রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত পেতে পারে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০১৯, ১৯:৫৫

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত দিতে ফিলিপাইনের ওপর চাপ সৃষ্টির আশ্বাস দিয়েছে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)। 

এপিজি'র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়ম-কানুন শক্তিশালী হলে এই টাকাটা ব্যাংকের বাইরে যেত না। এর থেকেই প্রমাণিত যে, ফিলিপাইনে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের নিয়ম-কানুনে বেশ দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

ফিলিপাইন এপিজির সদস্য দেশ হওয়ায় তাদের উপর চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা রয়েছে এপিজির। তাই তারা ফিলিপাইনের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও ফিলিপাইন দুই উভয়ই এপিজির সংসদ্য দেশ।


রবিবার ৭ জুলাই, অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে দিকনির্দেশনা এবং নীতিপ্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সঙ্গে এপিজির পরিচালক ডেভিড শ্যানন ও মোস্তফা আকবরের বৈঠক হয়। বৈঠক থেকেই তারা বাংলাদেশকে এ আশ্বাস দেন। তথ্যসূত্রে এসব জানা যায়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসানসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।

চুরিকৃত রিজার্ভ অর্থ ফিলিপাইন বাংলাদেশকে ফেরত দিচ্ছে না-এই  বিষয়ে এপিজি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে? জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, "এটা নিয়েও তারা একটু আলাপ করেছেন। এপিজি বলছে, যেসব দেশে মানি লন্ডারিং বিষয়গুলো পুরোপুরি পরিপালন না হয় সেসব দেশ যেমন-ফিলিপাইন; এগুলো বেশি হয়। সে দেশে যদি মানি লন্ডারিং বিষয়টা পরিপালন করা হতো তাহলে টাকাটা ব্যাংকের বাইরে যেত না।"

এই টাকা ফেরতের জন্য আপনারা এপিজির মাধ্যমে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এপিজি দেখবে। কারণ এপিজির প্রত্যেক দেশের জন্য যে সাধারণ ক্রাইটেরিয়াগুলো রয়েছে সেগুলো জাজ করতে গেলে তারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ধরা পড়বে।

সূত্র মতে, চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত আনতে গত ১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে এই মামলা করা হয়।

ইতোপুর্বে এই বছরের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরি বোর্ড সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সভায় মামলার বিভিন্ন বিষয় পরিষদে অবহিত করা হয়। এই সময় পরিচালনা পরিষদ এ বিষয়ে সায় দেয়। পরে ওই মামলা করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুইফট সিস্টেমে ৭০টি ভুয়া পরিশোধ অর্ডার পাঠিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে মোট ১৯২ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার অবৈধভাবে নেয়ায় চেষ্টা করা হয়। এর মধ্যে একটি পরিশোধ অর্ডারে শ্রীলঙ্কায় দুই কোটি ডলার এবং চারটি অর্ডারে আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের একটি শাখার ভুয়া গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হয়ে জুয়ার বাজারে চলে যায়।

শ্রীলঙ্কা থেকে চুরি হওয়া সব অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হলেও ফিলিপাইনে যাওয়া অর্থের মধ্যে মাত্র এক কোটি ৫০ লাখ ডলার দেশটির কোর্টের আদেশের মাধ্যমে ফেরত আনা হয়েছে। বাকি ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডলার আরসিবিসির কাছ থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় উদ্ধারের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সাহস২৪.কম/জুবায়ের/জয়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত