বিলুপ্তির পথে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম সাপ

প্রকাশ : ১০ জুন ২০১৯, ১৭:১৮

সংগৃহীত

অজগর বা পাইথন (pythons) হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম সাপ। র্গের অন্তর্গত (Boidae) গোত্রের বিষহীন আদিম সাপ। অজগরের ৯টি প্রজাতি আছে।  অজগর প্রকান্ড আকৃতির সাপ। এদের দেহের ব্যাস তুলনামূলকভাবে দৈর্ঘ্যের দিক থেকে অন্য যে কোন সাপের তুলনায় বেশি। অজগরের আঁশ মসৃণ। অজগরের দাঁত অত্যন্ত শক্তিশালী, কিন্তু কোনো বিষদাঁত নেই। গ্রীবা স্পষ্ট, মস্তক প্রশস্ত এবং তুন্ড দীর্ঘ। অজগরকে ময়াল নামেও ডাকা হয়।  এদের পিছনের পা-এর চিহ্ন পুরো বিলুপ্ত হয়নি।

আফ্রিকা মহাদেশের বিষুবীয় সাহারা অঞ্চলে অজগর পাওয়া যায়। তবে এই মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা যেমন, ওয়েষ্টার্ণ কেপ ও মাদাগাস্কারে এই প্রজাতির সাপ পাওয়া যায় না। এশিয়া মহাদেশে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এই সাপের বসতি আছে। এছাড়া দক্ষিণ চীন, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ ও ইন্দোনেশিয়ায় পাইথন দেখতে পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে অজগরের দুটি প্রজাতি আছে। এর একটি অজগর বা ময়াল সাপ (Rock Python) এবং অন্যটি গোলবাহার (Reticulated Python)।। এদের মধ্যে বড় ময়াল সাপ। এরা ১৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অথবা দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের মিশ্র-চিরহরিৎ বন ও গরান বনাঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। বাংলাদেশে দুটি প্রজাতিই বিরল। 

অজগর স্তন্যপায়ী, পাখি এবং সরীসৃপজাতীয় প্রাণী নির্বিচারে খায়। তবে স্তন্যপায়ী প্রাণী বেশি পছন্দ করে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ইঁদুর, খরগোশ,শুকর, ছাগল, ভেড়া, শিয়াল, কুকুর এবং হরিণ শিকার করে। অজগর তার শিকার পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলে। এরা শীকারকে সাধারনত মাথার দিক থেকে গিলে খাওয়া শুরু করে। কারণ, এতে শীকারের বাধা দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। শীকার হজম করতে তাদের কয়েকদিন সময় লাগে। অজগর মৃত প্রাণী খায়না।

এদের অবলোহিত(তাপ) রশ্মি দেখার বিশেষ তাপদৃষ্টি(infrared vision) ইন্দ্রিয় আছে (যে ক্ষমতা কিছু বোড়াদেরও আছে কিন্তু গঠন ও বিবর্তন ভিন্ন)। অজগরের উপরের ঠোঁট বরাবর এই ইন্দ্রিয় অবস্থিত।

পাইথন একটু দেরিতে প্রজনন শুরু করে। সাধারনত একটি সাপ ৫ থেকে ৬ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। একটি স্ত্রী পাইথন প্রচুর খাদ্যগ্রহন করে যথেষ্ট শক্তি অর্জন করার পর একসাথে আনেকগুলো ডিম পারে। অজগরের প্রজনন সময় শুরু হয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে। যৌন মিলনের তিন-চার মাস পরে এরা ডিম দেয়। স্ত্রী অজগর ডিমের চারদিকে কুন্ডলী পাকিয়ে তা দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে মা তাদের পরিচর্যা করে না। করোটির গঠন ও প্রজনন পদ্ধতি দ্বারা অজগরকে বোয়া থেকে পৃথক করা যায়।

অধিকাংশ অজগর কিছুটা বৃক্ষবাসী। বনে-জঙ্গলে এদের পাওয়া যায়। তবে নদী, হাওর কিংবা ঝিলের সন্নিকটে এদের বেশি দেখা যায়। পানিতে এরা স্থিরভাবে থাকে, প্রয়োজনে দক্ষতার সাথে সাঁতারও কাটতে পারে। তবে অজগর সাধারণত পানির কিনারায় তুন্ড বাইরে রেখে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবে ডুবে থাকে। 

তবে বর্তমানে ভারতীয় ময়ালদের সবচেয়ে বেশি শিকার তার চামড়ার কারণে। ফ্যাশন বানিজ্যে এটা খুবই জনপ্রিয়, মূলত ভয়াল ও অদ্ভুত মোজাইকের কারণে। এছাড়া কিছু অঞ্চলে খাদ্যের জন্যও এদের শিকার করা হয়। কিন্তু ভবিষ্যতে এই প্রজাতির বিলুপ্তি ঠেকানোর জন্য আমাদের এখন থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত। অজগর শিকার বন্ধ করা উচিত, কিংবা অন্তত কমিয়ে আনা উচিত।

আজগর বিপদাপন্ন না হলেও অচিরেই তারা বিপদাপন্ন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশে অবশ্য বার্মিজ এবং ভারতীয় দুটি প্রজাতিকেই বিরল বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উভয়কে বিপন্ন অথবা অতি বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তথ্যসুত্র-বাংলাপিডিয়া

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত