৩৬তম বিসিএসের ফল পুনর্নিরীক্ষণের দাবি

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০১৭, ১৬:২৪

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স, মাস্টার্স—দুটোতেই সেরা পাঁচের মধ্যে ছিলেন ফারহানা ইয়াসমিন। ৩৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা তার খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে তার রোল না থাকায় বিষয়টা মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছেন তিনি।

৪ মার্চ (শনিবার) সকালে স্থানীয় একটি পত্রিকায় ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ফারহানা ইয়াসমিন জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতকে ৩.৭৭ এবং স্নাতকোত্তরে ৩.৯৫ পেয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন। ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ননক্যাডারে একটি চাকরিও পেয়েছেন। কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য ৩৬তম পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তার দাবি, কোথাও কোনো ভুল হয়েছে।

কেবল ফারহানা নন, ৩৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন শতাধিক প্রার্থী। তারা সবাই ফলাফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন জানিয়েছেন।

আবেদনকারীদের একজন ০৪৭৩৯৩ রোল নম্বরধারী তাজুল ইসলাম জানান, ৩৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় ০৪৬৯৭৮ থেকে ০৪৭৫২৬ রোল নম্বরের মধ্যে ৬০ জন প্রার্থীর কেউই সাধারণ ক্যাডারের জন্য উত্তীর্ণ হয়নি। আর মাত্র দুজন পেশাগত ক্যাডারের জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন। আবার ০৪৭০৭২ থেকে ০৪৭৫২৬ রোল নম্বরের মধ্যে ৪৭ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু এই ৪৭ জনের কেউই কোনো ক্যাডারের জন্য উত্তীর্ণ হননি। বিষয়টা অস্বাভাবিক। কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটি ঘটতে পারে।

প্রথম শ্রেণির ২ হাজার ১৮০ জন গেজেটেড কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে ২০১৫ সালের ৩১ মে ৩৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ৮ জানুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অনুষ্ঠিত হয়। দুই লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী এতে অংশ নেন। উত্তীর্ণ হন ১৩ হাজার ৬৭৯ জন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁদের লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৩৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ৫ হাজার ৯৯০ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। ১২ মার্চ থেকে তাঁদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে।

ওই ফলাফলে উত্তীর্ণ হননি—এমন শতাধিক প্রার্থীর অভিযোগ, ফলাফল প্রকাশে কোনো ভুল হয়েছে। নয়তো তাদের ফেল করার কথা নয়। ইতিমধ্যে তারা ফলাফল পুনর্বিবেচনার জন্য পিএসসিতে আবেদনও দিয়ে এসেছেন।

এ বিষয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেন, আমরা তাদের আবেদন পেয়েছি। বিষয়টা খতিয়ে দেখা হবে।

০১৬২০৩ রোল নম্বরধারী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা শরীফ উদ্দিন বলেন, অনার্সে আমি ৩.৮৩ আর মাস্টার্সে ৩.৯৬ পেয়েছি। আমার খুব ভালো পরীক্ষা হয়েছিল। ৫৪০ থেকে ৫৫০ নম্বর পাব বলে আমি নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু ফলে দেখলাম আমার রোলই নেই। বিষয়টা অস্বাভাবিক। কোথাও কোনো ভুল হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করে একজন প্রার্থী বলেন, তিনি ৩৩, ৩৪, ৩৫—প্রতিটি বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন। ননক্যাডারের জন্য সুপারিশকৃতও হয়েছেন। এই প্রথম কোনো বিসিএসে তিনি ফেল করলেন। বিষয়টা তার কাছে অস্বাভাবিক।

এ বিষয়ে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছারউদ্দিন বলেন, ওই প্রার্থীদের আবেদন পিএসসি পেয়েছে। এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিকের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, মেধাবী প্রার্থীরা যাতে চাকরির সুযোগ পায়, সে জন্য প্রার্থীদের উত্তরপত্র সঠিকভাবে দেখতে, এমনকি প্রয়োজনে প্রার্থীর উত্তরপত্র পুনরায় দেখতে হবে।