নতুন সক্ষমতায় মংলা বন্দর

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫৮

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামে। দ্বিতীয়টির অবস্থায় মংলায়। প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন নতুন পণ্যবাহী জাহাজ। পণ্য খালাশও হচ্ছে দ্রুতগতিতে। মংলা বন্দরকে আরো সক্ষমশালী করতে সরকার নিয়েছে নানান উদ্যোগ। দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মংলার উন্নয়নে ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

এর সঙ্গে বন্দর থেকে রাজস্ব আহরণে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বাড়ছে বিদেশী জাহাজের আগমন ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মংলা বন্দরে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) এ হার বেড়ে প্রায় ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া এক বছরের ব্যবধানে বন্দরে কনটেইনারবাহী জাহাজ আগমনের সংখ্যা বেড়েছে আড়াই গুণ।

বন্দরের উন্নয়নে গৃহীত নতুন ১০ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পশুর চ্যানেলের রামপাল পর্যন্ত ড্রেজিং, রুজভেল্ট জেটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (ভিটিএম আইএস), আউটার বারে ড্রেজিং, টাগবোট সংগ্রহ, সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, মোবাইল হারবার ক্রেন সংগ্রহ, স্ট্র্যাটেজিক মাস্টারপ্ল্যান, হারবার চ্যানেলের ফুড সাইলো এলাকায় ড্রেজিং ও দুটি অসম্পূর্ণ জেটি নির্মাণ। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ জাহাজ চলাচল নির্বিঘ্ন হবে, রুজভেল্ট জেটির সক্ষমতা বাড়বে, আগত ও বহির্গামী জাহাজের নিরাপদ পাইলটিং ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে, বন্দর চ্যানেলে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ প্রবেশ করতে পারবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য বোঝাই ও খালাস সম্পন্ন করা যাবে, জাহাজে সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো যাবে, একটি হালনাগাদ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা যাবে, জাহাজের আগমন ও নির্গমনের পথ সুগম করা যাবে। সর্বোপরি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে বন্দরের সক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একসময়ের লোকসানি প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বর্তমানে এ বন্দরে ছয়টি নিজস্ব জেটি, সাতটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জেটি ও ২২টি অ্যাংকরেজের মাধ্যমে ৩৫টি জাহাজ একসঙ্গে হ্যান্ডলিং করা সম্ভব। চারটি ট্রানজিট শেড, দুটি ওয়্যারহাউজ, চারটি কনটেইনার ইয়ার্ড, দুটি পার্কিং ইয়ার্ডের মাধ্যমে মংলা বন্দরে বছরে ১ কোটি টন, ৭০ হাজার টিইইউ কনটেইনার ও ২০ হাজারের বেশি গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বন্দরে বিদেশী জাহাজ এসেছিল ২৮২টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬২৩। একই সঙ্গে বন্দরে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পায় ২২৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৭৮৪টি। এ সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯৭ লাখ ১৬ হাজার টন। রাজস্ব আহরণ হয় ২৭৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বন্দরের নিট মুনাফা ছিল সাড়ে ৭১ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০৯ কোটি টাকা।

বন্দর কর্তৃপক্ষের সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে মংলা বন্দর দিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চিংড়ি, ক্লে টাইলস, চামড়াসহ অন্যান্য সাধারণ পণ্য রফতানি হচ্ছে। আর আমদানি হচ্ছে খাদ্যশস্য, সার, ক্লিংকার, মেশিনারি, রিকন্ডিশনড গাড়ি, এলপি গ্যাস, কয়লা, লাইমস্টোন, পাম অয়েল, কাঠের লগ, পাথর ইত্যাদি।

১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মংলা বন্দরের যাত্রা হয়। প্রথমে খুলনার চালনা থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বন্দরটি গড়ে ওঠে। কিন্তু সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে অধিক সুবিধাজনক অবস্থান হওয়ায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মংলায় স্থানান্তর করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত