অতি বিপন্ন একটি পাখির নাম ‘শকুন’

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ২০:৫৭

শকুন প্রকৃতির ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ পাখি' হিসেবে পরিচিত, নদীতে ভেসে যাওয়া অথবা ময়লার স্তূপে পড়ে থাকা মরা-পঁচা প্রাণী  খেয়ে সহজে হজম করতে পারে এরা।  কিন্তু মানুষের অযত্ন, অবহেলা, অসচেতনতায় উপকারী এ পাখিটি এখন মহাবিপন্নের তালিকায় ।শকুন তীক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী শিকারি পাখি বিশেষ।

সারা বিশ্বে প্রায় ১৮ প্রজাতির শকুন দেখা যায়, এর মধ্যে পশ্চিম গোলার্ধে ৭ প্রজাতির এবং পূর্ব গোলার্ধে ঈগলের সাথে সম্পর্কিত ১১ প্রজাতির শকুন দেখা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশে প্রায় ৬ প্রজাতির শকুন রয়েছে, এর মধ্যে ৪ প্রজাতি স্থায়ী আর ২ প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন বা বাংলা শকুন ছাড়াও এতে আছে রাজ শকুন, গ্রীফন শকুন বা ইউরেশীয় শকুন, হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন। এসব প্রজাতির শকুনই সারা বিশ্বে বিপদাপন্ন। স্থায়ী প্রজাতির মধ্যে রাজ শকুন মহাবিপন্ন।

শকুনের কারণে নিজের অজান্তেই মানুষ রক্ষা পেয়ে যায় নানাবিধ রোগ-ব্যাধি থেকে। শকুন কমে যাওয়ার কারণে গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স, জলাতঙ্ক, যক্ষ্মা, খুরা রোগসহ বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক সংক্রামক রোগে আক্রান্তের হার বাড়ছে ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ তিন-সাড়ে তিনদশক আগে গরুর জন্য একটি ব্যাথানাশক (ডাইক্লোফেনাক) ঔষধ প্রচলিত হয়েছিল। এই ঔষধ শকুনের জন্য ভয়ঙ্কর তা কেউ জানতো না। এই ডাইক্লোফেনাক জাতীয় প্রদাহরোধক ঔষধ সেবনকারী গবাদিপশুর বর্জ্য বিষাক্ত হয়ে যায়, যা খেয়ে শকুনের লিভার ও পাকস্থলী নষ্ট হয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে শকুনের মৃত্যু ঘটে। এ কারণে গত তিন দশকে  উপমহাদেশে ৭৫% শকুন মারা গেছে ।

দেশ থেকে দিন দিন অস্বাভাবিকহারে শকুনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে এরা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এখন শুধুমাত্র মৌলভিবাজার এবং সুন্দরবন এলাকায় কিছুটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় শকুনের দেখা মেলে। এসব এলাকাকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকাও ঘোষণা করেছে সরকার।

মানবসৃষ্ট এই কারণে শকুন কে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে পৃথিবীর অনেক দেশেই পশু-চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনের পরিবর্তে সমান কার্যকর, অথচ শকুন-বান্ধব ‘মেলোক্সিক্যাম’ নামক ঔষধ ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের এই উপমহাদেশে এখনো কেন এটা বাস্তবায়ন করছে না তা খতিয়ে দেখা দরকার। 

প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সর্বস্তরের জনগণের সচেতনতা। প্রত্যেকে যদি তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হয় এবং পরিবেশ রক্ষার অংশ নেয় তবেই প্রাকৃতিক পরিবেশে শকুন রক্ষা পাবে তথা রক্ষা পাবে পুরো মানব জাতী

সাহস২৪.কম/ আবুল বাশার শিবলী

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত