টিউশন দেওয়ার নামে হয়রানি ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২১, ২১:০৮

মুহাম্মদ ওমর ফয়সাল
চট্টগ্রামের কথিত টিউশন মিডিয়া পরিচালক

টিউশন দেওয়ার নামে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের কথিত টিউশন মিডিয়া পরিচালক ফাজিয়ার রহমান সনেট ও রাজু আহমেদ নামে দুই যুবকের বিরুদ্ধে।

নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তানজিনা আক্তার (ছদ্মনাম) অভিযোগ করে বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি টিচার্স টাইম নামক একটি টিউশন মিডিয়া মেয়র গলি, ২নং গেইট এলাকায় একজন শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থী পড়ানোর জন্য একজন মহিলা শিক্ষক চেয়ে তাদের ফেসবুক গ্রুপে বিজ্ঞাপন দেয়। তা দেখে বিজ্ঞাপনে প্রদত্ত নাম্বারে ফোন করে উক্ত টিউশনটি করার আগ্রহ প্রকাশ করি। পরবর্তীতে টিউশনটি দেওয়ার শর্তে উক্ত টিউশন মিডিয়ার ম্যানেজার রাজু আহমেদ আমার কাছ থেকে টিউশন ফি বাবদ বিকাশের মাধ্যমে ১৮০০ টাকা গ্রহণ করে। অতঃপর টিউশন মিডিয়ার লোক রাজু উক্ত শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ফোন নাম্বার দিলে আমি ওই নাম্বারে ফোন করি। কিন্তু অভিভাবক জানাই তার সন্তান পড়ানোর জন্য কোনো শিক্ষকের প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে ঐ টিউশন মিডিয়ার পরিচালক ফাজিয়ার রহমান সনেট ও ম্যানেজার রাজু আহমেদকে বিষয়টি জানালে তারা বলেন, টিউশনটি যেহেতু হয়নি, সেহেতু টিউশন দেওয়ার শর্তে মিডিয়া ফি বাবদ আমার প্রদত্ত সম্পূর্ণ টাকা ৭ মার্চ রবিবারের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে। তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রবিবার আমি উক্ত টাকার জন্য ফোন করলে ঐ টিউশন মিডিয়ার ফাজিয়ার রহমান সনেট ও রাজু আহমেদ দু'জনই আমার সাথে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করে এবং আমার প্রাপ্য টাকাগুলো দিতে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে ফাজিয়ার রহমান ওরফে সনেট নামে ঐ ব্যক্তি আমি একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও আমাকে ফোন করে অশালীন ভাষায় গালাগালি করে।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ১৭ মার্চ সনেট নামে ওই ব্যক্তি আমার প্রদত্ত টাকাগুলো ফেরত দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ওইদিনও দেয়নি। পরবর্তীতে ২০ মার্চ কিছু টাকা দিলেও টিউশন বাবদ আমার প্রদত্ত আঠারোশ' টাকা সম্পূর্ণ ফেরত দেয়নি। বাকি টাকার জন্য বারবার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করছে না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত ফাজিয়ার রহমান সনেট ও রাজু আহমেদ এ দুইজনকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিউশন মিডিয়ার আড়ালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে একটি প্রতারক চক্র। টিউশন ফি হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে মাস দুয়েক পর সেই শিক্ষককে বাদ দেয়া, প্রতিষ্ঠানের ভুল পরিচয় দেয়া থেকে নারীদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। টিউশন দেয়ার আগেই প্রথম মাসের সম্মানীর ৭০ থেকে ৮০ ভাগই আদায় করে নেয় টিউশন মিডিয়াগুলো। নগরের অলিগলিতে এভাবে প্রতারণা চললেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

আরো জানা যায়, এসব মিডিয়া টিউশনি দেওয়ার নামে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, দেয়ালে, বিদ্যুতের খুঁটিতে পোস্টারিং এর মাধ্যমে প্রচারণা চালায়। বিশেষ করে এই ধরণের মিডিয়াগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করছে শিক্ষার্থীদের জন্য। বিভিন্ন নামে পেইজ ও গ্রুপ খুলে টিউশনের বিজ্ঞাপন চালাচ্ছে তারা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চুয়েট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজসহ সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের নামে গৃহশিক্ষক দেয়ার কথা বলেই চলছে টিউশন মিডিয়ার ব্যবসা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা নিজের খচর মেটানোর তাগিদে, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের অসচ্ছলতার কারণেই এসব টিউশন মিডিয়ার কাছ থেকে টিউশন নিতে বাধ্য হয়। শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার সুযোগে নানাভাবে হয়রানি করেন কথিত টিউশন মিডিয়াগুলো। এসব মিডিয়া টিউশন দেওয়ার শর্তে অগ্রিম ফির নামে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ করে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত