পিরোজপুরের কৃতি সন্তান খালিদ হাসান মিলুর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২১, ১৪:৫১

মোঃ জিয়াউল ইসলাম (রিমন)

দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী, পিরোজপুরের কৃতি সন্তান খালিদ হাসান মিলুর আজ ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। আজ ২৯ মার্চ এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পিরোজপুর সদর উপজেলায় বলেশ্বর নদী তীরবর্তী আদর্শ পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন খালিদ হাসান মিলু। এই শহরেই বেড়ে ওঠেছেন তিনি। গানের প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে প্রথমে খুলনা বেতারের নিয়মিত শিল্পী হয়েছিলেন, গড়ে তুলেছিলেন একটি নিজস্ব ব্যান্ড দল।

রাজধানী ঢাকায় গিয়ে পিরোজপুরের "আদর্শ পাড়ার" সেই সুদর্শন ৬ ফিটেরও বেশি উচ্চতার দারুন স্মার্ট খালিদ হাসান মিলু নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে গানের জগতের সংগ্রামে টিকে থেকে একক ১২টি এ্যালবাম, অসংখ্য মিক্সড এ্যালবাম, ২৫০টির বেশি বাংলা সিনেমার প্লে ব্যাকসহ (নেপথ্য কন্ঠ) পাঁচ হাজারের মতো গান গেয়েছিলেন। তার প্রতিটি গানই পেয়েছিল জনপ্রিয়তা। ১৯৯৪ সালে তিনি পেয়েছিলেন সংগীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

গ্রামে গঞ্জের হাট বাজার থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত- সমাজের সকল শ্রেণীর শ্রোতারাই, খালিদ হাসান মিলুর গান পছন্দ করতেন। দেশের বাহিরেও অনেক শো করেছেন এই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী।

২০০৫ সালের ২৯ মার্চ রাত বারোটার কিছু পরে এই গুণী শিল্পী ঢাকার মনোয়ারা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার আগে ২০০১ সালে ব্রেইন হেমারেজ এবং লিভারের অসুখের জন্য ব্যাংককে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পীর দুই পত্র সন্তান। প্রতীক হাসান ও প্রীতম হাসান। বাবা মিলু যখন টঙ্গী'র শফিউদ্দিন রোডের বাড়িতে রোগসয্যায় প্রায়ই ডুকরে কেঁদে উঠতেন। তখন বাবার গাওয়া গান শুনাতেন দুই শিশু সন্তান।

অসুস্থ স্বামী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে দারুন টানাপোড়েন সংগ্রাম করেছিলেন মিলুর স্ত্রী ফাতেমা হাসান পলাশ। জীবনের এক চরম দুঃসময় পার করলেও ভেঙে পড়েন নি।

আমরা এই প্রজন্মে দুজন চমৎকার বাংলা সংগীত শিল্পী পেয়েছি, একজন প্রতীক হাসান, যে তার কণ্ঠে বাবা খালিদ হাসান মিলুর গান টিভি, রেডিওসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে (এবং প্রবাসেও) পরিবেশন করেন এবং আশ্চর্য জনক সত্য হলো, আশি-নব্বই দশকে গাওয়া খালিদ হাসান মিলুর গান, শ্রোতারা এখনো প্রাণ ভরে শুনেন।

খালিদ হাসান মিলুর কনিষ্ঠ সন্তান প্রীতম হাসান বাংলাদেশের সংগীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। প্রীতম একজন বাংলাদেশী সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পী। বেশ কয়েকটি একক সঙ্গিতায়োজন সহ দেবী চলচ্চিত্রের জন্য গান সুর করেন তিনি। সাথে আছে তার অভিনয় ও মডেলিংসহ আরো অনেক কিছুই।

কুদ্দুস বয়াতীর সাথে- আসো মামা হে, মমতাজের লোকাল বাস, গার্ল ফ্রেন্ডের বিয়া, ভেঙে পোড়না এভাবে, দোয়েল পাখী কন্যারেসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গান তৈরি করেছে প্রীতম, যার পরিবেশনে রয়েছে যথেষ্ট আধুনিকতার ছোঁয়া।

সেই হিসাবে বাবা খালিদ হাসান মিলুসহ তার দুই সন্তান জাতীয় পর্যায়ে চল্লিশ বছর যাবৎ বাংলা গানের জগতে জনপ্রিয়তার সাথে অবস্থান করছেন।

জাতীয় পর্যায়ের এই গুণী শিল্পীকে ভালোবেসে, বাংলা গানের প্রতি তার অবদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে, পিরোজপুর জেলা শহরে স্থায়ী ভাবে এমন কিছু করা উচিত যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই শহরের কাদা ধুলো আলো বাতাসে বড় হওয়া গুণী এই শিল্পীকে আজীবন মনে রাখেন?

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত