‘শিক্ষার্থীদের নতুন বইয়ের পাশাপাশি ২ হাজার টাকা দেয়া হবে’

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৩৮

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, ‘আগামী বছরের শুরু দিন দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বইয়ের পাশাপাশি স্কুল ড্রেসের জন্য দেয়া হবে ২ হাজার টাকা। বিদ্যালয়গুলোকে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। আকর্ষণীয় করে সাজানো হচ্ছে ক্লাস রুম। আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান নিশ্চিত করতে সরকারের এতসব আয়োজন।’

৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন স্বপ্নকুঁড়ি সম্মেলন কক্ষে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় একথা প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। মেধাবী জাতি গঠনে প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ আজকের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২০৪১ সালে যুবক হবে। যারা নেতৃত্ব দেবে উন্নত রাষ্ট্রের।’

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সরকারের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে গৃহিত বিভিন্ন প্রকল্পে যারা দুর্নীতি করছেন তারা কেউ মাপ পাবেন না। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। মনে রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছেন।’

মন্ত্রী বিকাল ৩টায় কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চতকরণে পরীক্ষামূলকভাবে এক শিফটের বিদ্যালয়ের সময়সূচির (ক্লাস রুটিন) উদ্বোধন করেন।

এ বিদ্যালয়ে এখন থেকে সকাল ৯টা ৩০মিনিটে শরীরচর্চা ও ১০টা ক্লাস শুরু হবে। ৪৫ মিনিট ক্লাস করার পর ১৫ মিনিট বিরতি। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের খেলার ছলে পড়াবেন। আর ছুটি হবে বিকাল ৩টা ৪৫মিনিটে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আনন্দপূর্ণ পাঠদান কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যে পরীক্ষামূলক ৪টি স্কুল বাছাই করা হয়েছে। স্কুলগুলো হল- কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রৌমারী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেত্রকোনার ৩৬নং বালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাগুরা জেলার হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সফলতা পেলে সব বিদ্যালয়ে একই সময়সূচি চালু করা হবে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা ৩০ মিনিটের বিশ্রামের সময় পাবেন। প্রতি ক্লাসের শেষে ১৫ মিনিটের বিশ্রামের সময়ে খেলার ছলে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় দিবস (১৫ আগস্ট উপলক্ষে) পালনের জন্য সরকার এই প্রথম সব বিদ্যালয়কে অনুষ্ঠান বাবদ ২ হাজার টাকা দিয়েছে। আগামী বছর থেকে এ টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৫ হাজার টাকা করা হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলপ্রতি ৫ লাখ টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। পিডিইপি প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩ ও ৬ ক্লাস রুমের স্কুলগুলোকে পর্যায়ক্রমে ৯ ক্লাস রুমের স্কুলে পরিণত করা হবে।’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন। এরপর ২৮ বছর প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে একসঙ্গে ২৬ হাজার ১৯৩টি বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ‘আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার মান হবে পৃথিবীতে রোলমডেল’। আর এ জন্য তিনি সব শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অতিরিক্ত ২ ঘণ্টা বেশি কাজ করার আহ্বান জানান। কারণ স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদদের রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে।’

এরপর প্রতিমন্ত্রী রাজারহাট চাকিরপশার তালুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজারহাট পাইলট উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শন করেন।

জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বদরুল হাসান বাবুল, রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক আব্দুল ওহাব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, তৌফিকুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক, লস্কর আলী প্রমুখ।

সভায় জেলার সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, সহকারী উপজেলা ইন্সট্রাক্টর, ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পিটিআই সুপারসহ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।