিসহ মহাবিপন্ন এই এশিয়ান হাতি সুরক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা নাহলে মানুষের নির্মমতায় দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে পড়বে বন্যহাতি।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, “কক্সবাজারে অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। বিশেষ করে রেললাইন ও রোহিঙ্গাদের কারণে বন্যহাতির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। গভীর বনাঞ্চলেও মানুষ অবৈধ দখলে নিয়ে বসতি স্থাপন করেছে। এতে করে চরম খাদ্য সংকট সৃষ্টি হওয়ায় হাতিগুলো লোকালয়ে মানুষের ফসলে হানা দিচ্ছে এবং মানুষের নির্মমতায় মারা যাচ্ছে হাতি।

পরিবেশবাদী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে একের পর এক বন্যহাতিকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। হাতি এবং মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। কক্সবাজার অঞ্চলে যেসব বন্যহাতি রয়েছে তারা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বন্দী হয়ে আছে। হাতির আবাসস্থল দিয়ে অপরিকল্পিত রেললাইন ও রোহিঙ্গা বসতি ওড়ে উঠায় এ পর্যন্ত হাতির ২২টি করিডোর বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে হাতিগুলো লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এছাড়া একশ্রেণির দুষ্কৃতিকারীরা হাতি গুলোকে গুলি করে হত্যা করছে। হাতিগুলোকে বাঁচাতে গেলে সরকারকে সঠিক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. নাজমুল হুদা জানিয়েছেন, কক্সবাজারে বিভিন্ন এলাকায় হাতিসহ বন্যপ্রাণী হত্যার বিষয়টি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন মানব সৃষ্ট কারণে অবিরত হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে। ফলে তাদের খাদ্য ও আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার দক্ষিণ ও উত্তর বিভাগীয় বনকর্মকর্তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার বন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি মাসে ৩টি বন্যহাতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দেখা গেছে, প্রতিটি হাতিকে ৪ থেকে ৮টি পর্যন্ত গুলি করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ শকের চিহ্নও রয়েছে। ফলে মানুষের এমন নির্মমতায় দেশ থেকে এশিয়ান হাতি বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত