মহাবিপন্ন পাহাড়ের রামকুত্তা

প্রকাশ : ২২ মে ২০১৯, ০০:৩৫

রামকুত্তা(কুকুর) সামাজিক প্রাণী। এশীয় বুনো কুকুর, ভারতীয় বুনো কুকুর বা ঢোল কেনিডি (Canidae) পরিবারের অন্তর্গত এক প্রজাতির বন্য কুকুর। এদের আবাস দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। প্রজাতিটি কুয়ন(Cuon) গণভূক্ত একমাত্র জীবিত প্রজাতি। Canis (কেনিস) গণভূক্ত সদস্যদের তুলনায় এদের পেষণ দাঁতের সংখ্যা কম ও স্তনবৃন্তের সংখ্যা বেশি। 

রামকুত্তা(কুকুর) আকারে নেকড়ে ও শিয়ালের মাঝামাঝি। লম্বায় ৪৫-৬০ সেন্টিমিটার, লেজ ২০-২৭ সেন্টিমিটার। ওজন ১০-২০ কেজি, পা খাটো, লেজ ঝোপালো ও নাকের ওপরের অংশ খানিকটা উঁচু। মাথা ও দেহের ওপরের অংশের লোম বাদামি-লাল। ঋতুভেদে রং হালকা থেকে গাঢ় হতে পারে। কানের ভেতর, মুখের নিচ, গলা ও দেহের নিচের অংশের রং সাদা। ঝোপালো লেজের ডগা কালো।

রামকুত্তা(কুকুর) দিনের বেলা শিকার করে। দলে ২-৩০টি পর্যন্ত রামকুত্তা(কুকুর) থাকতে পারে।  শিকার ধরার সময় এসব দল আবার ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে যায়। মধ্যম আকারের তৃণভোজী প্রাণী এদের প্রধান খাদ্য। বহু সময় ধরে এরা শিকারকে তাড়া করে আর শিকার একসময় ক্লান্ত হয়ে গেলে দলবদ্ধভাবে ঘিরে ফেলে এবং শিকারের পেট চিরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরা সাধারণত মাঝারি আকারের প্রাণী, যেমন—হরিণ, শূকর, ছাগল এসবকে আক্রমণ করে। প্রয়োজনে বনগরু বা মহিষের মতো বড় পশুকেও আক্রমণ করতে পারে। শিকার করা প্রাণী এদের ছানাদের আগে খেতে দেয়, পরে নিজেরা খায়, যেটা অন্যসব সামাজিক কেনিডদের চেয়ে ব্যতিক্রম।

রামকুত্তার(কুকুর) দল কোনো প্রাণীকে সামনে ও পেছনে উভয় দিক থেকেই আক্রমণ করে এবং তাড়িয়ে নিয়ে যায়। তাড়াতে তাড়াতে ক্লান্ত করে ফেলে। তাড়ানো অবস্থাতেই জীবিত প্রাণীটিকে খুবলে খেতে থাকে। এভাবে ১০-১৫টি বনকুকুর মিলে অল্প সময়ের মধ্যেই যেকোনো প্রাণীকে সাবাড় করে ফেলতে পারে। এরা ভালুক, চিতাবাঘ বা বাঘকে এড়িয়ে চলে, তবে আক্রান্ত হলে তাদেরও রেহাই নেই। খাদ্যস্বল্পতার সময় ফল ও সরীসৃপ খেয়েও বাঁচতে পারে। এরা কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে না, বরং হুইসেল বা শিস দেওয়ার মতো করে শব্দ করে।

রামকুত্তা(কুকুর) মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বা পাহাড়ের গুহায় বাস করে। সেপ্টেম্বর-ফেব্রুয়ারি প্রজননকাল। স্ত্রী বনকুকুর ৬০-৬৫ দিন গর্ভধারণের পর গর্তে বা গুহায় চার থেকে ছয়টি বাচ্চা দেয়। বাচ্চা পালনে দলের অন্য সদস্যরাও সাহায্য করে। বাচ্চারা এক বছরে পূর্ণবয়স্ক হয়। এরা ১০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। 

রামকুত্তা(কুকুর) এ দেশে বর্তমানে একটি অতিবিপন্ন (Critically Endangered) প্রাণী। মূলত চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের গহিন বনে বাস করলেও একসময় এ দেশে এদের অস্তিত্বের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তবে বিভিন্ন সূত্রমতে, এ দেশে এখনো এরা টিকে আছে। ক্রমান্বয়ে আবাসস্থল ধ্বংস, শিকার কমে যাওয়া, অন্যান্য শিকারী প্রাণীর সাথে প্রতিযোগিতা, নির্মূল প্রক্রিয়া, গৃহপালিত কুকুর বাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ প্রভৃতি কারণে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে আসছে। সেজন্য আইইউসিএন রামকুত্তাকে(কুকুর) বিপন্ন বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
(তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া)

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত