২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২০, ০২:১৫

সাহস ডেস্ক

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ২০৫ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ১৬ হাজার ৪১৯ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সোমবার (২ নভেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের ২০১৯-২০ অর্থবছরের কার্যাবলী সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সকালে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ সচিবালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়াল এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হার ছিল ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। টার্গেট ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। কোভিড-১৯ এর মধ্যে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে এটা খুবই আশাব্যঞ্জক এবং ভালো অর্জন।

তিনি বলেন, কোভিডকে মোকাবেলা করেও ৫ দশমিক ২৪ প্রবৃদ্ধি অর্জন সত্যিকার অর্থেই একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার।  কোভিড-১৯ মোকাবেলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২১ টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ২০ হাজার ৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। যেটি আমাদের জিডিপি’র ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে ডিজভার্স হয়েছে ৫৭ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

এই সময়ে আমাদের মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৬৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হয়েছে ৩৬ দশমিক ০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩০ শে জুন থেকে)। রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকার। সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচিতে এই অর্থবছরে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, যেটি বাজেটের ১৪ দশমিক ১ শতাংশ ছিল এবং জিডিপি’র ২ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে দারিদ্রের হার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অতি দরিদ্রের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২০ দশমিক ৫ এবং ১০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

শিল্প খাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নসহ ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদে ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা প্রদান এবং ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা’ চালুর কথা ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, করোনাভাইরাসের মূল প্রভাবটি আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচিতে পড়বে আগামী অর্থবছরে। কারণ, করোনার কারণে প্রভাবটা পড়েছে মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন এই ৪ মাসে (বন্ধ থাকায়)। কাজেই, সত্যিকার অর্থে আগের চলমান অগ্রগতির ধারাটি তখনও নষ্ট হয়নি। আর সাপ্লাই চেইনটা আমাদের সবসময়ই উন্মুক্ত ছিল, লরিগুলো উন্মুক্ত ছিল, কার্গোও বন্ধ হয়নি। কাজেই, এই প্রভাবটা আমরা বুঝবো আগামী বছর (চলতি ২০২০-২১) অর্থ বছরে।

বড় মেগা প্রজেক্টগুলোর বিদেশ থেকে ইনপুট আসা বন্ধ হওয়ায় প্রকল্পের কাজগুলো যথাসময়ে সম্পন্ন করতে না পারায় কাঙ্খিত জিডিপি অর্জিত হয়নি বলেও অপর এক প্রশ্নের উত্তরে জানান সচিব।

মন্ত্রিসভায় ‘গান্ধী আশ্রম (ট্রাষ্টি বোর্ড) আইন, ২০২০’ এবং ‘উন্নয়ন বোর্ড আইনসমূহ (বিলুপ্তকরণ) আইন, ২০২০-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়।

সামরিক সরকারের সময় জারি করা অধ্যাদেশগুলো বাতিলে হাইকোর্টের দেয়া এ সংক্রান্ত রায়ের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এটি (গান্ধী আশ্রম বোর্ড অব ট্রাষ্টি অর্ডিন্যান্স ১৯৭৫) নতুন করে বাংলায় করে নিয়ে আসা হয়েছে। নতুন কোন বিধান এই আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

‘উন্নয়ন বোর্ড’ আইনসমূহ (বিলুপ্তকরণ) আইন, ২০২০ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটাও ১৯৭৬ সালের একটি আইন ছিল ‘দি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ল’স রিপিল অর্ডিন্যান্স’ নামে। সেই অর্ডিন্যান্স বাতিল করে এটিকে আইন দ্বারা বৈধতা প্রদান করা হয়েছে।

সচিব বলেন, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীর প্রাদুর্ভাবজনিত বিপর্যয় থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন এবং এগুলো বাস্তবায়ন-অগ্রগতির বিষয়েও মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ করা হয়েছে।

খন্দকার আনোয়ার বলেন, কোভিডের ক্রমবর্ধমান ওয়েভ নিয়ে আজকেও আলোচনা হয়েছে যেহেতু আমেরিকা এবং ইউরোপে খুবই খারাপ অবস্থা চলছে। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে লকডাউনে চলে গেছে। এসব বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে, আমরা যেভাবে আছি সেটা স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এজন্য সন্তষ্টিতে থাকার কোন কারণ নাই বরং সতর্ক থাকতে হবে কোনভাবেই মাস্ক ছাড়া কেউ যেন ঘরের বাইরে বের না হন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত