দুর্লভ আবাসিক পাখি বালিহাঁস

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০১৯, ০০:৫৩

সংগৃহীত

বালিহাঁস বা বেলেহাঁস অ্যানাটিডি (Anatidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত এক প্রজাতির অতি পরিচিত ছোট আকারের হাঁস। বুনো হাঁসের এই প্রজাতিটি আকারে বেশ ছোট। এর দৈর্ঘ্য ৩৩.৫ সেন্টিমিটার, ডানা ১৫.৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৮ সেন্টিমিটার, লেজ ৭.৩ সেন্টিমিটার ও পা ২.৪ সেন্টিমিটার। ওজন ২৫০ গ্রাম। স্ত্রী ও পুরুষ হাঁসের চেহারায় পার্থক্য রয়েছে। পুরুষ হাঁসের মাথার চাঁদি ও পিঠ কালচে বাদামি। মুখ, ঘাড়, গলা ও দেহতল সাদা। গলায় স্পষ্ট কালো বলয় দেখা যায়। ডানায় সাদা ডোরা থাকে। চোখ লালচে বাদামি। ছোট ঠোঁট কালো। স্ত্রী হাঁসের দেহতল অনুজ্জ্বল ফিকে সাদা। ডানার প্রান্ত সাদা। চোখ বাদামি, চোখ বরাবর কাজলের মত কালো চক্ষু-রেখা থাকে। ঠোঁট কালচে-জলপাই বা বাদামি। ঠোঁটের নিম্নভাগ ও সঙ্গমস্থল হলুদাভ। স্ত্রী ও পুরুষ হাঁস উভয়ের পা ও পায়ের পাতা কালচে-বাদামি বা কালো রঙের। অপ্রাপ্তবয়স্ক হাঁস দেখতে স্ত্রী হাঁসের মত। তবে চক্ষু-রেখা প্রশস্ততর ও দেহতলের রঙে পার্থক্য রয়েছে। 

বাংলাদেশে এক সময়ে যত্রতত্র দেখা যেত। এরা জলজ উদ্ভিদভরা হ্রদ, হাওর, বিল, বড় পুকুর ইত্যাদিতে বিচরণ করে। বর্তমানে হাওরাঞ্চল বা বড় জলাশয় ছাড়া খুব একটা দেখা যায় না। পাখি নিধনকারী (শিকারীদের) লোভের কারণে আজ ওরা হারিয়ে যেতে বসেছে। 

৫-১৫টি হাঁসের ছোট দলে দেখা যায়। তবে কখনও কখনও একই জায়গায় সারা বছর এক জোড়া হাঁসের দেখা মেলে। কারণ এরা সে জায়গার স্থান-কেন্দ্রিক প্রাণী। জুন-সেপ্টেম্বর প্রজননকাল। সচরাচর পানির ধারেকাছে মরা গাছের কোটরে-ফোকরে বাসা করে। মানুষের বানানো কৃত্রিম বাসায়ও ডিম পাড়তে দেখা যায়। বাইক্কা বিলে এদের জন্য যে কাঠের বাসা বানানো হয়েছে, তাতে প্রতি বছর ডিম-বাচ্চা তুলছে। হাঁসি সচরাচর ৬-১২টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে এবং একাই ২২-২৪ দিন তা দিয়ে ছানা ফোটায়। ছানারা বেশ ইঁচড়ে পাকা হয়। ডিম থেকে ফোটার ১২-১৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাসা থেকে লাফিয়ে পানিতে নেমে যায়।

যে এলাকায় এরা থাকে সেখানকার জলাভূমি থেকে খাবার সংগ্রহ করে এবং পরিচিত একটি বা দু'টি গাছের খোঁড়লে বছরের পর বছর বাসা করে। পানিতে ভাসমান জলজ উদ্ভিদ থেকে এরা খাবার সংগ্রহ করে। খাদ্য তালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদের কচি কাণ্ড, বীজ, চিংড়ি, কাঁকড়া, পোকামাকড় ও তাদের লার্ভা। হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিল, জলাশয়ের কাছাকাছি পুরোনো নারকেল, তাল, খেজুর গাছের খোঁড়লে বালিহাঁস বাসা বাঁধে।

বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, চীন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে নিয়মিত এদের দেখা যায়। এসব দেশে এরা স্থায়ী পাখি।

সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৯২ লাখ ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। পৃথিবীতে এদের মোট সংখ্যা ১,৩০,০০০-১১,০০,০০০। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে। বাড়েনি আবার আশংকাজনক হারে কমেও যায়নি। আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে (Least Concern) বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। মানুষ ছাড়াও বাজপাখি, ইঁদুর, বনবিড়াল, চিল এদের প্রধান শত্রু।

তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া

 

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত