'প্রিয়তমেষু' -হতে পারতো অন্যতম শীর্ষ উপন্যাস

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৩২

হুমায়ূন আহমেদের যে বই নিয়ে তুলনামূলক কম আলোচনা হয় অথচ যে বইটি লেখকের শীর্ষ উপন্যাসের তালিকায় স্থান পাবার কথা ছিল তা হল- প্রিয়তমেষু। শুধুমাত্র জমজমাট শিরোনামের জোরে 'হলুদ হিমু কালো র‍্যাব', 'হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী' কিংবা 'হিমু রিমান্ডে'র মতো ঝালমুড়ি টাইপ বই বইমেলা মাতিয়ে ফেলে আর এমন একটি শক্তিশালী বই নিয়ে কোনোদিন চায়ের কাপে তুমুল আলোচনা হয় না। সামাজিকতার দায় থেকে প্রত্যেক কবি সাহিত্যিককের উচিত সমাজের অসংগতি কিংবা ট্যাবু বিষয় নিয়ে লেখা। লেখক হুমায়ূন আহমেদ 'প্রিয়তমেষু' বইয়ে এমন-ই এক নোংরা ও নিষিদ্ধ বিষয়কে বেছে নিয়েছেন। প্রিয়তমেষু নিছক কোনো গল্প নয়। প্রেম ভালোবাসা, মানসিক টানাপোড়ন আর ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের পাশাপাশি এখানে উঠে এসেছে পত্রিকা খুললেই নিত্যদিন পাওয়া ও গা সয়ে যাওয়া(!) ধর্ষণ নামক সামাজিক ব্যাধির কথা।

অনেকদিন আগে এক পত্রিকার শিরোনাম পড়েছিলাম '২০১৭' সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ধর্ষণ! আহা.. রেকর্ড করার মতো আর কোনো বিষয় অবশিষ্ট ছিলনা! এই রেকর্ড সংখ্যাটা ছিল প্রায় চার হাজারের কাছাকাছি। কী ভয়াবহ একটা ব্যাপার! অথচ এই সংখ্যাটা কেবল দায়েরকৃত মামলাকে রিপ্রেজেন্ট করে। চক্ষুলজ্জায় আর আদালতে গিয়ে দ্বিতীয়-তৃতীয় বারের মতো ধর্ষিত হবার ভয়ে অধিকাংশ নারীই ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কিংবা রেপের ঘটনা চেপে যায়। কারণ সমাজ ধর্ষণকে জায়েজ করার জন্য রীতিমতো ওঁৎ পেতে থাকে। আমাদের সমাজে ধর্ষক বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বরং ধর্ষণের ভিকটিমকে অচ্ছুৎ বলে নানাভাবে ছিঃ ছোঃ করা হয়। এর বিপরীত চিত্র সত্যি হলে সকল রেপ ভিক্টিমরা সামনে এগিয়ে এসে বিচার চাইতো আর তখন দেখা যেতো ধর্ষণের রেকর্ড সংখ্যাটা চার হাজারের দিগুণ তিনগুণে গিয়ে দাঁড়িয়েছে!

তথাকথিত XY ক্রোমোজমের হোমো স্যাপিয়েন্সরা সম অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলেই বাসে সংরক্ষিত মহিলা সিটের উদাহরণ টানে। ওদের ঝুলিতে ওই একখানা মাত্র উদাহরণ আছে কিনা! তবে ওদের বলি, একজন নারীকে পাবলিক বাসে চলতে গেলে কতজন পারভার্ট লোকের স্পর্শ বাঁচিয়ে চলতে হয় সেটা জানেন? এজন্যই আসলে ইক্যুইটি মেইনটেইন করতে হলে ওই সংরক্ষিত নারী আসনের প্রয়োজন। ইদানীং তো আবার পাবলিক বাস পরিণত হয়েছে ধর্ষণশালায়! এতো অন্যায়ের বিচার কে করবে!

তবে কিনা নারীরা তো বাড়িতেও নিরাপদ নয়। মামা-চাচা কিংবা দুলাভাই নামক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে পুরুষেরা ইচ্ছেমতো এবিউজ করছে সংসারের "মেয়েমানুষ" নামক ভোগ্যপণ্যদের। একবারে দুগ্ধপোষ্য শিশুরাও ওদের নোংরা ছোঁয়াচ থেকে নিস্তার পায়না। আক্ষেপের ব্যাপারটা হলো- অতি আপনজনের তথাকথিত ভালোমানুষি মুখোশ সবার সামনে উন্মোচন করার সাহস বা রুচি সবার থাকেনা। নিশাতের মতো হাজারো শিক্ষিত মেয়েও নীরবে সয়ে যায় ওদের অত্যাচার। তবু মুখ ফুটে প্রতিবাদ করেনা। তা না হলে সংসারের বাঁধন আলগা হয়ে যাবে যে!

আর যদি পুষ্পের মতো অতি সাধারণ মেয়েরা একদিন সাহস সঞ্চয় করে বিচার চাইতে আসে তবে তাদের পাশে কিন্তু সবচাইতে আপনজন স্বামীকেও পাওয়া যায়না। সমাজের লোকলজ্জার ভয়ে ওরা ঘরে দুয়ার এটে বসে থাকে!

প্রিয়তমেষু গল্পের চরিত্রদের খুঁজলে বাস্তব সমাজেই ভুরিভুরি পাওয়া যাবে। লেখক যেন আশেপাশের কোনো জায়গা থেকেই ধরেবেঁধে উপন্যাসে ওদের ঢুকিয়ে দিয়েছেন সমাজের গালে চপেটাঘাত করার জন্য। তবু যদি সমাজের বোধোদয় ঘটে!

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত