তীব্র সেশন জটের আশঙ্কা

ইবির দশ বিভাগে আটকে আছে ছয় ব্যাচ

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৭

ইবি প্রতিনিধি
ফাইল ছবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাসে নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় যেমন মুখরিত হয়েছে তেমনিভাবে কিছু বিষাদের ছাপে হয়েছে মলিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি বিভাগে একসঙ্গে আটকে আছে ছয়টি করে ব্যাচ। এতে বিভাগগুলোতে তীব্র সেশনজটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যা নবীন শিক্ষার্থীদের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। ভর্তি হয়েই বিভাগের এমন জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে ভবিষ্যত জীবন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এসব বিভাগে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা, ইংরেজি এবং আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষে একসঙ্গে মোট তিনটি ব্যাচ অবস্থান করছে। এছাড়া আইন ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হলেও ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে স্বাভাবিকভাবে পাঁচটি ব্যাচ থাকার কথা থাকলেও দশটি বিভাগে ছয়টি করে ব্যাচ অবস্থান করছে। বিভাগগুলো হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পরিসংখ্যান, আইন, আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ, ফোকলোর স্টাডিজ, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি ও ব্যবস্থাপনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩৬টি বিভাগের মধ্যে এই বিভাগগুলোর অবস্থা বেশি জরাজীর্ণ।

বিষয়গুলো নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বিভাগগুলোর সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একইসাথে সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সান্ধ্যকালীন কোর্স, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, যথাসময়ে ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়া, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, রাজনীতিতে শিক্ষকদের ব্যস্ততাসহ নানা কারণে সেশনজট তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বিভাগগুলোর সভাপতিগণ প্রশাসনিক জটিলতাসহ বিভিন্ন বিষয়কে দায়ী করেছেন।

জানা গেছে, বিভাগের সেশনজটসহ বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে কেউ ফেসবুকে পোস্ট করলেও শিক্ষকরা তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। শিক্ষার্থীদের বিভাগের অফিসে ডেকে তাদের ফোন কেড়ে নিয়ে হুমকি এবং বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়। এছাড়া শিক্ষকদের কথামতো চলতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. রবিউল ইসলাম বলেন, প্রশাসনিক জটিলতার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। ফাইলগুলো প্রশাসনের বিভিন্ন টেবিলে টেবিলে ঘুরে একটা সময় নষ্ট হয়। আমাদের মোট ১৭জন শিক্ষকের মধ্যে ৭জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে আছেন। আমরা সবকিছু এ্যানালাইসিস করে একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে পরীক্ষার ডেটগুলো দিয়েছি। আশা করছি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে উঠবো। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. আব্দুল মুঈদ বলেন, একজন শিক্ষক যদি চায় তাহলে খুব সহজভাবে একটি সেমিস্টার যথাসময়ে শেষ করতে পারেন। শুধুমাত্র শিক্ষকদের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকদের ভাবতে হবে তাদের কারণে যেনো ছাত্ররা ক্ষতির মুখে না পড়ে। শিক্ষকরা যদি আন্তরিক ও দায়িত্ববান হয় তাহলে কোনো সেশনজট থাকবে না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ বিভাগের সেশনজট কেটে গেছে। আর যেসব বিভাগের শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা-পরীক্ষা নেয় না এ বিষয়ে তাদের বিভাগীয় সভাপতিকে প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবো। এছাড়া জটে থাকা বিভাগগুলো নিয়ে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিভিন্ন বিভাগের পিছিয়ে পড়াটা আসলে প্রশাসনের বিষয় না। এটা বিভাগের নিজস্ব বিষয়। পরীক্ষাসহ একাডেমিক বিষয়গুলো বিভাগ দেখে। তারপরও আমরা বিষয়গুলো দেখবো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত