প্রাচীন কাঠের স্তম্ভ উদ্ধার করেছেন কুবির সহকারী অধ্যাপক

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২১, ২১:২২

ফাতেমা রহিম রিন্স

ইটাল্লা গ্রামের স্থানীয় জনগণ কর্তৃক পুকুর খনন করার সময় এক বিশাল কাঠের স্তম্ভ দৃশ্যমান হয় এবং তা উদ্ধার করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুর্শেদ রায়হান।

গত ১৯ মার্চ (শুক্রবার) কুমিল্লা জেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান পরিচালনাকালীন সময়ে তিনি তা উদ্ধার করেন।

কাঠের স্তম্ভটি পাওয়ার পর তিনি তা সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন। নিয়ে আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ধরণের নিদর্শন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই ইউনিক এবং দেশের খুব কম স্থান থেকে এ ধরণের কাঠের নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের আদ্র আবহাওয়ায় সাধারণত প্রাচীন কাঠের নিদর্শন টিকে থাকে না। গবেষণা করলে এ নিদর্শন থেকে এ অঞ্চলে ইট ও কাঠের সমন্বয়ে নির্মিত স্থাপত্যসহ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা সম্ভব হবে। কাঠের স্তম্ভটিতে সুন্দর কারুকার্য দৃশ্যমান।

স্তম্ভটি সংরক্ষণের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি একটি চমৎকার মিউজিয়াম অবজেক্ট এবং এটির সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী। এটি সংরক্ষণ করতে যে বিষয়টা দরকার তা হলো কেমিক্যাল প্রিজারভেশন। এর জন্য মোটা অংকের ফান্ডের প্রয়োজন। প্রায় ৪.৬৬ মিটার দীর্ঘ কাঠের এ পিলারটির জন্য যে পরিমাণ কেমিক্যাল লাগবে এর বাজার দরের উপর নির্ভর করে বাজেট তৈরি করতে হবে। এর জন্য ফান্ডের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা প্রশাসনকে একটা প্রজেক্ট হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই যাতে ভালোভাবে প্রিজারভেশন করতে পারি।

পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু প্রিজারভেশন কনজারভেসন ল্যাবরেটরি আছে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা কোর্সের অংশ হিসেবে কাঠের কনজারভেশন শেখার সুযোগ পাবে এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘর হলে সেখানে এটাকে প্রদর্শন করা যাবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

কিন্তু স্তম্ভটিকে এখন আপাতত পাটের চটে মুড়িয়ে পানি দিয়ে রাখা হচ্ছে। কারণ এখন যেহেতু গ্রীষ্মকাল তাই কাঠের পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে ফেটে যাওয়া রোধে এবং আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্যই এভাবে রাখা হচ্ছে। তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত এটাকে সম্পূর্ণরুপে সংরক্ষণ করা যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এটাকে পুনরায় মাটির নিচে রেখে জলাবদ্ধ রাখতে হবে। শীতকাল এটা সংরক্ষণের উপযুক্ত সময় বলেও জানান তিনি।

প্রত্নস্থান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা, অসচেতনতা এবং অপরিকল্পিত খোড়াখুরির ফলে প্রত্নস্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের এ অমূল্য নিদর্শনগুলো টিকিয়ে রাখতে জনসচেতনতা ও পদ্ধতিগত প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের জন্য স্থানীয় জনগণকে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে সচেতন করার বিষয়েও জোর দেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া রিসার্চ প্রজেক্টের ওপর পাঁচথুবী ইউনিয়ন নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। তার রিসার্চের নাম 'ইনভেস্টিগেশন এন্ড এক্সপ্লোরেশন অব আর্কিওলজিকাল রিমেইন্স: এন এক্সপ্লোরাটোরি রিসার্চ ইন পাঁচথুবী এন্ড সারাউন্ডিং রিজিয়নস অব কুমিল্লা'।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত