ধরা পড়ছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২২, ১২:২৫

সাহস ডেস্ক

বঙ্গোপসাগরে পশুর এবং বলেশ্বর নদীর মোহনায় নানা ধরনের জাল পেতে রাখায় ইলিশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ঝাঁক বেঁধে ইলিশ নির্বিঘ্নে উপকূলের নদ-নদীতে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে সাগর এবং নদ ও নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য কমে গেছে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও পড়েছে ইলিশের ওপর।

বিচরণ কমে যাওয়ায় জেলেরা জাল ফেললেও কাঙ্খিত ইলিশ ধরতে পড়ছে না। ট্রলারের সক্ষমতা না থাকায় এই অঞ্চলের জেলেরা গভীর সাগরে যেতে পারেনা। ফলে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের পাইকারি মাছের আড়তে ইলিশের সরবারহ অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় জেলে, ট্রলার মালিক, আড়তদার এবং ইলিশ ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, মাছের প্রজননের সময় কেবলমাত্র বাংলাদেশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণায় আপত্তি জানিয়েছেন সুন্দরবন অধ্যুষিত উপকূলীয় বাগেরহাট জেলার জেলেরা। বাগেরহাট অঞ্চলের জেলে ও ট্রলার মালিকেরা বড় বড় টোলিং জাহাজ বন্ধ এবং ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাগরে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ অবরোধের দাবি জানিয়েছে। জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। তবে প্রজনন বাড়াতে নদ ও নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রাখার পক্ষে মৎস্য বিভাগ।

মৎস্য বিভাগ বলছে, সুন্দরবন মাছের অনেক বড় প্রজনন ক্ষেত্র। এজন্য গোটা সুন্দরবনের নদ-নদীতে সারা বছর জুড়ে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা গেলে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের উৎপাদন কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। সুন্দরবন বন বিভাগ জানায়, গোটা সুন্দরবনে সারা বছর মাছ আহরণ বন্ধ রাখতে হলে আগে জেলেদের বিকল্প কর্মস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

দেলোয়ার হোসেন, আলমগীর শেখ, সুজন আলীসহ বেশ ককেজন জেলে জানান, গভীর সাগরে গিয়ে মাছ ধরার মতো তাদের ট্রলারের সক্ষমতা নেই। এ কারণে তারা সাধারণত সাগরের মোহনা এবং সুন্দরবন থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে সাগরের ভেতরে গিয়ে মাছ আহরণ করে। জাল ফেললেও ইলিশ উঠছে না। বড় বড় টোলিং জাহাজ নির্বিচারে সাগর থেকে ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। যে টাকা খরচ করে তারা সাগরে যাচ্ছে তার অর্ধেক টাকার ইলিশ পাচ্ছে না। আর ভারতীয় জেলেরা তাদের অত্যাধুনিক ট্রলার নিয়ে সাগরের বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে ইলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ তাদের।

বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি আবেদ আলী শেখ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সাগরের বিভিন্ন এলাকায় চর জেগে ওঠার কারণে নদ-নদীতে ইলিশ আসছে না। আর আমাদের অঞ্চলের জেলেরা গভীর সাগরে যেতে না পারায় ইলিশ পাচ্ছে না বলেই আড়তে ইলিশ আসছে না। বিগত বছর এই সময়ে প্রতিদিন আড়তে প্রায় ১০০ মণ ইলিশের সরবারহ ছিল। কিন্তু এখন মাত্র ২০ মণ ইলিশ আসছে আড়তে। তিনি বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাগরে বাংলাদেশ অংশ যে সময় অবরোধ চলে তখন ভারতীয় জেলেরা তাদের বড় বড় ট্রলার নিয়ে সাগরের আমাদের অংশে এসে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। সে কারণে বাংলাদেশ ও ভারত একই সময়ে যৌথভাবে অবরোধ দেয়ার দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, ইলিশ সাধারণত ঝাঁক বেঁধে চলে। শূন্য থেকে ১৫ পিপিটি লবণাক্ত পানিতে ইলিশের বিচারণ। পশুর ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় জেলেরা বেহুন্দি জালসহ বিভিন্ন ধরনের জাল পেতে মাছ আহরণ করে। এছাড়া যত্রতত্র নৌযান চলাচল করে। একারণে ইলিশ উপকূলের নদ-নদীতে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। নদ ও নদীতে ইলিশের বিচারণ কমে গেছে। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। সাগর মোহনায় বাঁধাপ্রাপ্ত না হলে বাগেরহাটের বিভিন্ন নদীতে ইলিশের দেখা মিলবে বলে এই মৎস্য কর্মকর্তা জানান।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত