‘ছেলেমানুষী’

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৬:৫৩

বাংলা সিনেমায় যখন পরিবর্তনের জোয়ার তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগের সূচনা লগ্নের ছাত্রী সাকী ফারজানা পরিবর্তনের সেই ধারাকে অব্যাহত রাখতেই তৈরি করেছেন মানিক বন্দোপ্যাধায় এর ছোটগল্প অবলম্বনে “ছেলেমানুষী”। ফিল্মের সময়টা ৪৭ পরবর্তী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের। ৫৭, ৬৪, ৬৫, ৬৭ সালে ইচ্ছাকৃতভাবে হিন্দু তাড়ানোর পাঁয়তাড়া হয়েছিল, সরকারি মদতো ছিল এতে। তার উপর ভিত্তি করেই তৈরি “ছেলেমানুষী”। সাম্প্রদায়িকতা আমাদের অস্তিমজ্জায় কিভাবে জড়িয়ে আছে তা সিনেমাটা দেখে বার বার মনে হয়েছে।

ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এ দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময় অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সাথে, অন্য অংশ ভারত। কিন্তু তার পরও কি দাঙ্গা থেমেছে? দুই বঙ্গের কোন বঙ্গে থামেননি। হয়নি সাম্প্রদায়িকতারও অবসান। এই সাম্প্রদায়িকতার কারণে দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ পরস্পরকে ঘৃণা করে। ঘৃণা পারস্পরিক সংঘর্ষেরও জন্ম দেয়, রক্তপাত ঘটে। আমাদের দেশে যেমনটা ঘটেছে।

কিন্তু আমাদের দেশে তো বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে একত্রে বসবাস করেও এসেছে। হিন্দু কৃষক ও মুসলমান কৃষকের মধ্যে কখনো সংঘর্ষ হয়নি । তারা একে অপরকে উৎখাত করতে চায়নি। নদীতে হিন্দু জেলে ও মুসলমান জেলে একসঙ্গে মাছ ধরেছে। তাঁতিরা তাঁত বুনেছে। সাধারণ মানুষ একে অপরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ও মসজিদের আজান একসঙ্গে মিশে গেছে। মানুষ একই পথ ধরে হেঁটেছে, একই বাজার-হাটে গিয়ে কেনাবেচা করেছে, থেকেছে একই আকাশের নিচে। কে হিন্দু, কে মুসলমান তা নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেনি, নাক সিটকায়নি। তাহলে? সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করল কারা? কেন?

ছেলেমানুষী সিনেমাটা যেন তারই কথা বলে গেল।

খুবই সহজ সরল কাহিনীর ভীন্নরুপ দেখলাম। অতীতের দিকে তাকালে আমরা দেখি যে ধর্মের বাঁধা কখনই সম্পর্কের বাঁধা হয়ে ওঠেনি।কিন্তু বৃটিশদের কুচক্রে এদেশ ভাগ হয়ে ধর্মভিত্তিক দেশ গড়ে ওঠে। বৃটিশরা দেশ ছাড়লেও আমাদের অস্থির মধ্যে দিয়ে গেছে ধর্ম নামক “ছেলেমানুষী’র” বীজ যা আজও অব্যাহত। চলছে ধর্মের নামে মানুষে মানুষে হানাহানি।

সাকি ফারজানার “ছেলেমানুষী” সেটারই বহি:প্রকাশ। সম্প্রতি সিনেমাটি এিশাল ছায়াছবি ফেস্টিভ্যালে  প্রদর্শিত হয় এবং বেস্ট ফিল্ম আর বেস্ট সাউন্ড এন্ড মিউজিকে  পুরস্কৃত করা হয়েছে। আশা করি সিনেমাটি আমাদের সমাজের “ছেলেমানুষী” চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর পাশাপাশি সিনেমা জগতে যে পরির্বতনের জোয়ার বইছে তা অব্যাহত রাখবে ।

অভিনয় শৈলী, দৃশ্য বিভাজনে পুরোনো দিনের ধাচে আনার চেষ্টা মন্দ না। সব মিলিয়ে নতুন কিছু মাত্রা যোগ হবে সিনেমা জগতে। শুভ কামনা ছেলেমানুষীর পুরো টিমকে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত