ক্ষমা চাইলেন নুহাশ হুমায়ূন

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ১৩:১৯

অনলাইন ডেস্ক

তরুণ নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূন সম্প্রতি একটি মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ‘রানিং রাফি’ নামে বিজ্ঞাপনটি অনলাইনে প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। 

পাহাড়ি অঞ্চলের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিজ্ঞাপন চিত্র। বলা হয়েছে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মাণ করা। একটি এলাকা দেখানো হয়েছে যেখানে আজানের শব্দ শোনা যায় না। পাহাড়ি কিশোর রাফি রমজান মাসে সেহেরি ও ইফতারের সময় পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালি মুসলমানদের আজানের সময় জানিয়ে দেয়। বিজ্ঞাপন চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিজ্ঞাপনে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতির চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।

তবে সমালোচকরা বলছেন বিষয়টি সাংঘর্ষিক। কেউবা বলছেন জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় সম্প্রীতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বিজ্ঞাপন চিত্রটি। নুহাশ হুমায়ূনের ফেসবুক পোস্টের নিচে শ্রাবণী চাকমা নামের একজন কমেন্টে লিখেছেন, প্রথমত পাহাড়ের কারো নাম রাফি হয় না, আর বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এন্ড্রয়েড ফোন খেলনার চেয়েও অকেজো কারণ ওখানে কোনও নেটওয়ার্ক থাকেনা। আর বিজ্ঞাপনে যে বাড়িগুলো দেখানো হয়েছে ওগুলো পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী মাচাংঘর যেগুলোতে বাঙালিরা থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোনও মুসলিম বা বাঙালি সম্প্রদায়ের কেউই থাকে না। বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট রাইটার নিজেই লিখেছেন যে উনি শুধুমাত্র এক জায়গাতে ঘুরতে গিয়ে আজানের শব্দ না শুনে এইটা লিখেছেন যেটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।

তবে ক্ষমা চেয়ে ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন নুহাশ। পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

 

‘আমার নির্মিত নতুন একটা বিজ্ঞাপন নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আমি এরসাথে কিছু যোগ করতে চাই।

এই বিজ্ঞাপনটি আমি নির্মাণ করেছি কিন্তু এটার মুল ভাবনা আমার ছিল না। থার্ড পার্টি যখন কনসেপ্টটা-টা দেয়, আমার কাছে ভাল লাগে। কনসেপ্টটা হলো পরিবার নিয়ে। একটা প্রত্যন্ত গ্রাম। যেখানে মুসলিমরা হলো সংখ্যালঘু। এটা রমজান মাসের উপর ফোকাস করা একটা বিজ্ঞাপন। কিন্তু এর মূল ভাবনা শুধু রমজানের রোজা রাখায় সীমাবদ্ধ না। এটা একাত্মতা আর বন্ধনেরও গল্প। আমার কাজটি যেন বাস্তবসম্মত হয়, তাই আমি আমার টিমে এথনিক কমিয়্যুনিটি থেকে প্রতিনিধি রেখেছিলাম।

কিন্তু যেহেতু বিজ্ঞাপনের প্রথমে লেখা দেখায়-‘A Nuhash Humayun Film’, তাই পরিচালক হিসাবে এর সব দায়িত্ব আমারই। এই বিজ্ঞাপনটা আমিই নির্মাণ করেছি, গল্পটাও আমার পছন্দ হয়েছে, এর স্ক্রিপ্ট আমি পরিমার্জন করেছি, যেই সোর্স থেকে তথ্য পেয়েছি –তাও বিশ্বাস করেই ব্যাবহার করেছি। এই বিজ্ঞাপনের সব দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়েই, আমি গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি তাদের কাছে, যারা বিজ্ঞাপনটি দেখে কোনভাবে কষ্ট পেয়েছেন অথবা যাদের কাছে মনে হয়েছে আমি চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছি। আমি বিনীত ভাবে জানাতে চাই, কাউকে কষ্ট দেয়া বা আঘাত করা কখনই আমার উদ্দেশ্য ছিলনা।

চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর সমস্যা মিডিয়াতে তেমনভাবে সামনে আসেনা। আমরা সেইসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে বাদ দিয়ে বিজ্ঞাপনটা নির্মাণ করেছি খুব সরলীকরণ করে, দেখে ভাল লাগবে এমন একটা গল্প নিয়ে। যেখানে অবশ্যই আগে চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সেইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসা প্রয়োজন ছিল।

অনেক মানুষ আমাকে তাদের মতামত জানাচ্ছেন। কিছু ভাল, কিছু খারাপ আর কিছু বেশ কঠিন। অবশ্যই এইসব মতামত আমাকে নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরো অনেক দায়িত্ববান ও যত্নশীল করে তুলবে।

আমি এটাও দেখলাম অনেকেই এখানে টেনে আনছেন আমার পরিবারকে, ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছেন আমাকে, যেই ছেলেটি বিজ্ঞাপনের প্রধান ভুমিকায় অভিনয় করেছেন-তাকেও নোংরা ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এইসব ঘৃণা প্রকাশ মূল বিষয়ের সাথে সংগতিহীন ।

এই বিজ্ঞাপনের গল্পটি আমার ভাল লেগেছিল, কারন এটার মূল ভাবনা ছিল একাত্মতা প্রকাশ । আমার ভাবতে খুব খারাপ লাগছে, এই বিজ্ঞাপনটা কোনভাবে বিভেদ তৈরি করছে!কোনভাবেই সেটা আমার উদ্দেশ্য ছিলোনা।

যারা এই বিজ্ঞাপনটি নিয়ে লিখছেন, কথা বলছেন, আর ভাল মন্দ যাই ভাবছেন-আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমি আপনাদের কথা শুনছি, শিখছি আর আর পরিণত হচ্ছি।‘