চবির চারুকলায় পুলিশি অভিযান

ছাত্র হোস্টেল থেকে ছাত্রী আটকের দাবি

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:১৩

সাহস ডেস্ক

চট্টগ্রাম মহানগরীর বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা অনুষদের ছাত্র হোস্টেলের একটি কক্ষ থেকে মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে এক ছাত্রীকে আটকের দাবি করা হয়েছে। এছাড়া পাশের আরেকটি কক্ষ থেকে কয়েক গ্রাম গাঁজা জব্দ করা হয়। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় পুলিশ সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি। এ সময় শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ১০৫ নম্বর কক্ষ থেকে ইনস্টিটিউটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে আটক করা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে ওই ছাত্রীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সূত্রে জানা গেছে, ওই ছাত্রী কোনো অনুমতি ছাড়াই ছাত্র হোস্টেলে অবস্থান করছিলেন। নিয়মানুযায়ী হোস্টেল ওয়ার্ডেনের অনুমতি ছাড়া রাতে কিংবা দিনে কোনো সময়ই ছাত্রীরা ছাত্রদের হোস্টেলে প্রবেশ করতে পারবেন না। আটকের পরে ওই ছাত্রী আর এভাবে অবস্থান করবেন না মর্মে মুচলেকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, অভিযানের সময় হোস্টেলের ১০৪ নম্বর কক্ষ থেকে কয়েক গ্রাম গাঁজাও পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। তবে অভিযান চলাকালে ভিডিও ধারণকালে বহিরাগত এক যুবকের মোবাইল ফোন জব্দ করেছে পুলিশ।

দীর্ঘদিন থেকে চলমান অচলাবস্থার কারণে আন্দোলন নিয়ে চারুকলা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এক পক্ষ প্রশাসনের দাবি মেনে নিয়ে ক্লাস করতে চাইলেও অন্য পক্ষ মূল ক্যাম্পাসে তাদের স্থানান্তরের দাবি না মানলে আমরণ অনশনের হুমকি দেয়। এসময় উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কায় পুলিশ নিয়ে অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ক্লাসে ফেরা নিয়ে চারুকলার শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা এবং বহিরাগতদের উচ্ছেদে এই অভিযান চালানো হয়।

তিনি জানান, অভিযান চলাকালে রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ১০৫ নম্বর কক্ষ থেকে ইনস্টিটিউটের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে আটক করা হয়। পরে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অপর আরেকটি কক্ষ থেকে কিছু পরিমাণ মাদকদ্রব্যও উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে বিষয়টিকে সাজানো ও আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের ষড়যন্ত্র বলছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ।
তাদের দাবি, ওই ছাত্রী ইনস্টিটিউটের সামনে অবস্থান করছিলেন। পুলিশের গাড়ি ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করতে দেখলে ভয় পেয়ে তিনি ছাত্র হোস্টেলে ঢুকে পড়েন।

এ বিষয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুসময় বড়ুয়া বলেন, আগে থেকে অবস্থান করছিলেন, এই অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের এক জুনিয়র মেয়েকে রিসিভ করে তার বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের বান্ধবী হোস্টেলের সামনে অবস্থান করছিলেন। এসময় হুট করেই পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি প্রবেশ করে সবাইকে যার যার রুমে চলে যেতে বলেন। এতে আমাদের বান্ধবী ভয় পেয়ে সামনে যে রুমটি পেয়েছে সে রুমেই ঢুকে পড়েন।

গত বছরের ২ নভেম্বর থেকে ২২ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ও ক্লাসবর্জন শুরু করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন দাবি মানতে ইতিবাচক সাড়া দিলেও পরে ২২ দফা দাবি পরিবর্তন করে হঠাৎ মূল ক্যাম্পাসে ফেরার এক দফা এক দাবিতে রূপ নেয় আন্দোলন। টানা ৮২ দিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ইনস্টিটিউট অবরুদ্ধ রাখার পর গত ২৩ জানুয়ারি শর্তসাপেক্ষে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

কিন্তু শর্তপূরণে কোনো দৃশ্যমান কাজ চোখে না পড়ায় ৩১ জানুয়ারি থেকে ফের ক্লাস বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা। অবস্থান কর্মসূচি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি আমরণ অনশনের হুমকিও দেওয়া হয়।

সাহস২৪.কম/এএম.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত