সঙ্কটে বাংলাদেশের শিয়াল

প্রকাশ : ২১ মে ২০১৯, ২০:০৭

বাংলাদেশে সবচেয়ে পরিচিত বুনো প্রাণী। দেশের প্রায় সব জেলাতেই শিয়ালের উপস্থিতি আছে। শিয়ালের নাম বা গল্প শোনেনি এমন মানুষ পাওয়া যাবেনা।এ ক সময় সমগ্র বাংলাদেশে এই শিয়ালের বিস্তৃতি ছিল। প্রধানত দুই ধরনের শিয়াল পাওয়া যায় বাংলাদেশে। তাদের একটি পাতি শিয়াল অপরটি খেঁক শিয়াল। 

শিয়াল আকারে গৃহপালিত কুকুরের সমান। গায়ের রঙ্গ লালচে বাদামী থেকে বাদামী, সাথে কালচে ভাব আছে । লোমশ শরীর,  নাকের ডগা কালো, মুখ লম্বাটে সরু । শিয়াল মাথা থেকে লেজের গোঁড়া পর্যন্ত ৬৮ সেমি হয় । লেজ লোমশ সরল ২৩ সেমি, অগ্র ভাগে কালচে ভাব আছে। দাঁড়ানো অবস্থায় উচ্চতা ৩৮ থেকে ৪৩ সেমি। ওজন ৮ থেকে ১১ কেজি । 

শিয়াল দলে থাকে, সামাজিক নিশাচর প্রাণী। শিয়াল সব ধরনের বনে বাস করতে পারে।  বসবাসের জন্য বেশি জায়গার দরকার হয় না। ঝোপঝাড় যুক্ত বা বনের উচু স্থানে এক দলের শিয়ালেরা পাশাপাশি গর্ত বানিয়ে থাকে । এক গর্তে একা বা পরিবার নিয়ে বাস করে। গর্ভকালীন সময় ৫৮ থেকে ৬৫ দিন । মাটির গর্তে বাচ্চাপ্রসব করে। বাচ্চার সংখ্যা ২ থেকে ৮ টি পর্যন্ত হতে পারে। বাচ্চা একটু বড় হলে দুধের পাশা পাশি মা তার বাচ্চার জন্য মুখে করে শিকার নিয়ে আসে আবার আধা হজম খাবার বাচ্চা কে খেতে দেয়।

এক সময় বাংলার গ্রাম অঞ্চলে মানুষের মাঝ রাতে ঘুম ভাঙতো শিয়ালের ডাকে। সন্ধা থেকে সকাল পর্যন্ত  শোনা যেত শিয়ালের ডাক। গ্রাম অঞ্চলে সকালে ও সন্ধ্যায় সড়কগুলোতে দেখা যেত হরহামেশা। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে পরিবেশও পরিবর্তন হয়ে গেছে নষ্ট হয়েছে এদের আবাস। ঝোপ-জঙ্গল নিধনের ফলে শিয়ালের সংখ্যা এখন খুবই কম। 
 
দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝোপের ভেতর মাটির গর্তে লুকিয়ে পড়ে। সাধারনত ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে চলে, তবে একাকীও ঘুড়তে দেখা যায়। এরা সর্বভূক। প্রধান খাবার পোকামাকড়, ইদুর, পাখি, ছোট আকারের মেরুদন্ডী প্রাণী, টিকটিকি, মৃতদেহ, শাকসবজি, আখের রস, ভূট্টা ইত্যাদি।

খাবারের অভাব দেখা দিলে শিয়াল লোকালয়ে হানা দেয় হাঁস-মুরগী ধরতে। বর্ষার সময় শিয়ালের আনাগোনা বেড়ে যায় এবং তখনই মারা পড়ে বেশি। কারণ খাবারের জন্য তখন লোকালয়েই আসতেই হয় এদের। আর তখনই মানুষের হাতে নিরীহ এই প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। 

আমাদের দেশের এই অমূল্য প্রাণী সম্পদ রক্ষায় আমাদের এখনই সচেতন হওয়া উচিত । নইলে বাংলাদেশ থেকে একদিন চির তরে হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশ বনপ্রাণী আইনের উদ্ধৃত- এর দ্বিতীয় পরিশিষ্ট এবং বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭৪- এর তৃতীয় তফসিলে অন্তর্ভুক্ত সুতরাং  শিয়াল ধরা বা মারা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বাংলাদেশের সরকারি খাস জমি, বন বিভাগ বা জেলা প্রশাসক ইচ্ছা করলেই সংরক্ষণের আওতায় এনে এই প্রাণী গুলো কে রক্ষা করতে পারেন। সেই সাথে জনসাধারণের সচেতনতা কাম্য।
(তথ্যসূত্র- উইকিপিডিয়া)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত