নাটোরে বাড়ছে ফুল বিপণনের পরিধি

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:৩০

সাহস ডেস্ক

শুভেচ্ছা বিনিময়, অভিনন্দন জ্ঞাপন, বিভিন্ন দিবস উদযাপন, সাজসজ্জা, বিয়ের আয়োজন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান-সর্বত্রই ফুলের প্রয়োজন। জীবনধারায় নিত্য সহচর হয়ে উঠেছে ফুল। সবাই এখন ফুল কিনতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তাই নাটোরে ফুল বিপণনের পরিধি ক্রমশ বাড়ছে।

নাটোর জেলা শহরের জিরো পয়েন্টে এখন তিনটি ফুলের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এ পথ অতিক্রম করতে গেলে সহজেই চোখ চলে যায় ফুলের দোকানে। ফুলের বাহারী রঙ আর গন্ধে মুগ্ধ হয় মন। এ ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আর বিয়ের অসংখ্য লগ্নকে উপলক্ষ করে নাটোরে এখন জমজমাট ফুল ব্যবসায়ের মৌসুম।

সাজ ফুল ঘর নাটোরের সবচে’ পুরনো ফুলের দোকান। ফুল ব্যবসায়ী আনজুমান আরার হাতে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যবসায় নিজে ছাড়াও ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে সামলাচ্ছেন, আরো আছে তিন-চারজন কর্মচারী। আর দোকানে শোভা পাচ্ছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, জারবেরা, জিপসী, গ্লাডিওলাস, চেরী, বেলী, গাঁদাসহ রকমারী ফুলের সমাহার।

নাটোরে ফুল ব্যবসায়ের পথিকৃৎ আনজুমান আরার বাবা মোসলেম সরকার। তিনি ছিলেন দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী এবং পরবর্ত্তীতে নাটোর পৌরসভার মালী। নাটোর টাউন পার্কের বাড়িতে গড়ে তোলা ফুল বাগান থেকে তিনি ফুল বিক্রি করতেন। ত্রিশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ের পরিধি বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছিলেন আনজুমান আরার মাও। তিনি দশ বছর আগে ছয় বিঘা জমি ইজারা নিয়ে গড়েছিলেন ফুলের খামার। কিন্তু সফল হননি। 

কারণ সম্পর্কে মেয়ে আনজু বললেন, ফুলের খামার চালু রাখতে অনেক টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন-যা আমাদের ছিল না।

নাটোরের বাগাতিপাড়া ও লালপুরে সীমিত আকারে ফুল চাষ হলেও প্রায় সব ফুল আসে যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী থেকে। প্রতিদিন চাহিদা মোতাবেক ফুল আসে বলে জানালেন অপর ফুল ব্যবসায়ী আনজুমান আরার ভাই আনজু মনোয়ারা নার্সারী এন্ড ফুল বিপণীর মালিক লোকমান সরদার।

শুধু কাঁচা ফুলই বিক্রি নয়, বিক্রি হচ্ছে তোরা, ঝুড়ি, বুকেট ইত্যাদি। বিয়ে বা যে কোন অনুষ্ঠানের স্টেজ, বিয়ের গাড়ি ও গেট, বাসর সাজানোর কাজও করছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। সারা বছর ধরে ফুলের বিপণন হলেও ফেব্রুয়ারি মাস সবচে’ ব্যস্ত সময়। এমাসে বিয়ের সংখ্যা বেশি, সরস্বতী পূজা, আছে একুশে ফেব্রুয়ারিসহ পহেলা ফাল্গুন আর ভালবাসা দিবস। অন্য সময়ের চেয়ে এখন ব্যবসায় কয়েক গুণ বেশি বলে জানালেন অপর ফুল ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন।

ফুল ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপচারিতায় জানা গেল দিনে প্রত্যেকের বিক্রি ২০ হাজার টাকার কম না। তিন-চারজন কর্মচারীর সহযোগিতায় তাঁরা ব্যবসায় পরিচালনা করছেন। সব ব্যবসায়ীর পরিবারের ভরন-পোষণ চলছে এ একটিমাত্র ব্যবসায়কে উপলক্ষ করে।

ফুলের দোকানের ক্রেতা নাটোর নবাব সিরাজ উদ-দৌলা সরকারী কলেজের ফিসারিজের শিক্ষার্থী তমা রাণী দাস জানান, বাড়ীতে পূজার ফুল কিনছি, নিয়মিতই কিনি। 

ফুলের ডালি কিনছিল ছোট্ট দুই বোন আলভি-মুনতাহা। তারা জানায়, আব্বু-আম্মুর বিয়ে বার্ষিকীতে প্রতিবছর আমাদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাই।

সফল ফুল ব্যবসায়ী আনজুমান আরা বলেন, আগে বাড়ী থেকে ফুল বা তোড়া বিক্রি করতাম, এখন বিভিন্ন অর্ডারে ফুলের সামগ্রী বিক্রি করি, সাজসজ্জার কাজ করি। নাটোরে বিভিন্ন উপলক্ষে অসংখ্য ক্রেতা তৈরির হয়েছে। 

ব্যবসায়ের সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেক দূর-যশোর থেকে ফুল আনতে হয়। কাঁচা ফুল তিন দিনের বেশী ভালো থাকে না। অবিক্রিত অনেক ফুল নস্ট হয়। নাটোরে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হলে চাহিদার সম পরিমাণ ফুলেই দোকান চলতো, নস্টের ক্ষতির হাত থেকে আমরা বাঁচতাম।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, নাটোরের বাগাতিপাড়া ও লালপুরে ২০১২ সালে সীমিত আকারে ফুল চাষ শুরু হয়েছিল। এখন চাষাবাদের এলাকা খানিকটা বেড়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষের পরিধি বাড়াতে কৃষি বিভাগের তৎপরতা জোরদার করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত