পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন: মাতিয়েছেন, মাতাচ্ছেন

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০১৯, ১৩:০২

সাহস ডেস্ক

পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন নামেই তার পরিচিতি বিশ্বজুড়ে। কিন্তু ব্যক্তি মাইকেল জ্যাকসনকে অনেকেই চিনতেন না। সেটা সম্ভবও ছিল না। মাইকেল মারা যাওয়ার পর তাকে নিয়ে নানা নতুন নতুন তথ্য ফাঁস করে তার স্বজন, তার বন্ধু-বান্ধব এমনকি তার বাড়ির গৃহপরিচালিকা। সেই তথ্যগুলোর কোনটি বিস্মিত করেছে, কোনটি বিষাদে মন পুড়িয়েছে ভক্তদের।

মাইকেল ব্যক্তি জীবনে খুবই নিঃসঙ্গ ছিলেন। খুব বেশি মানুষের সঙ্গে মিশতেন না। কেউই পূর্বানুমতি ছাড়া তার বাড়িতে ঢুকতে পারত না। খুবই এলোমেলো জীবনযাপনে অভ্যস্থ ছিলেন তিনি। ঠিকমতো খেতেন না। ঘুম তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সারা রাত মাদকে আসক্ত থাকতেন। কড়া ঘুমের ওষুধেও তার ঘুম আসত না। যে কারণে ঘুমের ওষুধে আসক্ত হতে শুরু করেন। এই অসহনীয় জীবন আরও কষ্টকর ছিল শিশুদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে আদালতে প্রমাণ মেলার পর। রাতে না ঘুমিয়ে ঘর ছেড়ে বাড়ির বারান্দায় শুয়ে কাঁদতেন।

আফ্রিকান-আমেরিকান জো জ্যাকসন ও ক্যাথেরিন জ্যাকসন দম্পতির সপ্তম সন্তান মাইকেল ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা রাজ্যের গ্যারি নামে এক গ্রামে জম্নগ্রহণ করেন। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে মাইকেল জ্যাকসনকে কপিকল অপারেটর হিসেবে কারখানায় কাজ করতে হয়েছে। মাইকেল জ্যাকসন মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার ভাইদের সঙ্গে ‘জ্যাকসন-৫’ মিউজিক্যাল গ্রুপে যোগ দেন। সেখান থেকে প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘ডায়ানা রোজ’ ১৯৬৯ সালে প্রকাশ হয়। এ অ্যালবামের প্রথম একক গান ‘আই ওয়ান্ট ইউ ব্যাক’ ১৯৭০ সালের জানুয়ারিতে বিলবোর্ডের হট তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে নেয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে এককভাবে মাইকেল জ্যাকসনের ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭২ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘বেন’ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে তার পরবর্তী অ্যালবাম বের হয়। এ অ্যালবামের নাম ছিল ‘অফ দ্য ওয়াল’। এর ‘ডোন্ট স্টপ টিল ইউ গেট অ্যানাফ’ ও ‘রকিং উইথ ইউ’ গান দুটির মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি।

মাইকেলের সবচেয়ে বিক্রীত অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে ‘অফ দ্য ওয়াল’, ‘থ্রিলার’, ‘ব্যাড’, ‘ডেঞ্জারাস’ এবং ‘হিস্ট্রি’। এর মধ্যে ‘থ্রিলার’  সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া অ্যালবাম। মাইকেল জ্যাকসনের গানের ভিডিওগুলো বিশ্ববাসীকে মন্ত্রমুগ্ধ করে। ‘বিট ইট’ গানটি প্রচার করে শিরোনামে আসে এমটিভির নাম। অনেকেই হয়তো জানেন না, মাইকেল জ্যাকসনের এই একটি গানকে পুঁজি করে এমটিভির উত্থান ঘটে। ১৯৯৪ সালের আগস্টে এলভিস প্রিসলির কন্যা লিসা মেরি প্রিসলিকে বিয়ে করেন মাইকেল জ্যাকসন। ১৯৯৬ সালেই তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর মাইকেল জ্যাকসন ডিবোরাহ নামে এক নার্সকে বিয়ে করেন। কৃত্রিম উপায়ে তাদের দুটি সন্তান হয়। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে ছেলে প্রিন্স মাইকেল জ্যাকসন এবং ১৯৯৮ সালে মেয়ে প্যারিস মাইকেল জ্যাকসনের জম্ন হয়। ১৯৯৯ সালে ডিবোরাহর সঙ্গেও মাইকেল জ্যাকসনের ডিভোর্স হয়ে যায়। প্যারিস, প্রিন্স ও জ্যাকসন জুনিয়র, মাইকেলের তিন সন্তান। মাত্র ৫০ বছর বয়সে ওষুধের বিষক্রিয়ায় তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। মৃত্যুর আগে দুই দশক ধরেই পপসংগীত, বিনোদন আর মাইকেল জ্যাকসন ছিলেন প্রায় সমার্থক।

ব্যাড অ্যালবামটি হিট হওয়া পর টাকা আর খ্যাতি এই দুইয়ের কোনো অভাব হয়নি মাইকেলের। সুন্দর এই পৃথিবীর মায়া তারও ছিল। তাই অমর হওয়ার রাস্তা খুঁজছিলেন তিনি। এ জন্য বিশ্বের সর্বোচ্চ চিকিৎসাবিজ্ঞানের নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। নিজের ক্লোন তৈরি করে অমর হতে চেয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। মৃত্যুর আগে এর জন্য তিনি লাখ লাখ ডলার ব্যয়ও করেছেন। তার জীবনী লেখক মাইকেল সি লাকম্যান এক সাক্ষাৎকারে সাড়া জাগানো এ তথ্য দেন। জ্যাকসন তার ক্লোন নিয়ে গবেষণার জন্য ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের লাখ লাখ ডলার দিয়েছিলেন। তার ইচ্ছা ছিল এ ক্লোন থেকে একটি ক্ষুদে জ্যাকসন দলের সৃষ্টি হবে এবং তারাও একদিন তার মতো দুনিয়া মাতাবে। পানামাভিত্তিক একটি আয়ুষ্কাল কেন্দ্রে মাইকেল জ্যাকসন একটি ‘গোপন শুক্রানু প্রকল্প’ গড়ে তুলেছিলেন বলে দাবি করা হয়। আর এই ইচ্ছার পেছনে কাজ করেছিল ক্লোনিংয়ে সাফল্য। বিজ্ঞানীরা ভেড়ার ক্লোন থেকে সফলভাবে ‘ডলি’র জম্ন দেওয়ার পর নিজের ক্লোনিং নিয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠেন জ্যাকসন। মাইকেল বিশ্বাস করতেন এক সময় তার ক্লোনিং সম্ভব হবে এবং এর পেছনে তিনি যে টাকা-পয়সা ব্যয় করছেন তাও সার্থক হবে। শুধু ক্লোনিং নয়। কমপক্ষে ১৫০ বছর বেঁচে থাকার জন্য তৈরি করেছিলেন অক্সিজেন চেম্বার। সেখানেই ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে চেয়েছেন। সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু পাওয়ার জন্য তিনি এ পন্থা বেছে নিয়েছিলেন। একবার তিনি দাবি করেছিলেন, অক্সিজেন চেম্বারে ঘুমানোর জন্য অন্তত ১৫০ বছর বাঁচবেন তিনি।

শিশু যৌন নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০০৫ সালে আদালতের কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হয়েছিল এই সংগীত শিল্পীকে। মাইকেলের এ যৌন নির্যাতনের বিষয়টি মূলত আরও খোলাসা হয় তার কন্যা প্যারিসের আÍহত্যার চেষ্টার পর। এফবিআই যে তালিকা দিয়েছে সেখানেও অভিযোগের সত্যতার দেখা মেলে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জ্যাকসন সম্পর্কে স্পর্শকাতর গোপন ফাইল প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত ছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। জীবদ্দশায় অন্তত ২৪ জন বালককে যৌন হয়রানি করেছেন তিনি। আর এতে তিনি ব্যয় করেছেন ৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি এ কর্মে লিপ্ত ছিলেন। এই ফাইলগুলোতে মাইকেল জ্যাকসনকে ‘পেডোফিল’ বা শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত বলে দাবি করা হয়েছে। মাইকেলের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অভিনেতা, ডান্সারসহ আরও অনেকেই। অনেকে আবার মান সম্মানের ভয়ে খবরটা চেপেছিলেন। মৃত্যুর পরও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি তাকে। তার মৃত্যুর পর জ্যাকসনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন তার সাবেক কোরিওগ্রাফার ওয়েড রবসন। রবসন ২০১৩ সালে মাইকেলের বিরুদ্ধে দীর্ঘ গত সাত বছর ধরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন। তবে অবশেষে আদালত মাইকেলকে নির্দোষ বলে রায় দেয়। ২০০৫ সালে গ্যাভিন আরভিজো নামে এক ১৩ বছরের কিশোর মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে শিশু হয়রানির অভিযোগ করে মামলা করে। সেটাতেও জ্যাকসন নির্দোষ প্রমাণিত হন। মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর আবারও তার বিরুদ্ধে শিশু হয়রানির অভিযোগ আনা হয়। জেমস সেফচাক নামে এক ব্যক্তির দাবি করেন, শৈশবে এই পপশিল্পীর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি।

জ্যাকসন সঙ্গী হিসেবে সুন্দরী আর ফর্সা মেয়েদেরই বেশি প্রাধান্য দিতেন। কৃষ্ণাঙ্গ বলে সমাজে নিচু চোখে দেখছে সবাই; এই মনোস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনে প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজেকে ফর্সা করে তোলেন। নিজের চেহারার কৃষ্ণাঙ্গ থেকে শ্বেতাঙ্গে রংবদল নিয়ে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয় তাকে। ১৯৭৯ সালে মাইকেল জ্যাকসন তার প্রথম কসমেটিক অপারেশনটি করান। এবং তার পরপরই একটি অ্যাক্সিডেন্টে তার নাক ভেঙে যায়। তিনি ত্বকের সমস্যায়ও ভুগছিলেন। প্রায়ই তাকে মুখোশ পরা অবস্থায় দেখা যেত, ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে। যদিও তিনি দাবি করেন, আসলে চর্মরোগের কারণে তিনি প্লাস্টিক সার্জারি করাতে বাধ্য হয়েছিলেন।

গানের মানুষ হলেও স্পাইডারম্যান চরিত্রে অভিনয় করতে আগ্রহ ছিল জ্যাকসনের। এমনকি ১৯৯০ সালে মারভেল কমিকসের এ চরিত্রটির স্বত্ব কিনে নিতে চেয়েছিলেন তিনি।

মাদাম তুসো জাদুঘরে মাইকেল জ্যাকসনের মোমের মূর্তি ও অন্যান্য জিনিসপত্রের প্রদর্শনী হয়। এর মাধ্যমে তার শৈশব থেকে শুরু করে জ্যাকসন ফাইভ ব্যান্ডের সাফল্য ও তার মৃত্যু সম্পর্কে ধারণা পান দর্শনার্থীরা। এখানেই শেষ নয়, বিশ্বের প্রতিটি মাদাম তুসো জাদুঘরে রয়েছে মাইকেল জ্যাকসনেরে মোমের মূর্তি। এদিক থেকে তিনি তৃতীয় তারকা। এ ছাড়া বিশ্বের সব জাদুঘরে রয়েছে এলভিস প্রিসলি ও ম্যাডোনার মূর্তি।

কিং অফ পপ নামে দুনিয়াজুড়ে পরিচিত লাভ করা মার্কিন সংগীত শিল্পী মাইকেল জ্যাকসনের আচমকা মৃত্যুর জন্য দীর্ঘ মেয়াদে পেইন কিলার সেবনকে দায়ী করা হয়। কিন্তু এ নিয়ে বিতর্ক বোধ হয় কোনো দিনই শেষ হবে না। শুরুতে জানানো হয়েছিল তার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটেছে। তখন হুট করেই বোম ফাটায় দ্য সান পত্রিকা। তাদের এক খবরে বলা হয়, ডেমারোল নামের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যথানাশক ইনজেকশন নেওয়ার কারণেই জ্যাকসনের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ডেমারোল নেওয়ার পর থেকেই জ্যাকসনের শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে এসে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া ও মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ার সময়টিতে মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে ছিলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক কনরাড মুরে।
রহস্য ঘনীভূত হয় যখন দেখা গেল, মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর সময়টিতে মুরে উপস্থিত থাকলেও ডেথ সার্টিফিকেটে তিনি স্বাক্ষর করেননি। তাকে ঘিরে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে সবাই জানতে চাইল, তিনি কি ডেমারোল ড্রাগসটি ব্যবহার করেছিলেন? ডেমারোল ড্রাগসটি কি দুইবার দেওয়া হয়েছিল? এর পরপরই লস অ্যাঞ্জেলেসের করোনার কার্যালয় মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলে ঘোষণা দিয়ে বসে। মাইকেলের অস্বাভাবিক মৃত্যু তদন্তে নিয়োজিত করোনার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মাইকেল মারা যাওয়ার সময় তার শরীরে ছয় ধরনের মাদকের ভয়াবহ মিশ্রণের জের ছিল। একে একে বেরিয়ে আসে প্রোপফল ছাড়াও জ্যাকসনের শরীরে ব্যথানাশক লোরাজিপাম, মিডাজোলাম, ডায়াজিপাম, লিডোকেইন এবং এফিড্রিন পাওয়া গেছে। মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর জন্য তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক কনরাড মুরকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। পপস্টারের মৃত্যুর জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও তার গাফিলতিই দায়ী বলে লস এঞ্জেলেসের আদালত রায় দেয়। যদিও মুরের আইনজীবীরা দাবি করেন, জ্যাকসন স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত মাত্রায় ওই ওষুধটি নিয়েছিলেন। তবে কি এটি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা হিসাব কষে দুইয়ে দুইয়ে চার আজও মিলেনি।

মাইকেলের আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে তার বাড়ি নেভারল্যান্ড র‌্যাঞ্চে। না কোনো কল্পনা নয়, এ দাবি বাড়ির গৃহপরিচারিকা থেকে শুরু করে বাড়িতে আনাগোনা আছে এমন সবারই।  মাইকেলের মৃত্যুর পর বাড়িটির নিলাম নিয়ে বেঁধে যায় এক অদ্ভুত ঘটনা। মাইকেল জ্যাকসনের সম্পত্তি কিনতে আগ্রহী ব্যক্তিরা কিনতে গিয়েও ফিরে আসতে থাকে। কারণ আর কিছুই নয় ভূতের ভয়। এক মার্কিন শিল্পপতি প্রায় কিনেই ফেলেছিলেন বাড়িটি। কিন্তু এলাকার স্থানীয় মানুষদের কথা শুনে পিছিয়ে আসেন সেই শিল্পপতি।

মাইকেল ভক্তদের বিশ্বাস এখনো বেঁচে আছেন তিনি। খ্যাতি আর সাফল্যের মায়াজালে তিনি নিঃসঙ্গ অনুভব করছেন বলেই এ জীবন থেকে পালিয়ে গেছেন। ছদ্মবেশে ঘুরছেন দেশ থেকে দেশে। এগুলো মোটেই বানানো কথা নয়। বিশ্বের অধিকাংশ মাইকেল ভক্তের মতে তিনি এখনো বেঁচে আছেন। শুধু লোকচোখের অন্তরালে যেতেই তার মৃত্যুর খবর ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকে তো দাবি করেই বসেছেন, তিনি মৃত্যুর পরও কোথায়, কবে উপস্থিত ছিলেন। এমন প্রমাণও কম নয় অন্তর্জালে। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় সুস্থ ও নির্ভেজাল একটা জীবনযাপন করছেন। এমন কিছু খবর মাইকেলের মৃত্যুর পর থেকেই নিয়মিত সময় ব্যবধানে বোমা ফাটিয়ে আসছে পশ্চিমা ইন্টারনেট সংস্কৃতিগুলো। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ কিংবা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা ঝাপসা ছবির নানা প্রমাণ তুলে ধরার চেষ্টাটা দেখা গেছে উলে­খযোগ্য পরিমাণে। মাইকেলের পুরো জীবনটাই যেমন গেছে হাজারও কানাঘুষা আর গুঞ্জনকে ঘিরে। মরার পরও সেই গুঞ্জনের হাত থেকে নিষ্কৃতি মেলেনি তার। তবে এসব গুঞ্জনের মিলিত রূপ এবার দেখা দিল আরও বড় আকারে। মাইকেলের মৃত্যুর পর মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালবামের বিক্রয়ের শীর্ষ থাকা আর বছরজুড়ে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের লাভের অঙ্কে চোখ কপালে উঠেছে সবারই। মৃত্যুর পরও বাজার থেকে মাইকেল জ্বর থেকে সেরে ওঠার নাম নেই। আর এসব তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে আকাশে-বাতাসে উঠেছে নতুন শহুরে উপকথা মাইকেল নাকি মরেইনি। দিব্যি নাকি বেঁচে আছেন। সেই গুজবের প্রবলতা এতটাই বিশাল যে যুক্তরাজ্যের মিরর ম্যাগাজিনের বিষয় হয়ে উঠেছে। শহুরে মানুষের সৃষ্টি করা অদ্ভুতুড়ে সব বিতর্কিত বিষয়ের গল্পে ফেদে আজগুবি বাস্তবতা প্রণয়নের যে ধারা তার হাত ধরেই তুলে আনা হয়েছে মাইকেলের সাম্প্রতিক গুজবের বিষয়টিও। মিররের প্রতিবেদনে মাইকেলের বেঁচে থাকার গুঞ্জনটিকে অনেকটা দাবি করা হয় সাদ্দামের অমরত্বের রহস্যের সঙ্গে। আমেরিকান বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পরও নাগরিক গুঞ্জনের দাবি, সাদ্দাম নাকি দিব্যি বেঁচে বর্তে আছেন পরিচয় আর চেহারা লুকিয়ে। একই ধরনের গুজব উঠেছে মধ্যপ্রাচীয় আরেক পরাশক্তি ওসামা বিন লাদেনকে নিয়েও। শুধু রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়েই যে এসব গুঞ্জন তৈরি হয়, তা নয়। ১৯৭৭ সালে পরলোকগমনকারী পপ কিংবদন্তি এলভিস প্রিসলিও একই ধাঁচের গুঞ্জনের শিকার। মাইকেলের ক্ষেত্রেও বিশ্বাসীর জোর দাবি- মাইকেলের মৃত্যুটা নাকি স্রেফ ধাপ্পাবাজি।

জীবদ্দশায় নিজের অর্থায়নে লিউকেমিয়া এবং ক্যান্সার ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন মাইকেল জ্যাকসন। শিশুদের জন্য এবং দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের জন্য তিনি কোটি কোটি ডলার দান করে গেছেন। ১৯৯৬ সালে তার আয়ের অর্থ দিয়ে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।

২৩ বার গিনেস রেকর্ড, ৪০টি বিলবোর্ড অ্যাওয়ার্ড, ১৩ বার গ্র্যামিজয় এবং ২৬টি আমেরিকান পুরস্কার ঘরে তোলায সর্বকালের সবচেয়ে সম্মানিত শিল্পী ধরা হয় মাইকেল জ্যাকসনকে।

মাইকেল জ্যাকসনের মতো ক্ষণজন্মা শিল্পী যুগে যুগে আসে না। বিশ্বজোড়া কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে আজও তিনি অমর। এভাবেই চিরদিন দর্শক-শ্রোতার স্মৃতিতে বারবার ফিরে আসবেন পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন।

সাহস২৪.কম/জয়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত