নদী ও মানুষ

প্রকাশ | ১৫ মে ২০১৯, ২৩:৩৮

দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ একটি নদী মাতৃক দেশ। শাখা-প্রশাখাসহ প্রায় ৮০০ নদ-নদী বিপুল জলরাশি নিয়ে ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকাই শত শত নদীর মাধ্যমে বয়ে আসা পলি মাটি জমে তৈরি হয়েছে। দেশের অধিবাসীদের জীবনযাত্রায় এসব নদ-নদীর প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। বাংলাদেশে জীবন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব নদ-নদীর ভূমিকা অপরিসীম।
 
নদীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক চিরকালের। জীবন-জীবিকা ও সভ্যতার অগ্রগতিও ঘটেছে নদীর তীরে। বাংলাদেশেরও প্রায় শহর, নগর, বাণিজ্য কেন্দ্র বিভিন্ন নদীর তীরে গড়ে ওঠে। নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী। খুলনা, ভৈরব ও ময়মনসিংহ পুরনো ব্রহ্মপুত্র বাংলাদের রাজধানী ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের সঙ্গেও নদীর সম্পর্ক নাড়ির।   বাংলাদেশের যেসব এলাকায় সড়ক ও রেলপথ নেই, সেসব অঞ্চলে নদীপথই যোগাযোগ ও পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু মানুষ  নদীগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে দেশের ২৩০টি নদ-নদীর বেশির ভাগই আজ মৃত-অর্ধমৃত। গত অর্ধশতাব্দী আগেও দেশে বর্তমানের দ্বিগুণ নদী ছিল। এ তথ্যই প্রমাণ করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নদী বাঁচানো কতটা অপরিহার্য।
 
বাংলাদেশের নদীমালা আমাদের গর্ব। বাংলাদেশের নদ-নদী সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বৃহৎ নদীব্যবস্থা। বাংলাদেশের নদ-নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪,১৪০ কিলোমিটার। তবে নদীর নামকরণের ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয় না। প্রায় একই নদ-নদী, উপ-নদীর শাখা-প্রশাখা এলাকা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। 
 
জমি ও চর দখলের পাশাপাশি নদী দখলও চলছে বাংলাদেশে। ঢাকা মহানগরী গড়ে উঠেছিল বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে। ১৬০৮ সালেও এ নদীর ৬টি শাখা নদী ছিল। কিন্তু আজ তার সবই চলে গেছে দখলদারদের গর্ভে। তথ্য মতে, ২৪৪ জন ভূমিদস্যু বুড়িগঙ্গার ৫০ একর দখল করে নিয়েছে। তথ্যানুসারে ২ লাখ ভূমিদস্যু দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর বিরাট অংশ দখল করে আছে। দেশ নদীশূন্য মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমান সরকার নদী উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে সফলতাও অর্জন হয়েছে।
 
নদী শুধু দখলই নয়, দূষণের শিকারও। দেশের বেশির ভাগ নদীদূষণের কবলে পড়েছে। কৃষি জমিতে প্রচুর রাসায়নিক সার প্রয়োগ হচ্ছে, যা বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে মিশে নদীতে গিয়ে পড়ছে। পরিবেশ অধিদফতর ১৭টি নদীর ৩৮টি স্থানের পানি পরীক্ষা করে দেখেছে, এসব নদীর পানি দূষিত ও ব্যবহারের অযোগ্য। নদী দূষণের কারণে পানিতে অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, কার্বন, নিকেল, সিলিকনসহ ১৬-২০টি উপাদান হ্রাস পাচ্ছে, যা নদীতে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব উপাদানের অভাবে নদীর বহু প্রজাতির মাছ ও জলজ উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
 
নদীতে পানির প্রবাহ ঠিক রাখা এবং দখল রোধের দায়িত্ব দেওয়া আছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। আবার নদীর দূষণ ঠেকানোর দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। এভাবে নদী রক্ষার সঙ্গে জড়িত আছে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। নদীর অবৈধ দখল ও পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে আছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইনও। তবুও রক্ষা পাচ্ছে না নদী।