দশদিনে ঢাবির ৪ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:০৪

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। গত দশদিনের ব্যবধানে আত্মহত্যা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, চলতি বছরে ৯ মাসে (মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত) ৮ শিক্ষার্থী এ আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের এমন আত্মহননে উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তরুণ ও মেধাবী এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে একের পর এক অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর ঘটনা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে সহপাঠী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষণ্নতা যখন চেপে ধরে তখন মানুষ মুক্তি চায়। কিন্তু মুক্তি পেতে গিয়ে তারা যে জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তা বুঝে না।পরিবার থেকে শুরু করে বন্ধু-বান্ধবদের ভূমিকাই এ ধরনের আত্মবিধ্বংসী পথ থেকে হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তিকে রক্ষা করতে পারে। আপন মানুষের সান্নিধ্যই আত্মহত্যা রুখতে পারে। আত্মহত্যাকারী ঢাবির ৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে চাকরি না পাওয়ার হতাশা, একাডেমিক চাপ, পারিবারিক অভাব ও প্রেমে ব্যর্থ হওয়ায় মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী হুজাইফা রশিদ গতকাল বৃহস্পতিবার আত্মহত্যা করেছেন। এর আগে গত ১২ নভেম্বর বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ফাহমিদা রেজা সিলভী নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। এর দু’দিন পর ১৪ নভেম্বর আত্মহত্যা করেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লাইলা আঞ্জুমান ইভা। এরপর গত ১৬ নভেম্বর মেহের নিগার দানি নামে ইংরেজি বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। এ নিয়ে গত দশ দিনে বর্তমান ও সাবেক চারজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেল। তাদের মধ্যে তিনজনই নারী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দফতরের পরিচালক ও অ্যাডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক বলেন, আমরা সবাই সচেতন হলে ঘটনাগুলো কমানো সম্ভব। কারো যদি আত্মহত্যা করার মত অবস্থা হয়, তাহলে তার বন্ধুদের উচিত গায়ে হাত রাখা এবং তাকে বুঝানো যে পৃথিবীতে তোমার বেঁচে থাকা কতটা দরকার।

তিনি আরও বলেন, আত্মহত্যাই একমাত্র সমাধান নয়। বরং সেটি নিজেকে একেবারেই শেষ করে ফেলে। তাই বিষণ্নতা থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে এবং তাদের সেদিকে পরিচালিত করতে হবে। বিশেষ করে পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকদের এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

এদিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হঠাৎ আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আয়োজিত আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক -এ সেমিনারে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিশেষজ্ঞরা।

সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর মৃত্যুই স্বস্তিদায়ক নয়। শিক্ষক হিসেবে এটি আমাদের জন্য অনেক বেশি পীড়াদায়ক। এটা তো (আত্মহত্যা) কোনো সমাধান নয় -এ জিনিসটা ছাত্র-ছাত্রীদের বুঝতে হবে। শিক্ষার্থীর পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সবার আন্তরিক প্রচেষ্টাই পারে এ থেকে মুক্তি দিতে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত