'শুধু উপাচার্যই নন, শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসছে'

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:০৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৪ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তদন্ত চলছে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও।

জানা যায়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগের তদন্ত প্রায় গুছিয়ে এনেছে ইউজিসি। অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানানো হয়েছে ইউজিসির পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ঢাবি ও জাবির উপাচার্যদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নামা হবে বলে জানা যায়।

এদিকে, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি।

ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ এবং হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মু. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে জানানো হয়েছে ইউজিসির পক্ষ থেকে।

এছাড়াও তদন্ত চলছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ, ঢাকার ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. রোস্তম আলী এবং রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলোর।

উপাচার্য ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষকের নামেও অভিযোগের তদন্ত চালাচ্ছে ইউজিসি। সাবেক উপাচার্যদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান। এছাড়া বেশ কয়েকজন শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে।

ইউজিসি সূত্র জানায়, ঢাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে সান্ধ্যকালীন কোর্সে ৩৪ শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রকল্পের কাজের টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, জমি কেনায় দুর্নীতি, অডিট আপত্তিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। শাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগে প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্র্যাজুয়েটদের বঞ্চিত করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়োগ এবং ৫৩ অভিযোগ সম্বলিত বেনামি শ্বেতপত্রের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণ, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বাক স্বাধীনতা হরণসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগের তদন্ত চলছে।

অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, প্রকল্পের কাজে অর্থ লেনদেন, অবৈধ ভর্তি এবং অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন রকমের অভিযোগ করা হয়েছে ইউজিসিতে। একজন ভিসির বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিরও অভিযোগ রয়েছে।

ড. কাজী শহীদুল্লাহ, ইউজিসির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, 'অভিযোগ তদন্তের পর প্রমাণ হলে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে। অভিযোগ কখনও সত্য হয়, আবার কখনও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় না। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে প্রমাণ খুঁজে বের করা। ইউজিসি থেকে আমরা সে চেষ্টা করছি। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত গুছিয়ে এনেছি। আমাদের সুপারিশ করার দায়িত্ব, সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।'

তিনি আরও বলেন, 'শুধু উপাচার্যই নন, অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসছে। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত কমিটিগুলোকে শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও পক্ষপাতিত্ব যেনও না হয় তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।'