ধংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য , সংকটে আমরা

প্রকাশ : ১০ মে ২০১৯, ১৩:৫৪

সাহস ডেস্ক

যত্রতত্র বন উজাড়, ভূমিক্ষয়, বেড়ে চলা সমুদ্র-বর্জ্য, সঙ্গে আরও আছে বায়ু দূষণ। সবকিছু মিলিয়ে আমরা সবুজ এই পৃথিবীকে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছি। এসব ব্যাপারে এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে আমাদের পরিণতি হবে আরও ভয়াবহ।

বিশ্বের ৫০টি দেশের পাঁচ শ’র বেশি গবেষক এমনটাই জানিয়েছেন। জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে, ইন্টারগর্ভমেন্টাল সায়েন্স-পলিসি প্ল্যাটফর্ম অন বায়োডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইকোসিস্টেম সার্ভিস (আইবিইএস)।

আইবিইএস’র ঐ প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ৫০ বছরে আমরা প্রকৃতির কতটুকু ক্ষতি করেছি। এছাড়া, পৃথিবীতে বেঁচে থাকা লাখ লাখ প্রজাতির প্রাণিরই বা ভবিষ্যতই কি!

বিবিসি সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করেছে যে, বর্তমান অবস্থা   বিশেষ কারণে পৃথিবীর বদলে যাওয়া জীববৈচিত্র্য ও ইকোসিস্টেম 

১. হুমকির মুখে লাখো প্রজাতির প্রাণ

বিজ্ঞানীদের ধারণা পৃথিবীতে প্রজাতির মোট সংখ্যা ২ মিলিয়ন থেকে শুরু করে ১ ট্রিলিয়নও হতে পারে। তবে বেশিরভাগ গবেষক এই সংখ্যাটা আনুমানিক ১১ মিলিয়ন বলে যুক্তি দেখিয়েছেন।

প্রায় ১ লাখ প্রজাতির ওপর গবেষণায় জানা গেছে এরমধ্যে এক-চতুর্থাংশের বিলুপ্তি ঘটতে পারে। অস্তিত্বের ঝুঁকিতে থাকা এসব প্রাণীর মধ্যে রয়েছে মাদাগাস্কারের লেমুর থেকে শুরু করে আছে এমনকি অর্কিডও।
 
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) জানায়, এসব প্রাণী বা উদ্ভিদের বিলুপ্তি ঘটলে প্রকৃতি জটিল ঝুঁকিতে পড়বে। গবেষকরা আশঙ্কা জানিয়েছেন, পৃথিবীর বিগত পাঁচ শ মিলিয়ন বছরে আমরা ৬ষ্ঠ বারের মতো ‘প্রজাতির গণবিলুপ্তির’ আশঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাজ্যের রয়েল বোটানিক গার্ডেন-এর প্রফেসর আলেক্সান্দ্রে অ্যান্তোনিলি বলেন, আমরা যে দ্রুত প্রজাতি হারাচ্ছি সে বিষয়ে এখন আমাদের কাছে বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ রয়েছে।

বর্তমানে বিলুপ্তির হার আগের চেয়ে এক হাজার গুন বেশি এবং ভবিষ্যতে আরও দশ হাজার গুন বেশি আশঙ্কাজনক হারে বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে আফ্রিকা মহাদেশের মতো জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ অঞ্চল হতে পারে বেশি ভুক্তভোগী। আফ্রিকার অর্ধেকেরও বেশি পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণি প্রজাতি আগামী ২১০০ সালের মধ্যে বিলুপ্ত হতে পারে।

আইবিইএস আরও জানায়, ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়ায় গত এক দশকে শতকরা ৪২ ভাগ স্থলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের বিলুপ্তি ঘটেছে।

2. বন্যপ্রাণীর জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা, বাসস্থান হারানো, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ

গবেষণায় জানা যায়, জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি জলবায়ু পরিবর্তন। এছাড়া, অপরিকল্পিত খাদ্য উৎপাদন, কৃষি জমি, খামার বৃদ্ধি পাওয়া, জ্বালানির ও কীটনাশকের ব্যবহার, বন্য প্রাণী শিকার ও অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে অনেক অনেক প্রাণী হুমকিতে রয়েছে।

৩. প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস ও বন উজাড়

সিংহভাগ প্রাণিবৈচিত্র্যের নিজেদের আবাস-ভূমি রয়েছে। বিভিন্ন কারণে ভূমিক্ষয় ও বন উজাড়ের কারণে প্রাণী তাদের বাসস্থান হারাচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও খনি খনন অনেক প্রাণীর বিলুপ্তির কারণ। ২০১৮ সালে উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকার ১২ মিলিয়ন হেক্টর বন উজাড় হয়েছে। যা প্রতি মিনিটে ৩০টি ফুটবল মাঠের আয়তনের সমান।

৪. বনাঞ্চলে মানুষের গৃহনির্মাণ ও অনুপ্রবেশ

মানুষের নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড থেকে পৃথিবীর মাত্র চার ভাগের এক ভাগ অঞ্চল রক্ষা পাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানায় আইবিইএস। ২০৫০ সালের মধ্যে তা দশভাগের একভাগে নেমে আসতে পারে।

উদাহরণস্বরুপ, ইন্দোনেশিয়ায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে রেইন ফরেস্টের আয়তন। পাম ওয়েলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ক্ষতি করা হচ্ছে ওরাং-ওটাং-এর মতো বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির আবাসস্থল। এভাবে চলতে থাকলে বোর্নে ও সুমাত্রার মতো নিম্নাঞ্চলে তিন ভাগের এক ভাগ পাখি ও এক-চতুর্থাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণি হারিয়ে যাবে।

৫. ক্ষতি হচ্ছে অ্যামাজনের, অনাবিষ্কৃত অনেক প্রাণ

পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ বনাঞ্চল অ্যামাজনের কিছু কিছু অংশে এখনো নতুন প্রাণের সন্ধান পাওয়ান সম্ভাবনা রয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। আরও আশঙ্কা করা হচ্ছে, বসতি নির্মাণ, খনি খনন, গাছ কেটে ফেলায় এই অপার বিস্ময়ের বনাঞ্চলও রয়েছে হুমকিতে।

সাহস২৪.কম/বাশার

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত