‘তুই-ই কলকাতায় বাংলা রক আনবি’

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০১৮, ১২:১৪

সাহস ডেস্ক

আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর খবর পেয়ে শোকস্তব্ধ হয়ে যান কলকাতার ব্যান্ডসংগীত তারকা রূপম ইসলাম। ওপার বাংলার এই তারকা এখন আছেন  ইন্দোনেশিয়ায়। তা না হলে বাংলাদেশে চলে আসতেন তিনি।

কলকাতার গণমাধ্যম ‘আজকাল’ পত্রিকায় লেখা এক প্রতিক্রিয়ায় এমনটিই জানান ‘ফসিলস’ ব্যান্ডের এই ভোকালিস্ট। রূপম বলেন, ‘মনে হচ্ছে পরিবারের মানুষকে হারালাম। দাদাকে হারালাম। এটা আমার কাছে বিরাট ক্ষতি।’

বাংলা রক নিয়ে আমার যে প্যাশন রয়েছে, সেটাকে তো খুব বেশি লোকে শুরুর দিকে সমর্থন করেননি। যাঁরা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’‌জনের নাম বলতেই হবে— মাকসুদুল হক এবং আইয়ুব বাচ্চু। মাকসুদুল হক কলকাতায় খুব বেশি আসতেন না। তাই তাঁর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ খুব বেশি হতো না। কিন্তু বাচ্চুভাই প্রায়ই কলকাতায় আসতেন। যতবার তিনি এসেছেন, ততবারই দেখা করতে গিয়েছি, ততবারই তিনি আপন করে নিয়ে আড্ডা মেরেছেন। খেয়াল রাখতে হবে, আমি কিন্তু তখন প্রতিষ্ঠিত নই, লড়াই চালাচ্ছি। তবু একসঙ্গে খাবার ভাগ করে নিতেন, উৎসাহ দিতেন।

সেই সময় বাচ্চুভাই বারবার বলতেন, ‘‌কলকাতায় বাংলা রক নেই। তোরা যে পথে এগোচ্ছিস, সেটাই ঠিক পথ। তোদের পথেই কলকাতায় বাংলা রক আসবে। তুই–ই কলকাতায় বাংলা রক আনবি।’‌ একবার নয়, এই কথাটা ওঁর মুখে বারবার শুনেছি। 

পরে আমরা (‌ফসিল্‌স)‌ যখন খ্যাতি পেয়েছি, তখনও ওঁর অকৃত্রিম ভালবাসা ও সমর্থন থেকে বঞ্চিত হইনি। উনি যে আমাদের সঙ্গে কতটা সম্পৃক্ত ছিলেন একটা অনুষ্ঠানের উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে। নজরুল মঞ্চে আমাদের সঙ্গে এলআরবি–র অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। আমরা তখন স্টেজে পারফর্ম করছি। সেই অবস্থাতেই দেখতে পেলাম, এলআরবি অডিটোরিয়ামে ঢুকল। আর ঢুকেই বাচ্চুভাই সটান মঞ্চে চলে এলেন। তারপরে আমাদের কাছ থেকে গিটার চেয়ে নিয়ে আমাদেরই ‘‌বাইসাইকেল চোর’‌ গানে বাজাতে শুরু করে দিলেন। তারপরে আমরা আবার ওঁর সঙ্গে একটা এলআরবি–র গান গাইলাম। হয় ‘‌সেই তুমি’‌ নয় তো ‘‌মন চাইলে মন পাবে’‌। তারও পরে একসঙ্গে ‘‌বিষাক্ত মানুষ’‌ গাইলাম। অনুষ্ঠানের পরে বাচ্চুভাই বলেছিলেন, ‘‌বলেছিলাম না, পশ্চিম বাংলায় রক তুই–ই আনবি।আজ সেটা বাস্তব!‌’

একজন কিংবদন্তি হয়েও যেভাবে বাচ্চুভাই একজন নতুন সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে মিশতে পারতেন এবং ভবিষ্যৎটা দেখতে পেতেন, সেটা ওঁর সাঙ্গীতিক দূরদৃষ্টিরই পরিচয় দেয়। কখনও বলতেন, ‘‌চল আমার সঙ্গে আজ নাইটক্লাবে যাবি।’‌ কখনও বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতেন। পরে বাংলা রক ম্যাগাজিনের জন্য সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছি। সেখানে কত কথাই না বলেছিলেন। ছাপার যোগ্য কথা, ছাপার অযোগ্য কথা— সবই ছিল। কত পরিকল্পনাও হয়েছিল। গত বছর যখন কলকাতায় এলেন, আমার বাড়িতে একসঙ্গে বসে গানবাজনা করেছিলেন। ফেসবুক লাইভে বলেছিলেন, ‘‌আমরা এই প্রথম একসঙ্গে গানবাজনা করছি না। আবার এটাই শেষও নয়।’‌ এলআরবি–র সঙ্গে ফসিল্‌সের একটা বিরাট কনসার্ট করার কথাও হয়েছিল। সে সব তো আর হল না। আমি এই মুহূর্তে ইন্দোনেশিয়ায় আছি। যদি সম্ভব হতো, এখান থেকেই বাংলাদেশে চলে যেতাম। কলকাতায় থাকলে তো অবশ্যই যেতাম। 

বাচ্চুভাই অসামান্য একজন গিটারিস্ট ছিলেন। গিটারটা নিয়ে যা খুশি করতে পারতেন। ভোকালিস্ট হিসেবেও একজন দাপুটে শিল্পী। একটা সময় বাচ্চুভাইয়ের গান আমি মঞ্চে নিয়মিত গেয়েছি। এই কিছুদিন আগেও নজরুল মঞ্চে ‘‌সেই তুমি’‌ গেয়ে ওঁকে সম্মান জানিয়েছি, উনি নিজে গিটার বাজিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছেন, আমাকে গাইতেই হবে, প্রস্তুতি ছাড়াই গেয়েছি। কলকাতায় বাচ্চুভাইয়ের সবথেকে জনপ্রিয় গান ‘‌সেই তুমি’‌ আর বাংলাদেশে ‘‌রূপালী গিটার’‌। যে গানের লিরিক—‘‌এই রূপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাব দুরে, বহুদূরে সেদিন অশ্রু তুমি রেখো গোপন করে’‌। সেই গান তো আজ মনে পড়বেই। বাচ্চুভাই আমাকে নিয়ে অনেক ভেবেছিলেন, অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। এবার সেই স্বপ্নগুলো পূর্ণ করার দায়িত্ব আমার ওপরে এসেই পড়ল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত