রাবি ক্যাম্পাসে বাড়ছে মাদকের দৌরাত্ম্য

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২২, ১৭:৩৯

সাহস ডেস্ক

বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বেড়েছে মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য। ক্যাম্পাস যেন তাদের জন্য একটি সেফ জোন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় যত্রতত্রভাবে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্যের বিভিন্ন আলামত। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ২৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুল মাঠ থেকে নেশা করার সময় বহিরাগত চারজনকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গেল তিনমাসে ক্যাম্পাসে মাদকসহ বিভিন্ন ধরণের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ৮৪ জনকে আটক করেছে প্রক্টরিয়াল বডি। তার মধ্যে ৩০টিরও বেশি অভিযোগ ছিল মাদকসেবনের জন্য। এছাড়া ক্যাম্পাসে এসব অপকর্মের অপরাধে প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে কাউন্সিলিং-এর পাশাপাশি মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ৫৪ জনকে। যার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ২১ জন এবং রুয়েট, বরেন্দ্র, মেডিকেল ও অন্যান্য স্কুল কলেজসহ বহিরাগত ৩৩ জন।

এদিকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে থেমে নেই মাদকের ছড়াছড়ি। ক্যাম্পাসে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ মাদক জাতীয় নানা দ্রব্য। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ক্যাম্পাসের নির্জন জায়গাগুলোতে জমে উঠে মাদকের আসর। শুধু নির্জন জায়গা নয়, একাডেমিক ভবন থেকে শুরু করে আবাসিক হলের ছাদগুলোতেও বসে মাদকের আড্ডা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, একাডেমিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে মাদকের দিকে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা। মাদক সহজলভ্য হওয়া আরো একটি বড় কারণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে মাদকের ব্যাপারে তৎপর থাকলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। দিন দিন মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, বহিরাগতসহ মাদকে লিপ্ত রয়েছেন নারী শিক্ষার্থীরাও। প্রশাসন বারবার পদক্ষেপ নিয়েও মাদকসেবীদের থামাতে পারছেন না। মাদকসেবীদের দলের সংখ্যা ভারী হচ্ছে দিন দিন। আর এসব মাদক সরবরাহের কাজগুলোতে জড়িত স্থানীয় যুবক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মচারী, শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদকসেবীরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলাদা আলাদা জায়গা নির্ধারণ করে রাখে। তারপর সন্ধ্যা পেরোতেই আলাদা আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে সবাই হাজির হন তাদের নির্দিষ্ট জায়গায়। এসব জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠ, কৃষি প্রকল্পের গোডাউনের বারান্দা, বিনোদপুর গেট সংলগ্ন আইবিএস ভবন যাওয়ার রাস্তা, সৈয়দ আমীর হলের দক্ষিণ-পূর্ব কোন, নবাব আব্দুল লতিফ হলের পূর্ব পার্শ্বের মাঠ, শাহ মখদুম হলের দক্ষিণ-পূর্ব কোন, শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্ব দিকে রাস্তার পাশে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনের দুই পাশে, মাদার বখশ ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা, শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনের মাঠ, চারুকলা ও কৃষি অনুষদ সংলগ্ন মাঠগুলোর অন্তত তিনটি পয়েন্ট।

এছাড়া তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনের তুঁতবাগান এলাকা, দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনের ব্রীজ, চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের পেছনে চায়ের দোকান, প্রথম বিজ্ঞান ভবনের পশ্চিম পাশ, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মাঠে পানির ফোয়ারার নিচে, সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ও রবীন্দ্র কলা ভবনের ছাদে, রোকেয়া হলের পশ্চিম দিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাজার গেটে রাস্তার পাশের মাঠ, জুবেরি মাঠের দক্ষিণ কোনাসহ ক্যাম্পাসে এমন প্রায় ৪০টির মত চিহ্নিত জায়গা রয়েছে। যেসব জায়গাগুলোকে মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদকসেবীরা।

কীভাবে আসে এসব মাদকদ্রব্য সেই তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাহিরে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ধরনের মাদক। ক্যাম্পাস সংলগ্ন স্টেশন বাজার, মির্জাপুর, কাজলা, কাটাখালিসহ বিভিন্ন স্থানের নির্দিষ্ট একাধিক ব্যক্তির কাছে এবং দোকানে মিলে এসব মাদকদ্রব্য। তাছাড়া নগরীর সাহেব বাজারের একাধিক স্থানে মদসহ অন্যান্য উত্তেজক দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। কোনো না কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাত ধরেই আসে ক্যাম্পাসে। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুর উপর নির্দিষ্ট অর্থ প্রদান করলেই হাতে পৌঁছে যায় মাদক।

মাদক সেবন করে বিশ্বদ্যিালয়ের এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের সাথে। তারা বলছেন, ক্যাম্পাসের ভিতরেই আমাদের অনেক লিংক আছে। তারা মাদক সেবনের পর যা বাকি থাকে তা বিক্রি করে। আর যদি না পায় তাহলে চলে যায় বাহিরে। বাহিরের অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযান চালানোর ফলে ক্যাম্পাসে এখন গোপনে এসব চলে। তবে বাহিরে একটা লিংক ধরতে পারলেই মাদক পাওয়া সহজ হয়ে যায়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এবং অনেক সময় হলের রুমে বসেই খাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। কিন্তু মাদকসেবীরা ক্যাম্পাসের বাহিরে মাদক সেবন করলে সেটা জানা আমাদের জন্য খুব কষ্টকর। এজন্য সকলের সহযোগিতা দরকার। যাদের পরিচিতরা মাদক সেবন করছেন তারা যদি এসে আমাদের খবর দেন তাহলে তাদের ফিরিয়ে আনতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। এছাড়া ক্যাম্পাসে মাদক বিক্রয় ও সেবনের বিরুদ্ধে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ সবসময় সক্রিয় রয়েছে।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত