পর্যটকের হাতে লাঞ্চিত সুন্দরবন

প্রকাশ : ২০ মে ২০১৯, ০১:৪২

সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি।

স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।

বছরে লাখো পর্যটক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন দেখতে আসেন। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এ সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। এতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। কোনো কোনো দিন ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ অবস্থান করেন। বর্তমানে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সুন্দরবনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে যাচ্ছেন।

সুন্দরবনে একটি জটিল ও সংবেদনশীল ইকো সিস্টেম বিদ্যমান। পরিবেশের কোনো উপাদানের সামান্যতম তারতম্য হলে ওই ইকো সিস্টেমে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বর্তমানে সুন্দরবনে যে পর্যটনব্যবস্থা চলছে, তা কোনো অবস্থাতেই পরিবেশসম্মত নয়।

পর্যটকরা যেখানে-সেখানে খাবারের প্যাকেট, পলিথিন, পানির বোতলসহ নানা বর্জ্য ফেলছেন; যা বনের প্রাণী ও মাইক্রো অর্গানিজমের ক্ষতি করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেসব স্পটে অধিকসংখ্যক পর্যটক যাচ্ছেন, সেখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ তথা পুরো সুন্দর বন ক্ষতির সম্মুখীন হবে। যে ট্রলার বা জাহাজে করে সুন্দরবনে মানুষ ভ্রমণ করে, সেগুলোর শব্দে বন্য প্রাণী প্রজননে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। এতে সুন্দরবনে বন্য প্রাণী কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া ওই শব্দের কারণে যেসব প্রাণী (বাদুড়, ডলফিন) শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে চলাফেরা করে, তাদের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। এতে তারা ওই এলাকা থেকে চলে যেতে পারে।

জাতীয় অর্থনীতিতেও সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তেমনি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে এর । এটি দেশের বনজ সম্পদের একক বৃহত্তম উৎস। এই বন কাঠের উপর নির্ভরশীল শিল্পে কাঁচামাল জোগান দেয়। এছাড়াও কাঠ, জ্বালানী ও মন্ডের মত প্রথাগত বনজ সম্পদের পাশাপাশি এ বন থেকে নিয়মিত ব্যাপকভাবে আহরণ করা হয় ঘর ছাওয়ার পাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ, কাঁকড়া এবং শামুক-ঝিনুক। বৃক্ষপূর্ণ সুন্দরবনের এই ভূমি একই সাথে প্রয়োজনীয় আবাসস্থল, পুষ্টি উৎপাদক, পানি বিশুদ্ধকারক, পলি সঞ্চয়কারী, ঝড় প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারী, শক্তি সম্পদের আধার এবং পর্যটন কেন্দ্র।

আমরা এখনো অশিক্ষিত পর্যটক, আমার এখনো জানিনা কোন এলাকাতে কি ভাবে ভ্রমন করতে হয়। বনের সৌন্দর্য বিকট শব্দে গান বাজিয়ে হই হুল্লোর করে উপভোগ করা যায় না। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, সুন্দরবন শুধুই আমাদের জৈব ভোগ্যপণ্য সরবরাহের আধার নয়, ওটা আমাদের দেশের আবহাওয়া-জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের একটা বড় নিয়ামক, তাছাড়া ওটা একই সাথে মায়ের পরম মমতায় আমাদের ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে এবং লক্ষ-কোটি টন পরিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাদের মানুষসহ প্রাণী-জীবনের প্রতিটি শাখাকে সচল রাখে। তাই আমাদের প্রয়োজনেই আমাদের সুন্দরবনকে বিপন্নতার হাত থেকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে।

(তথ্যসূত্র-উইকিপিডিয়া)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত