পরীক্ষায় ভালো করার কিছু কৌশল

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২১, ১৭:৪৪

মো: আরিফুল ইসলাম

পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? বুঝে উঠতে পারছেন না কিভাবে কি করা যায়! শেষ মুহুর্তে হতাশাগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার বদভ্যেস রয়ে গেছে। পরীক্ষার সময় কাছে যত আসে তত বেশি ভয় পেয়ে বসে মনে। কিছু শিক্ষার্থী শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিতে সাফল্য অর্জন করতে পারে। তবে খুব অল্পসংখ্যক পরীক্ষার্থীরাই এই সঙ্কট কাটিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে। তবে এটা কোনও চিরস্থায়ী সমাধান নয়।

পরীক্ষাইয় ভালো ফলাফল করার প্রথম শর্ত মানষিক শক্তি। যে যতটুকু মানষিক দৃঢ়তা দেখাতে পারবে জয়ের মালাটা তারই গলায় উঠে। আর এটাই চিরসত্য। পড়াশোনা মনোযোগ দিয়ে করেও পরীক্ষাভীতির কারনে একটা বড় অংশের শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করতে পারে না।

তাই প্রথমে এই ভীতি কাটাতে হবে। যার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি প্রচুর পরিমানে আনন্দ বিনোদনের দিকে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে গল্পের বই পড়া, খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করাসহ সাংস্কৃতিক বিকাশে মনোযোগ দেওয়া। 

আজকের পরীক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে সাহসের এই আয়োজনে মানুষিক শক্তি ছাড়াও শারীরিক ও আনুষাঙ্গিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেছেন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ মডেল কামিল মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মো: আরিফুল ইসলাম।

পরীক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের জন্য অবশ্যই অধ্যাবসায়ের বিকল্প নেই। তার সাথে প্রয়োজন মানষিক দৃঢ়তা। সুস্বাস্থ। লক্ষ্যে স্থির হওয়া। তবে পরীক্ষার আগের কিছু প্রস্তুতির জন্য আজকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হবে।

তোমার কতটি পরীক্ষা আছে এবং যে দিনগুলিতে পরীক্ষা দিতে হবে সেগুলি লিখে রাখা খুবই জরুরী। তারপর সেই অনুযায়ী পড়াশোনার একটা রুটিন তৈরি করে ফেলতে হবে। কিছু বিষয়ে অন্যগুলোর চেয়ে বেশি সময় দিতে হতে পারে। তাই এমন একটি ভারসাম্য করে রুটিন করতে হবে যাতে খুব সহজেই সবগুলো বিষয় শেষ করা যায়।

করণীয় কিছু বিষয়

১. পড়ার স্থানটি পরিপাটি করে রাখা
নিশ্চিত হও তোমার পাঠ্যপুস্তক ও নোটগুলি সঠিকভাবে সঠিক জায়গাতে গুছিয়ে রাখা আছে। রুমে কি যথেষ্ট আলো আছে? চেয়ারটা কি আরামদায়ক? কম্পিউটার যে টা দিয়ে তুমি গেমস খেলো সেটা কি চোখের আড়ালে?

চেষ্টা কর। সমস্ত বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকো। যতটা সম্ভব আরামদায়ক থাকা। অধ্যয়নে ফোকাস করতে কিভাবে স্বস্থিবোধ কর তা নিশ্চিত হও। গান শুনতে ভালো লাগলে তাই করতে পারও। আমাদের মধ্যে কারও কারও মনোনিবেশ করার জন্য পুরোপুরি পরিপাটি এবং সংগঠিত সমস্ত কিছু প্রয়োজন হয়। অন্যরা আরও বিশৃঙ্খল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। তোমার জন্য কী কাজ করে তা নিয়ে ভাবও। সঠিক কাজটি করার জন্য সময় নাও।

২. গ্রাফ, চার্র্ট এবং ডায়াগ্রাম ব্যবহার করো
রিভিশন করার সময় ভিজুয়াল এইডগুলি সত্যই সহায়ক হতে পারে। কোনও বিষয়ের অধ্যয়নের শুরুতে, কোনও বিষয় সম্পর্কে তোমার ইতৌমধ্যে জেনে থাকা সমস্ত কিছু লিখে রাখার জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর। তারপর ফাঁক কোথায় রয়েছে তা হাইলাইট করো। পরীক্ষার কাছাকাছি সময়ে, তোমার প্রয়োজনীয় নোটগুলি এক পৃষ্ঠার ডায়াগ্রামগুলিতে একত্রিত কর। একটি সংক্ষিপ্ত ফর্ম্যাটে তোমার নোটগুলো সাজিয়ে নেওয়া পরীক্ষার সময় তোমার যা জানা দরকার তা দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে তোমাকে সহায়তা করতে পারে।

৩. বিগত বছরের প্রশ্নপত্র অনুশীলন করো
অনুশীলন পরীক্ষার প্রস্তুতির অন্যতম কার্যকর উপায় হ'ল বিগত বছরের প্রশ্নপত্র অনুশীলন করা । এটি তোমাকে প্রশ্নগুলির বিন্যাসে অভ্যস্ত হতে সহায়তা করে। তোমরা নিজেরাই সময় নিলে- প্রতিটি বিভাগে তোমার সঠিক পরিমাণে সময় ব্যয় করে তা নিশ্চিত করার জন্যও এটি ভাল অনুশীলন হতে পারে। 

৪. পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে শেয়ার করো
পরীক্ষার সময় পরিবার তোমার জন্য অনেক দুঃশ্চিন্তা করে থাকে। এটিকে তোমার পক্ষে কাজে লাগাও। তাদের কাছে (সুবিধামত যার সাথেই হোক) একটি প্রশ্নের উত্তর ব্যাখ্যা কর। এটা তোমার টপিকটি পরিষ্কার করে তুলতে এবং তোমার টপিকটিকে বোধগম্য করতে সহায়তা করবে।

৫ বন্ধুদের সাথে গ্ৰুপ স্টাডি করো
গ্রুপ সেশন ও গ্রুপ স্টাডি করার জন্য বন্ধুদের সাথে একত্র হও।  তোমার কাছে এমন অনেক প্রশ্ন ও থাকতে পারে যেগুলির উত্তর ভুল। এবং বিপরীতে অন্যদের সাথে উত্তরগুলো মিলিয়ে নিশ্চিত হও। এ পদ্ধতিটা নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার অন্যতম কার্যকর উপায় হতে পারে।

৬ নিয়মিত বিরতি নাও
যদিও তুমি মনে করতে পার যত বেশি ঘন্টা অধ্যয়ন করা যায় তত ভাল। তবে এটি প্রকৃতপক্ষে হিতে বিপরীতও হতে পারে। তুমি নিশ্চই ২৪ ঘন্টা অধ্যয়ণ করার চেষ্টা করো নি। তেমনি, গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী জ্ঞান ধরে রাখার জন্য নিয়মিত বিরতি সত্যিই অনেক কার্যকরী।

আমরা জানি আমরা প্রত্যেকটা মানুষই আলাদা। সুতরাং তোমার জন্য কাজ করে এমন একটি অধ্যয়নের রুটিন তৈরি কর। তুমি যদি সকালে ভাল অধ্যয়ন কর তবে দুপুরের আগে বিরতি দাও। অথবা, তুমি যদি রাতের বেলা আরও বেশি উদ্যমী হও তবে এর আগে আরও লম্বা বিরতি নাও। যাতে তুমি সন্ধ্যায় পড়তে বসতে প্রস্তুত থাকতে পারও।

তোমার পাঠ্যপুস্তকগুলিতে নিমগ্ন হওয়ার পরিবর্তে সকালের রোদ উপভোগ করার চেষ্টা কর। মনে রাখবে স্বাস্থ্যকর মস্তিষ্কের জন্য ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ।

৭. মস্তিষ্ক ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করো
তোমার মনে হতে পারে খাবার একটা হলেই হল। তবে তুমি যা খাও তা সত্যিই শক্তির স্তর এবং ফোকাসে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকো। পুষ্টিকর খাবার বেছে নিয়ে তোমার দেহ এবং মস্তিষ্ককে সুগঠিত রাখও।  মাছ, বাদাম, বীজ, দই জাতীয় ঘন খাবার স্মৃতিশক্তিকে সহায়তা করে বলে প্রমাণিত। এমন খাবার খাও। একই বিষয় পরীক্ষার সময় প্রযোজ্য। পরীক্ষার দিনে পরীক্ষা শুরুর আগে একটি ভাল খাবার খাও। এমন খাবারের উপর ভিত্তি কর যা পুরো শরীর জুড়ে শক্তি দেবে। ধীরে ধীরে ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেবে। চিনি আকর্ষণীয় বলে মনে হতে পারে। তবে তা তোমার এনার্জি লেবেল নষ্ট করে দেবে।

৮. পরীক্ষার দিন কী করবে না করবে তা নিয়ে পরিকল্পনা করো
প্রয়োজনীয় সামগ্রী আগে থেকেই ভালভাবে প্রস্তুত করে নাও এবং তা নিশ্চিত কর। পরীক্ষার দিন বা তার আগের দিনের জন্য কিছু ফেলে রেখও না। পরীক্ষার সময় এমন হতে পারে গুরুত্ত্বপূর্ন কিছু তুমি ফেলে এসেছো। যেমন গণিত পরীক্ষায় জ্যামিতি বক্স ছাড়া পরীক্ষা দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখলে জ্যামিতি বক্সটাই আনা হয়নি। এর থেকে বিড়ম্বনার আর কি হতে পারে। সমস্ত নিয়ম এবং প্রয়োজনীয়তা পরীক্ষা করে দেখও।

তোমার রুট এবং ভ্রমণের সময় পরিকল্পনা করে রাখো। যদি সম্ভব হয়, পরিক্ষার হল ও কেন্দ্র আগে গিয়ে দেখে এসো। সেখানে যেতে কত সময় লাগবে তা নির্ণয় কর। তারপরে কিছু অতিরিক্ত সময় যুক্ত কর। তুমি বন্ধুদের বা সহপাঠীর সাথে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাতায়াতের পরিকল্পনাও করতে পার। পরিশেষে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে পরীক্ষার দিন কখনোই দেরি করা যাবে না। বরং আধা ঘন্টা একঘন্টা আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করার চেষ্টা কর।

৯. প্রচুর পরিমাণে জল পান করো
একটি চূড়ান্ত পরামর্শ হিসাবে মনে রাখবে যে তোমার মস্তিষ্কের সর্বোত্তমভাবে কাজ করার জন্য হাইড্রেটেড হওয়া জরুরি। নিশ্চিত হয়ে নাও যে তুমি তোমার অনুশীলনের পুরোটা সময় জুড়ে প্রচুর পরিমাণে জল পান করছ। এমনকি পরীক্ষার দিনও।

 

লেখক
সিনিয়র প্রভাষক ইংরেজি
শায়েস্তাগঞ্জ কামিল মাদরাসা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত