বীমা ব্যবস্থাকে ডিজিটাইজ ও অটোমেশনের আওতায় আনার আহ্বান

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২২, ১৫:৩০

সাহস ডেস্ক

বীমা ব্যবস্থাকে ডিজিটাইজ ও অটোমেশনের আওতায় আনার এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি এ খাতে অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এর ফলে সবার সুবিধার পাশাপাশি সকলে বীমা করায় আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যৌথভাবে জাতীয় বীমা দিবসের আয়োজন করে। আজ মঙ্গলবার (১ মার্চ) সকালে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ‘জাতীয় বীমা দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন তো আমাদের দেশটা ডিজিটাল করে ফেলেছি। সব কিছু এখন ডিজিটালি হয়। কাজেই আমি মনে করি যে বীমা খাতকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড এবং অটোমেশনে আনতে হবে।

তিনি বলেন, এটা যদি ডিজিটালাইজড হয় এবং প্রিমিয়াম দেওয়ার বা কোনো ব্যাপারে সরাসরি যদি কাজ করা যায় বা অনলাইনে করা যায় এটা সকলের জন্য সুবিধা হবে এবং সবাই আগ্রহী হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমি মনে করি বীমা খাতকে আরো আন্তর্ভুক্ত করে এর ব্যাপক প্রচার হওয়া দরকার। প্রচার করতে হবে যেন মানুষ বীমা করে।

তার সরকার গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে ‘ইউনিফাইড মেসিজিং সিষ্টেম (ইউএমপি)’ পদ্ধতি চালু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বীমা নিয়ে মানুষের আস্থা বাড়ানোর আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বীমা সেবা প্রদান করতে হবে। মানুষকে বীমার বিষয়ে আগ্রহী করতে নতুন নতুন পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে। জনগণকে উৎসাহী করতে আরো ব্যাপক প্রচারনা চালাতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই সেবা যদি মানুষ হাতের কাছে পায় তাহলে অনেকেই তার বীমা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারে। সে জন্য সরকারি বেসরকারি বীমা কোম্পানি গুলোকে এক সাথে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, অন্তত আমি এইটুকু বলতে পারি আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা কিন্তু বেসরকারিখাতে অনেক বীমা কোম্পানি দিয়েছি। তাতে যেমন অনেকের ব্যবসা করারও সুযোগ হয়েছে। বীমা ব্যবসায় যেমন সবাই সম্পৃক্ত হয়েছে পাশা পাশি আমাদের দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও হয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, তিনি যে কাজই করেন না কেন সব সময় জনগণের কর্মসংস্থানের বিষয়টি তার মাথায় থাকে। এ জন্যই তিনি প্রথমবার ১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পর বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এই উন্মুক্ত করে দেওয়ার একটাই উদ্দেশ হলো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং সেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, বেকারত্ব দূর হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বীমাকে ‘জনগণের আমানত’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বীমা ব্যবসায়ীদের বীমা দাবি ও অন্যান্য সুবিধা যথাসময়ে কোন ঝামেলা বা হয়রানি ছাড়া গ্রাহকদের পরিশোধের নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো বীমা ব্যবস্থা আমাদের দেশেও চালু হোক-সেটাই আমরা চাই। একটি সিস্টেম তৈরি করতে হবে যাতে ক্লায়েন্টরা তাদের বীমা দাবি সঠিক সময়ে কোনো ঝামেলা ছাড়াই পেতে পারে। এই বিষয়ে আরো সতর্ক থাকতে হবে।

অতীতে পাটের গুদামে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উল্লেখ করে বীমার মিথ্যা দাবির বিষয়ে বীমা কোম্পানিগুলোকে আরো সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এ ধরনের ঘটনা তৈরি পোষাক খাতেও ঘটেছে বলে তার কাছে অভিযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যেত ঘন ঘন শুধু আগুন লাগে, আমার সন্দেহ হলো এবং নজরদারি শুরু করলাম। বাস্তবে দেখা গেল ঘটনা তাই।

গাড়ির থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্সকে প্রতারণামূলক কাজ হিসেবে উল্লেখ করে এটি বন্ধের আহবান আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্সকে বন্ধ করতে বলেছি। এখন এটি বন্ধ করতে হবে কারণ এটি ধোকাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।

সততার সঙ্গে কাজ করলে সবাই লাভবান হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যিনি এটা করছেন কারণ তিনি মনে করেন টাকা বাঁচালাম কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন যে মোটা অংকের টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে সেটা আর মাথায় থাকে না। কিন্তু বীমা করা থাকলে গাড়ি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যে কোন ক্ষেত্রেই আপনি সহযোগিতা পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের সাথে যুক্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও ইন্সুরেন্স জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। এ ছাড়া বক্তব্য দেন আইডিআরএর চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেন এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বীমা খাতে অসামান্য অবদানের জন্য পাঁচ জনকে ‘বীমা পদক’ এবং দুই প্রতিবন্ধি শিশুকে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা পলিসি’ প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে বীমা খাতের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

১৯৬০ সালের ১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। তাই সরকার প্রতিবছর ১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত