উন্নত রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের বন্যার দায় এড়াতে পারে না

প্রকাশ : ১৭ মে ২০১৯, ০১:৪৭

সাধারণত আমরা ভেবে থাকি, বন্যা তো প্রাকৃতিকভাবেই আসে। এর জন্য আবার কে দায়ী হবে? কিন্তু সাম্প্রতিক কালের বন্যার পেছনে মানুষের দায় আছে। মানুষের কার্যকলাপের কারণে সংঘটিত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অস্বাভাবিক মাত্রার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত রাষ্ট্রগুলো দায় এড়াতে পারে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যেসব প্রভাব পড়ছে , এর সবগুলো ঘটতে শুরু করেছে বাংলাদেশেও। আশংকার কথা হলো, দিন দিন বাড়ছে এগুলো।

বছরের প্রায় দশ মাস গরম থাকে, শুধু গরম বললে ভুল হবে। তীব্র গরম। বছরে কোনো রকমে দুই মাস তাপমাত্রা একটু কম থাকে, যার মধ্যে এক মাসকে আমরা এখন শীতকাল বলে ধরে নিই। সেটি সাধারণত নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এমনও হয় এক মাস পর শীত আসবে, অথচ তখনও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে।

জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে মানুষ প্রায় প্রতিবছর বানভাসি হচ্ছে। সায়েন্টিফিক আমেরিকান সাময়িকীতে রবার্ট গ্লেনন(Robert Glennon)বাংলাদেশ ঘুরে গিয়ে লিখেছেন যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা তিন ফুট বাড়লে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ ভূমি ডুবে যাবে এবং তিন কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।

এছাড়া হিমালয়ের হিমবাহ ও স্নোপ্যাক(আর্কটিক সার্কেলের বরফ) গলে গিয়ে নদীগুলোকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলছে, যা বাংলাদেশ হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে। প্রতিবেশি দেশের পানি নীতি বন্যার তীব্রতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। বাঁধ দিয়ে শুকনো মৌসুমে ব্যাপক আকারে নদীর গতিপথ বদলে সেচ কাজে পানি ব্যবহার করছে তারা। কিন্তু বন্যা শুরু হলে বাঁধ ছেড়ে দিয়ে বন্যার তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, তাদের দেশের জনগণ বন্যাকবলিত হচ্ছে।

বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ যতটা না প্রাকৃতিক কারণে ঘটছে, তার চেয়ে বেশি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। বাংলাদেশের জনগণ এসব দুর্যোগের মধ্যে দিনরাত পার করছে। কিন্তু এর জন্য তারা আসলে কতটা দায়ী? 

গেল ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নানা কুফলে মারা যায় ৫ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার  ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর এর সরাসরি ফলাফল হিসাবে আবহাওয়া বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজারটি।

বছরে পরপর ৩-৫ বার বন্যায় দেশের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। বিশেষ করে উত্তর ও মধ্যাঞ্চল দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ার সময় দেশের প্রায় ৮০ লাখ মানুষের বড় ক্ষতি হয়ে যায়। ব্যাপক ক্ষতি হয় ফসলের, যার খেসারত দিতে হয় বা হবে বাংলাদেশের সকল মানুষকেই। ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত বজ্রপাতে কমপক্ষে ১৮৭ জন মারা গেছে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন শিশু ও নারীরা। জলবায়ুর প্রভাবে যে রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে তার প্রায় ৮৫ শতাংশই আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। আশ্রয় হারানো শিশুরা বস্তির বাসিন্দা হচ্ছে। সেখানে শিশুরা সহিংসতা, শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাই জলবায়ুর প্রভাব থেকে আগে শিশুদের সুরক্ষা করা দরকার। 

জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যতটুকু কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন দরকার, তার মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ নির্গমন করে বাংলাদেশ। বেশির ভাগ নির্গমনের জন্য দায়ী উন্নত রাষ্ট্রগুলো, যারা জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে তথাকথিত উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তাই ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ আদায়ে বাংলাদেশকে মনোযোগী হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত