সুন্দরবনে থামাতে হবে বাঘ হত্যা

প্রকাশ : ৩০ মে ২০১৯, ০১:৫৩

সংগৃহীত

সুন্দরবন হলো উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি ম্যানগ্রোভ বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। সামুদ্রিক ঝড়ের বিরুদ্ধে ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন দক্ষিণবঙ্গের প্রাকৃতিক প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাণীবৈচিত্র্য সংরক্ষণ কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যদিও এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদ হ্রাস পেয়েছে এবং সুন্দরবনও এর বাইরে নয়।

বাংলাদেশের সুন্দরবনের অত্যন্ত সমৃদ্ধ প্রাণী বাঘ। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে মোট বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি, যা কমতে কমতে ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১৪টি টিতে। এখন পর্যন্ত ধারণা করা হয়, ১১৪টি বাঘ আছে বাংলাদেশের সুন্দরবনে। এর আগে ২০১৫ সালে ইউএসএআইডি বাঘ (USAID BAGH) প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে পরিচালিত জরিপে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব চিহ্নিত হয়েছিল।

আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল খ্যাত বাঘের আবাসস্থল হিসাবে বহুল পরিচিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। গত কয়েক বছরে সুন্দরবনে বেশ কয়েকবার বাঘের চামড়া এবং হাড় পাওয়া গেছে, যেটা ইঙ্গিত করে যে, সুন্দরবনে বাঘ চোরাশিকার চলছে। এর সঙ্গে সঙ্গে চলছে বনে বাঘের যে প্রধান খাদ্য, সেই হরিণের চোরাশিকার৷ বাঘ শিকারের ফলে সরাসরি বাঘের সংখ্যা কমছে৷ আর হরিণের চোরাশিকারের ফলে বাঘের খাদ্য কমে যাচ্ছে৷

ৎবাঘ হলো সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পাহারাদার। বাঘ আছে বলে, সেখানে মানুষ যায় না। অর্থাৎ মানুষ না গেলে বনাঞ্চলের ক্ষতি হওয়ার সুযোগ থাকে না। ফলে বন রক্ষা পায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাঘ আছে। কিন্তু আমাদের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার সুন্দরবনে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি বাঘ আছে। বাঘ বেঁচে থাকলে বনের জীববৈচিত্র্য বেঁচে থাকবে। আর জীববৈচিত্র্যের কী প্রয়োজন তা, বিশ্বব্যাপী মানুষের অজানা নয়। 

বাঘ হত্যায় শিকারীরা ব্যবহার করে বিষটোপ। অত্যন্ত সহজলভ্য এই বিষটোপের কাঁচামাল। প্রথমে এরা ফাঁদ দিয়ে হরিণ শিকার করে। এরপর মৃত হরিণের মাংশের সাথে  বিশ মিশিয়ে বিষটোপ তৈরি করে। সুন্দরবনের বাঘ প্রধানত কীটনাশক-মিশ্রিত এই বিষটোপ ব্যবহার করে মারা হচ্ছে। 

বনাঞ্চল না থাকলে  আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। সুন্দরবনে মধু, কাঠ, গোলপাতা সংগ্রহ এবং মাছ শিকার বন্ধ করতে হবে। এসবের উপর নির্ভরশীল স্থানীয় জনগণকে কৃত্রিম উপায়ে মধু, গবাদিপশু ও মাছ  চাষের প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে হবে। সংশ্লিস্ট দপ্তর গুলো প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করে বনাঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করা। এদের জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা না কেরলে এরা বন ধ্বংস করবেই। এ ক্ষেত্রে বন বিভাগের কিছুই করার থাকবে না।

বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় ৪৯টি বাঘকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় জনতা। বিশ্বের কোনো কোনো দেশে কথিত ওষুধ হিসেবে বাঘের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশে বাঘের মাংস, হাড়, চামড়া, চর্বি, তেল নিয়ে কিছু বাণিজ্য রয়েছে। এই কারবারিরা সুন্দরবন এলাকায় বাঘ হত্যা ও চোরাকারবারিদের চাঙ্গা রাখছে। সুন্দরবনসহ আশপাশে এ নিয়ে একটি চক্র গড়ে ওঠেছে। এদের না দমালে ভবিষ্যতে শুমারি করার মতো বাঘ সুন্দরবনে মিলবে না। 

২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করে। সুন্দরবনে যে কোনো মূল্যে বাঘ শিকার বন্ধ করতে হবে। বিষটোপ ব্যবহার এখনই থামাতে হবে। খুব বেশি সময় আমাদের হাতে নেই। চোরাশিকার বন্ধ করা না গেলে বাঘ বিলুপ্ত হয়ে জাবে সুন্দরবন থেকে। এই চরম সর্বনাশ হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সংশ্লিস্টদের। বাঘ বাঁচলে রক্ষা পাবে সুন্দরবন ।

তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত