সত্যিকারের ‘আয়রনম্যান’ ইলন মাস্ক

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০১৯, ১৩:৫৬

সাহস ডেস্ক

রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। টেসলা, পেপ্যালসহ আরও বেশ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। নিউইয়র্ক টাইমস ইলন মাস্ককে “ধাতব স্যুটবিহীন আয়রনম্যান” বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।

১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম ইলন রিভ মাস্ক। তাঁর মা কানাডিয়ান এবং বাবা দক্ষিণ আফ্রিকান। জন্মের পর ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি আফ্রিকায় ছিলেন। এরপর কানাডায় চলে আসেন।

ইলন মাস্কের ছেলেবেলা বেশ বৈচিত্র্যময়। মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজে নিজেই প্রোগ্রামিং শিখে একটি ভিডিও গেমসও বানিয়ে ফেলেছিলেন। এবং সেই গেম একটি ম্যাগাজিনের কাছে ৫০০ ডলারে বিক্রিও করেন দেন তিনি।

১৯৯৯ সালে কয়েকজন সহনির্মাতার সঙ্গে এক্স ডট কম নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবাদাতা সাইট চালু করেন ইলন মাস্ক। যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী পে-প্যাল (PayPal) হিসেবে পরিচিতি পায়। শুরুতে এই সেবাটি খুব একটা জনপ্রিয়তা না পেলেও বর্তমানে এটি ইন্টারনেট ভিত্তিক টাকা লেনদেনের সবচেয়ে বড় ও নিরাপদ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।

২০০২ সালে মাস্ক তাঁর যুগান্তকারী মহাকাশযান তৈরি ও উড্ডয়ন প্রতিষ্ঠান “স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন” বা স্পেসএক্স (SpaceX) এর যাত্রা শুরু করেন।

স্পেসএক্স থেকে এমন রকেট তৈরি করা হয় যেগুলো প্রচলিত রকেটের চাইতে অনেকগুণ বেশী সস্তা কিন্তু কার্যকারিতার দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে।

এটিই একমাত্র প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে প্রথম কোন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হয়।

সম্প্রতি ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট তথা কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু ১’ ফ্লোরিডা থেকে স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-৯ রকেটে করে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এই উড্ডয়নেও সর্বক্ষণ তদারকি করেছেন ইলন মাস্ক।

২০০৩ সালের জুলাইয়ে যাত্রা শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণকারী কোম্পানি টেসলা মোটরস। ২০০৪ সালে তিনি এর চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন।  প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ২০০৮ সালে টেসলা স্পোর্টস কার এর একটি নিজস্ব এডিশন ‘রোডস্টার’ বাজারজাত করে। এই কোম্পানি থেকে ইলেকট্রিক সিডান “Model-S”, “মডেল ৩ সিডান” বাজারে আনা হয়। চলতি বছরেই টেসলা সেমি নামে একটি ট্রাক প্রস্তুতের কাজ সম্পন্ন হবার কথা রয়েছে যা একবার ব্যাটারি ফুল চার্জ দিলেই প্রায় ৫০০ মাইল পথ পাড়ি দিতে পারবে।

বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী গাড়ির মর্যাদা পাওয়া রোডস্টার এর নতুন এডিশন ২০২০ সালে বাস্তবতার মুখ দেখবে বলে ইলন মাস্ক জানিয়েছেন।

২০১৩ এর অগাস্টে ইলন মাস্ক যাতায়াতের আরেকটি নতুন পদ্ধতির কথা ঘোষণা দেন যার নাম তিনি দেন “হাইপার লুপ”। এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে অল্প সময়ে বড় বড় শহরগুলোতে যাতায়াত করা সম্ভব হবে। ঘণ্টায় ৬০০ মাইলের বেশি গতিতে চলতে পারবে এটি।

স্বপ্নবাজ এই মানুষটি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং ব্যবসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কার এবং স্বীকৃতি লাভ করেন। এছাড়াও ২০১৩ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বর্ষসেরা বিজনেস ব্যক্তিত্বে ভূষিত হন।

বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় ২০১৯ সালে পৃথিবীর শীর্ষ ১০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় ৪০ তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে জায়গা করে নেন।

বর্তমানে অনেকগুলো পরিচয়ে পরিচিত ইলন মাস্ক। তিনি একাধারে একজন উদ্যোক্তা, প্রকৌশলী, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক এবং ব্যবসায়ী। তার প্রথম লক্ষ্য হলো মঙ্গল গ্রহে মানব বসতি গড়ে তোলা। ইলন মাস্কের এই স্বপ্নটি সারা বিশ্বে পরিচিত ‘মেকিং লাইফ মাল্টিপ্ল্যানেটারি’ নামে।

সাহস২৪.কম/ইতু

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত