দৃষ্টিহীনের স্বপ্ন পূরণ

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০১৯, ১৬:০৭

সাহস ডেস্ক

চোখের আলো না থাকলেও যে স্বপ্ন দেখা যায়, চেষ্টা আর অধ্যাবসায়ে সেই স্বপ্নকে স্পর্শ করা যায়- সেটাই প্রমাণ করলেন চট্টগ্রামের ছাত্র মুহাম্মদ শাকিল খান।

দৃষ্টিহীন এই তরুণ এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। পূরণ করেছেন নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন। নিজের জীবনের সংগ্রাম আর সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে খানিকটা আবেগআক্রান্তই হয়ে পড়লেন।

শাকিল বলছিলেন, ‘সারাজীবন স্বপ্ন ছিল বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে কোনো সরকারি কলেজের শিক্ষক হবো। এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়ার পর মনে হলো, আমার স্বপ্ন পূরণ হয়তো অসম্ভব নয়। এই ফলাফল আমাকে সাহস ও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।’

শাকিলের স্বপ্নপূরণের পথে তাঁর সঙ্গী হয়ে এসেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, আইসিটি বিভাগ, ইউএনডিপি, ইউএসএইডের মাধ্যমে পরিচালিত এটুআই প্রকল্প। এই প্রকল্পের আইল্যাবের (ইনোভেশন ল্যাবের) উদ্ভাবন মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক সহযোগিতা করছে শাকিলের মতো বহু দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীকে।

এটুআই-এর এই উদ্যোগের কথা বলতে গিয়ে শাকিল জানান, ‘এটুআই-এর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এই মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক আসার আগে আমার শিক্ষাগ্রহণটা অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং ছিল। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক পেয়ে আমার লেখাপড়াটা অনেক বেশি সহজ হয়ে গিয়েছে। এমনও অনেক সময় হয়েছে, আমি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছি, আমার মা এসে ডিভাইসটি নিয়ে গেছেন। এটুআই এর এই উদ্যোগের কারণে আজ আমি বিশ্বাস করি- আমার স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব।’ 

শাকিলের মতোই আরেকজন দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী সাইফউদ্দিন রাফি। চট্টগ্রামের পটিয়া সরকারী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে তিনিও জিপিএ ৫ পেয়েছেন। তাঁরও পাঠজীবনের সবচেয়ে বড় সঙ্গী মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক। শুধু এইচএসসিই নয়, এসএসসি পরীক্ষায়ও টকিং বুকের সহযোগিতা নিয়ে তিনি জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন।

নিজের সাফল্যের পথে মাল্টিমিডিয়া টকিংবুকের অবদানের কথা বলতে গিয়ে রাফি বলেছেন, ‘আমি পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেয়েছি। জেএসসি থেকে আমার সঙ্গী হলো এটুআই-এর মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক। আজকের আমার সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান এটুআই-এরই। মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক পাওয়ার আগে আমার বোনেরা আমাকে পড়ে শোনাতেন। এরপর মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক আসায় আমার জীবনটা অনেক বেশি সহজ হয়েছে।’

মাল্টিমিডিয়া টকিং বুকের উদ্ভাবক ও এটুআই-এর ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ভাস্কর ভট্টাচার্য  নিজেও একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। নিজের আলোহীন জীবনের সংগ্রাম থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি উদ্যোগ নেন মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক তৈরির।

ভাস্কর বলছিলেন, ‘আমার জীবনে লেখা পড়া করতে গিয়ে যে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে, সেখান থেকেই আমার চিন্তায় এসেছিল মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক। আমি চেয়েছিলাম, আমার মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আছে তাঁরা কেউ যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। এটুআই-এর স্বপ্ন হলো- বাংলাদেশের সকল বই পড়ার সুযোগ যেন সবাই পায়। কেউ যেন দৃষ্টিহীনতার কারণে বই পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত