মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং বাংলা রঙ্গমঞ্চ

প্রকাশ : ২৯ জুন ২০১৯, ১৩:০৩

যতদিন বাংলা ভাষার, বাংলা নাটকের অস্তিত্ব থাকবে ততদিন বাংলা নাটকের পিতৃপুরুষ রূপে উচ্চারিত হবে মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাম। ধনাঢ্য জমিদারদের বাগানবাড়ি থেকে বাংলা থিয়েটারকে উদ্ধার করে যথার্থ গণতান্ত্রিক চেতনায় প্রতিষ্ঠিত করা ছিল মধুসূদনের নাট্যাদর্শ। তিনি তাঁর সব নাটকেই প্রাচীন সামন্ততন্ত্র লালিত সমাজ ব্যবস্থার অমানবিক দিকগুলোকে উন্মোচিত করেছেন। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি যশোরের সাগরদাঁড়ির দত্ত বাড়ির জমিদার রাজনারায়ণ দত্তের ঔরসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মধুসূদন। মা জাহ্নবী দেবী। শিশুকালে মধুসূদনের হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁদের বাড়ীর চণ্ডীমণ্ডপে। এরপর তিনি তাঁর গ্রামের নিকটবর্তী শেখপুরা গ্রামের এক মৌলভী শিক্ষকের নিকট ফার্সী শিখতে যেতেন। চণ্ডীমণ্ডপে শিক্ষা ও মৌলভী শিক্ষকের শিক্ষায় তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি রচিত হয়েছিল। ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে মধুসূদন কলকাতার হিন্দু কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৪১ সাল পর্যন্ত সেখানে ইংরেজী ও ফরাসী অধ্যয়ন করেন। এসময় খিদিরপুরে তাঁদের নিজের বাড়িতেই তিনি বসবাস করতেন। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করা এ মানুষটির জীবন ছিল বিচিত্র। শেলী, কিটস, বায়রনের মতো বড় কবি হওয়ার অদম্য বাসনা তাঁকে ঘিরে রেখেছিল সৃষ্টিশীলতার অদ্ভুত এক উন্মাদনায়। অবশেষে শেষ বেলায় মাতৃভূমি- মাতৃভাষার প্রেমে তিনি মনের তরী ভিড়িয়েছিলেন কলকল ছলছল রবে বয়ে চলা কপোতাক্ষ নদের তীরে। এখন সারাদেশ থেকে কাব্যপ্রেমী ও ভ্রমণবিলাসী মানুষ সাগরদাঁড়িতে আসেন মহাকবির জন্মভূমি দর্শন করতে। পল্লীকবি জসীমউদ্দীন সাগরদাঁড়িতে এসে মধুপ্রেমে একবার বলেছিলেন, "সাগরদাঁড়ির ধুলি গায়ে মেখে পুণ্যস্নান করলাম।"

মধুসূদন কখনও বাংলা সাহিত্যের জন্য এরকম দৃপ্ত হাতে কলম ধরবেন, বিষয়টি তাঁর অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও কল্পনা করেন নি। সেই আদিযুগের বাংলা ভাষার প্রতি মধুসূদনের বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। প্যারিচাঁদ মিত্র ওরফে টেকচাঁদ ঠাকুরের চলিত ভাষায় লেখা প্রথম বাংলা উপন্যাস পাঠ করার পর মধুসূদন মন্তব্য করেছিলেন "এ রকম ভাষায় জেলেরা কথা বলে, যদি না তুমি সংস্কৃত থেকে ভাষা গ্রহণ করো।" প্রবল আত্মবিশ্বাসে মধুসূদন বলেছিলেন, "দেখবেন আমি যে ভাষা সৃষ্টি করবো তা-ই চিরস্থায়ী হবে"। উপস্থিত সকলে সেদিন হেসেছিলেন কারণ তারা জানতেন সেকালের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি মধুসূদনের কিছুমাত্র অনুরাগ ছিল না। তাঁর সৃজন পিয়াসী মননকে তখন দখল করে রেখেছে ইংরেজি ভাষা আর শেক্সপীয়ার, বায়রন, শেলীর মতো হওয়ার স্বপ্ন। তাঁর মন উচাটন হয়ে থেকেছে শেক্সপীয়ার, বায়রনের দেশে পা রাখার প্রবল বাসনায়। সেকালের হিন্দু সমাজের রক্ষণশীলতার বাধার মুখে বিলেত যাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। সমাজপতিদের রোষানলে পড়ে জাতিচ্যুত হতে হত। সেই বাধা অতিক্রম করতে উনিশ বছর বয়সে তিনি খৃস্ট ধর্ম গ্রহণ করবেন বলে মনস্থির করেন। আর এভাবেই ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী মধুসূদন খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হন। তাঁর নামকরণ হয় মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এসময় তিনি হিন্দু কলেজ পরিত্যাগ করে শিবপুরের বিশপস্ কলেজে ভর্তি হন এবং চার বৎসর সেখানে অধ্যয়ন করেন। এখানে অধ্যয়নকালে তিনি গ্রীক, ল্যাটিন, ফরাসী, হিব্রু প্রভৃতি ভাষা আয়ত্ব করেন। খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করায় মধুসূদন দত্ত পিতার অর্থ সাহায্য থেকে বঞ্চিত হন। আত্মীয় পরিজন পরিত্যক্ত হয়ে তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। তারপর ১৮৪৭-এর শেষের দিকে মধুসূদন এক তামিল সহপাঠীর সাহায্যে মাদ্রাজ চলে গেলেন। মধুসূদন সেই আট বছর মাদ্রাজ প্রবাসকালে কলকাতায় আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে কোন যোগাযোগই রাখেন নি। এমনকি পিতা, মাতার মৃত্যু সংবাদও পান নি। সকলেই মধুসূদনকে মৃত বলে ধরে নিয়েছিলেন। মাদ্রাজে প্রথমে তিনি ‘মেল অরফ্যান অ্যাসাইলাম’ বিদ্যালয়ে ইংরেজী শিক্ষকের চাকরি গ্রহণ করেন। পরে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সী কলেজে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। ১৮৪৯ সালে 'মেল অরফ্যান অ্যাসাইলাম’ -এ শিক্ষকতা করার সময় তিনি রেবেকা ম্যাক্টাভিলকে বিবাহ করেন। কয়েকবছর পরে ১৮৫৫ সালে রেবেকার সঙ্গে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। মধুসূদন তখন দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক । একই বছরের ডিসেম্বরে ফরাসী নারী এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়াকে বিবাহ করেন। মাদ্রাজ প্রবাসকালে তাঁর সাহিত্য প্রতিভা উজ্জ্বীবিত হয়ে ওঠে। এই সময়ে তিনি লিখলেন 'ক্যাপটিভ লেডি' ও 'ভিশনস্ অব দ্য পাস্ট'। এখানে তিনি কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। তাঁর ইংরেজি ভাষায় প্রথম নাটক 'Riza' (Empress of India) এখান থেকেই প্রকাশিত হয়।

মাদ্রাজ প্রবাসকালে মধুসূদনের প্রকাশিত গ্রন্থ 'ক্যাপটিভ লেডি' পড়েন ভারতপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন। তাঁর সাহিত্যকৃতিতে মুগ্ধ হয়ে শিক্ষাবিদ বেথুন মত প্রকাশ করেন যে, "এরকম সাহিত্যপ্রতিভা নিজ মাতৃভাষায় নিয়োজিত হলে সেই সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে"। বাল্যবন্ধু গৌরদাস বসাক বেথুনের প্রশংসাবাণীটি মধুসূদনকে জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন। তিনি আরও লিখলেন, "আমরা ইংরেজি সাহিত্যে আর একজন বায়রন কিংবা শেলি চাই না, আমরা চাই বাংলা সাহিত্যে একজন বায়রন কিংবা শেলি"। বেথুনের প্রশংসাবাণী ও গৌরদাসের পত্র মধুসুদনকে বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চার প্রত্যয় জাগিয়ে তুলেছিল। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি সকালে প্রায় রিক্ত হাতে মধুসূদন কলকাতায় ফিরে এলেন। মধুসূদনের বয়স তখন বত্রিশ বছর। বন্ধুদের সহায়তায় তিনি পুলিশ কোর্টে কেরাণির পদে একটি কাজ পেলেন।

বাংলা নাটকের জগতে আকস্মিক ভাবেই মাইকেল মধুসূদন দত্তের আবির্ভাব। এর আগে কখনোই তিনি বাংলা নাটকের অভিনয় দেখেন নি। বাংলা নাট্যকার রূপে মধুসূদন দত্তের আত্মপ্রকাশ ও অবদানের বিষয়ে আলোচনায় যাবার আগে বাঙালি সমাজে থিয়েটারের উদ্ভব ও বিকাশের বিষয়টি জানা প্রয়োজন। ইংরেজ সাহেবরা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্মচারীদের বিনোদনের জন্য এদেশে থিয়েটার আমদানি করেছিল। পলাশি যুদ্ধের পর ইংরেজরা তখন এদেশে পাকাপোক্ত হয়ে বসেছে। কলকাতাকে নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সব রকমের উদ্যোগ নেয়া শুরু হয়েছে। সে সময় লালবাজারের কাছে ইংরেজরা ‘প্লে হাউস’ প্রতিষ্ঠা করে। বাংলা থিয়েটারের ধারণাটি তখনও কারো কল্পনাতে ছিল না। বাংলা গদ্য সাহিত্যের সূচনাই হয়েছে আরও একশো বছর পরে। আঠারো শতকের শেষের দিকে গেরেসিম লেবেডেফ নামে একজন রুশ পর্যটক ভারতে আসেন। গোলকনাথ দাসের সহযোগিতা এবং নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় লেবেডেফ বাংলা ভাষা আয়ত্ব করেছিলেন। তিনিই ১৭৯৫ খৃষ্টাব্দে ‘দ্য ডিসগাইস’ নামের ইংরেজি প্রহসনটির বাংলা অনুবাদ করেন। তারপর তাঁর ভাষাশিক্ষক গোলকনাথ দাসের সহায়তায় নাটক আকারে বাঙালি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দিয়ে অভিনয় করিয়েছিলেন। কলকাতায় এখনকার এজরা স্ট্রীটের কাছে ডুমতলায় অস্থায়ী মঞ্চ বেঁধে লেবেডফের অনূদিত 'কাল্পনিক সঙ বদল' নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকের অভিনয়ই হল ইতিহাসে প্রথম বাংলা নাট্যাভিনয়। তবে লেবেডফের এই নাটক ইতিহাসে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়েই রয়ে গেছে। এই নাটক মঞ্চায়ন পরবর্তিকালে অভিনয়ের ইতিহাসে কোন ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করতে পারে নি।

এরপর দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ে কোন মৌলিক বাংলা নাটক অভিনয়ের ইতিহাস জানা যায় না। ১৮৫৭ সালে অভিনয় উপযোগী প্রথম মৌলিক বাংলা নাটক রচনা করেন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত রামনারায়ণ তর্করত্ন। নাটকটির নাম ‘কুলিন কুল সর্বস্ব’। সে সময়ে রংপুরের জমিদার কৌলিন্যপ্রথা বিরোধী নাটক লেখার প্রতিযোগিতা আহ্বান করেছিলেন। এই সুযোগেই সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত রামনারায়ণ তর্করত্ন দুটি নাটক ‘কুলিন কুল সর্বস্ব’ ও ‘নবনাটক’ রচনা করে পুরস্কৃত হন।

১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ কলকাতায় বাংলা ভাষায় নাট্যাভিনয়ের সংবাদ জানা যায়। গোরা সাহেবদের অনুকরণে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে কলকাতার ধনাঢ্য জমিদারবাবুরা তাদের বাগানবাড়িতে শখের থিয়েটার খোলেন। কলকাতায় তখন নাটক অভিনয় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সময় পাইকপাড়ার রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ ও প্রতাপচন্দ্র সিংহ তাদের বেলগাছিয়া বাগানবাড়িতে ‘বেলগাছিয়া নাট্যশালা’র পত্তন করেন। এই বেলগাছিয়া নাট্যশালার হাত ধরেই বাংলা নাটকের নবযুগের সূচনা হয়েছিল। এদের উদ্যোগেই প্রথম সার্থক বাংলা নাট্যাভিনয় শুরু হয়। এখানেই বাংলা নাট্য সাহিত্য ছোঁয়া পেল মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনন্য প্রতিভার।

রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘রত্নাবলী’ নাটকটি বেলগাছিয়া নাট্যশালায় প্রথম অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হয়। নাট্যানুষ্ঠানে অনেক উচ্চপদস্থ ইংরেজ দর্শক নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন। নাট্যাভিনয়ের উদ্যোক্তা পাইকপাড়ার রাজারা ইংরেজ দর্শকদের জন্য ‘রত্নাবলী’র ইংরেজী অনুবাদ করাতে চাইলেন। মধুসূদনের বাল্যবন্ধু গৌরদাস বসাক ছিলেন বেলগাছিয়া থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত। তারই পরামর্শে পাইকপাড়ার রাজাদের ইচ্ছায় ‘রত্নাবলী’ নাটকের অনুবাদের দায়িত্ব পেলেন মধুসূদন। মধুসূদনের ইংরেজি অনুবাদ উচ্চপ্রশংসিত হলো। ‘রত্নাবলী’ নাটকের ইংরেজী অনুবাদের মধ্য দিয়েই তিনি কলকাতার অভিজাত মহলে সুপরিচিত হলেন। বলা যেতে পারে এর মধ্য দিয়েই মধুসূদনের বাংলা সাহিত্য সাধনার যথার্থ সূচনা হয়। 'রত্নাবলী’ নাটকের রিহার্সালে প্রায়ই উপস্থিত থাকতেন মধুসূদন স্বয়ং। রিহার্সাল দেখেই হতাশ হয়েছিলেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বন্ধু গৌরদাস বসাককে তিনি লিখেছিলেন “What a pity, the Rajas should have spent such a lot of money on such a miserable Play”

বাংলা গদ্যসাহিত্যের সেই প্রথম যুগে ভাষার দৈন্য উপলব্ধি করলেন মধুসূদন। মায়ের ভাষাকে সমৃদ্ধ করার প্রত্যয়ে কলম ধরলেন তিনি। রচনা করলেন বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর বেলগাছিয়া থিয়েটারে ‘শর্মিষ্ঠা’ অভিনীত হল। তারপর পাইকপাড়ার রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় নাটকটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। 'শর্মিষ্ঠা' নাটকের কাহিনি মহাভারতের আদিপর্বের 'যযাতি-দেবযানী' উপাখ্যান থেকে নেয়া হয়েছে। মধুসূদন শুধু একটি নাটকই লিখলেন না, প্রথম বাংলাভাষায় সাহিত্য রচনার মধ্য দিয়ে আধুনিক বাংলা নাট্যসাহিত্যেরও শুভসূচনা করলেন।

তারপর একই বছরে তিনি দুখানি প্রহসন রচনা করলেন -'একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’। 'একেই কি বলে সভ্যতা' প্রহসনটির মাধ্যমে তিনি উনিশ শতকের মূল্যবোধহীন অধঃপতিত সমাজের চেহারা, ইংরেজি শিক্ষিত যুবসমাজের ভ্রষ্টাচার ও হিন্দুত্বের ভণ্ডামিকে শাণিত শ্লেষ ও ব্যঙ্গে আঘাত করলেন। দ্বিতীয় প্রহসন ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ তে প্রাচীন ব্রাহ্মণ সমাজপতিদের লাম্পট্য ও কদাচার ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেকালের সমাজ, ব্যক্তি তাদের অনৈতিকতা ও ভ্রষ্টাচারকে তিনি ব্যঙ্গ-কৌতুকের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছেন। প্রহসন দুটির নাট্যভাষা চলিত বাংলা। গভীর পর্যবেক্ষণে বোঝা যায় বাংলা নাটকে সমকালীন সমাজবাস্তবতার চিত্র উন্মোচনের ক্ষেত্রে মধুসূদনই হলেন পথ প্রদর্শক। পরবর্তী সময়ে দীনবন্ধু মিত্র রচনা করেন 'সধবার একাদশী' প্রহসন। তাঁর রচনায় তিনি মধুসূদনের নাট্যভাষারই অনুসরণ করেছিলেন।

সাহিত্যে নবতর যুগস্রষ্টা মাইকেল মধুসূদন ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে গ্রিক পুরাণের অনুপ্রেরণা নিয়ে রচনা করেন তাঁর দ্বিতীয় নাটক 'পদ্মাবতী'। এ নাটকেই তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ইংরেজি কাব্যের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার এটাই প্রথম এবং এর ফলে তিনি বাংলা কাব্যকে ছন্দের বন্ধন থেকে মুক্তি দেন। গ্রীক পুরাণের আখ্যান ‘আপল অফ ডিসকর্ড’ এর ছায়া অবলম্বনে ‘পদ্মাবতী’ রচিত হয়েছিল । ‘পদ্মাবতী’ নাটকের মধ্য দিয়ে বাংলা নাটকে অমিত্রাক্ষর ছন্দের সার্থক প্রয়োগের ব্যাপারেও পথ-প্রদর্শক হয়ে রইলেন মধুসূদন। এর পরের বছর ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে মধুসূদন রচনা করলেন ঐতিহাসিক নাটক 'কৃষ্ণকুমারী'। বাংলাসাহিত্যের অধিকাংশ আলোচকগণ 'কৃষ্ণকুমারী'কেই মধুসূদনের শ্রেষ্ঠ নাটক বলে অভিহিত করেছেন। এটি বাংলা নাট্যসাহিত্যের প্রথম ঐতিহাসিক নাটকও বটে। মধুসূদন তাঁর কৃষ্ণকুমারীর আখ্যান চয়ন করেছিলেন কর্ণেল টডের বিখ্যাত ‘এনালস অ্যান্ড এনটিক্স অফ রাজস্থান’ গ্রন্থ থেকে।

মধুসূদন নির্মাণ করেছিলেন আধুনিক নাট্যভাষা। সত্যিকার অর্থে এরপর থেকেই বাংলা নাটকে প্রাচীন সংস্কৃত নাট্যরীতির অবসান হয়ে গেল। তাইতো আমরা দেখতে পাই, মানবীয় অধিকার বঞ্চিতা শর্মিষ্ঠা তাঁর নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র হন। কৃষ্ণকুমারী নাটকে রাজপুত রাজাদের বীরত্বের কীর্তন না করে তিনি তাদের পারস্পরিক কলহ, ঈর্ষা, নারী লোলুপতার সামন্ততান্ত্রিক অনাচারকে তুলে ধরেন নাটকের কাহিনিতে। এবং ‘মেঘনাদ বধ’ মহাকাব্যে পৌরাণিক কাহিনী হয়ে ওঠে গৌণ। সেখানে মুখ্য হয়ে ওঠে নিজ জন্মভূমি রক্ষার প্রতিজ্ঞা, দেশপ্রেম। বাংলা নাটকে দেশপ্রেমের চেতনার প্রথম পাঠ শুরু হল মধুসূদনের নাটকেই । ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্যে আমরা পেলাম দেশপ্রেমের উচ্চারণ "জন্মভূমি রক্ষা হেতু কে ডরে মরিতে?" মধুসূদন তাঁর 'মেঘনাদ বধ কাব্য' নাটকাকারে লেখেন নি। এর নাট্যরূপান্তর বেঙ্গল থিয়েটারে প্রথম অভিনীত হয় ১৮৭৫ সালের ৬ই মার্চ। ঐতিহাসিক সে প্রযোজনাটিতে প্রমীলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ইতিহাসখ্যাত অভিনেত্রী নটী বিনোদিনী ।

মধুসূদন শুধু বাংলা মঞ্চের জন্য সার্থক নাটক রচনা করেই থেমে থাকেন নি। বাংলা থিয়েটারের সেই ঊষালগ্নে থিয়েটার পরিচালনায় আধুনিকতা আনা বা সংস্কারের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন নিরলস। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ অভিনয়ের মধ্যদিয়ে পথ চলা শুরু করেছিল আমাদের প্রথম সাধারণ রঙ্গালয়। জমিদারদের বাগানবাড়ি থেকে সরিয়ে নিয়ে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলো থিয়েটারের দরজা। টিকিট কিনে নাটক দেখার শুরু সেদিন থেকেই। পরের বছর গোড়ার দিকে ধনকুবের আশুতোষ দেব ওরফে ছাতু বাবুর দৌহিত্র শরৎচন্দ্র ঘোষ ৯ নম্বর বিডন স্ট্রীটে প্রতিষ্ঠা করলেন কলকাতার প্রথম স্থায়ী নাট্যশালা 'বেঙ্গল থিয়েটার'। সুচারুভাবে থিয়েটার পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হল। এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখেরা।

শরৎচন্দ্র ঘোষ তখন মধুসূদনকে বেঙ্গল থিয়েটারের জন্য নাটক লিখে দিতে অনুরোধ করলেন। মধুসূদন সম্মত হলেন দুটি নাটক লিখে দিতে। শর্ত জুড়ে দিলেন, "নাটকে যে নারী চরিত্রগুলি রয়েছে সেগুলো নারী অভিনেত্রী দিয়েই অভিনয় করাতে হবে"। এর আগে নাটকে নারী চরিত্রে পুরুষ অভিনেতারাই অভিনয় করতেন। ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকে বা সাধারণ রঙ্গালয়ের প্রথম নাটক ‘নীলদর্পণ’এ পুরুষ অভিনেতারাই নারী চরিত্রগুলি রূপায়িত করেছিলেন। থিয়েটারে অভিনেত্রী নিয়োগের প্রস্তাবে বেঙ্গল থিয়েটারের উপদেষ্টা কমিটির সভায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো মানুষও বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু মধুসূদন ছিলেন অনড়। অভিনেত্রী নিয়োগের প্রস্তাব গৃহীত হলে ক্রুদ্ধ বিদ্যাসাগর থিয়েটারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন করেন। সেকালের রক্ষণশীল সমাজ ভাবতেই পারতো না যে থিয়েটারে মেয়েরা অভিনয় করবে। পুরুষ অভিনেতারাও সমাজে সম্মানের স্থানে ছিলেন না। মেয়েদের গান গাওয়াও নিষিদ্ধ ছিল। সেই সমাজে থিয়েটারে অভিনেত্রী নিয়োগের পক্ষে অবস্থান নেয়া সন্দেহাতীতভাবে এক অগ্রবর্তী ভাবনা ছিল ।

১৭৯৫ সালে লেবেডফের থিয়েটারের জন্যে গণিকাপল্লী থেকে অভিনেত্রী সংগৃহীত হয়েছিল। ১৮৩৫ সালে শ্যামবাজারে নবীনচন্দ্র বসুর বাড়িতে যে শখের থিয়েটার হয় তাতেও নারী চরিত্রে কয়েকজন বারাঙ্গনা কন্যা অভিনয় করেছিলেন। সেকালের সংবাদপত্র ও সমাজপতিরা এ বিষয়টিকে তীব্র আক্রমণ করেছিল। এই সময়টিতে মধুসূদনের শরীর ভেঙ্গে পড়ে। তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে থাকা অবস্থাতেও তিনি বেঙ্গল থিয়েটারের জন্য দুটি নাটক রচনায় হাত দেন। নাটক দুটির নাম 'মায়া কানন' ও 'বিষ না ধনুর্গুণ'। পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার কয়েকদিন আগে তিনি ‘মায়াকানন’ রচনা সম্পূর্ণ করেন। পরিতাপের বিষয় হল, দ্বিতীয় নাটকটি তিনি শেষ করে যেতে পারেন নি। ‘মায়াকানন’ই মধুসূদনের শেষ নাটক।

অবশেষে বেঙ্গল থিয়েটারে নারী চরিত্রে অভিনয়ে চারজন অভিনেত্রী নিয়োগ করা হল। তারা হলেন জগত্তারিণী, গোলাপসুন্দরী, এলোকেশী ও শ্যামাসুন্দরী। এইভাবে মধুসূদনের পরামর্শে বাংলা থিয়েটারের নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছিল। বেঙ্গল থিয়েটারের উদ্বোধনের মাস দেড়েক আগেই মধুসূদনের মৃত্যু হয়। শোকের আবহে শরৎচন্দ্র তাঁর থিয়েটারের উদ্বোধন করেছিলেন ‘মায়াকানন’-এর পরিবর্তে ‘শর্মিষ্ঠা’র অভিনয় দিয়ে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই আগষ্ট। এই দিন থেকেই অভিনেত্রীদের জন্য বাংলা থিয়েটারের দ্বার খুলে দেয়া হল। এরকম একটি পরিবর্তনের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন মাইকেল মধসূদন দত্ত। ভাগ্যের পরিহাসে তিনি এই দিনটি দেখে যেতে পারেন নি।

অভিনেত্রীদের জন্য বাংলা থিয়েটারের দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার সামাজিক প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। শুধু থিয়েটারের ক্ষেত্রেই নয়, সমাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রেও। আমরা জানি উনিশ শতকের বাংলার সমাজ কদর্য বাবু সংস্কৃতির কবলে পড়েছিল। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছ তখন বারাঙ্গনা গমন, রক্ষিতা পোষণ, অসামাজিক প্রণয় প্রায় বৈধতা পেয়েছিল। সম্ভ্রান্ত পরিবারের পীড়িতা নারীরাও বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিতেন বারাঙ্গনা পল্লীতে। অন্ধকার জগতে বেড়ে ওঠা পিতৃপরিচয় বঞ্চিতা বারাঙ্গনা কন্যারা তখন থিয়েটারে অভিনয়ের মাধ্যমে সমাজের মূলস্রোতে একটু অন্যভাবে, একটু সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলেন।

ইতিহাসখ্যাত রাজা প্রতাপাদিত্যের দেশ যশোর। যশোর থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে সাগরদাঁড়ি গ্রাম। পশ্চিমে চলে গেছে পাকা সড়ক। বাঁ হাতে কলেজ। কলেজটিকে পেছনে ফেলে সামনে কপোতাক্ষ। গ্রিল দিয়ে ঘেরা ফলকটিতে খোদাই করে লেখা সেই বিখ্যাত সনেট 'কপোতাক্ষ নদ'। সেটি সুদূর ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে বসে লিখেছেন কবি। সামনে একটি সুদৃশ্য ফুলের বাগান, বাঁ হাতে পার্ক। বাঁহাতে মাইকেল মধুসূদন ইন্সটিটিউট। মাইকেল মধুসূদনের বাড়ির সামনে আম তলায় গ্রিল দিয়ে ঘেরা মূর্তিটি মধুসূদনের। গেট দিয়ে মূল ভবনে প্রবেশ করলে বাঁ পাশের ঘরটিতে রয়েছে কবি পরিচিতি বিষয়ক কিছু তথ্য নির্দেশ। বাঁ পাশের ঘরে রাখা হয়েছে দত্ত পরিবারের ব্যবহৃত কাঠের আসবাবপত্র। ভেতরে গেলে দেখা যায় কবির জন্মগৃহ। গোটা বাড়িটি অধিগ্রহণ করেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। বাড়িটির পশ্চিম পাশে আর একটি বাড়ি আছে। এটি কবির ভাইঝি মানকুমারী বসুর। বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক নারী কবি। এ বাড়িটির একটি ঘরকে ব্যবহার করা হয় মাইকেল মধুসূদন একাডেমির অফিস ও মাইকেল মধুসূদন মিউজিয়াম হিসেবে। মিউজিয়ামটির ভেতরে রয়েছে মধুসূদন বিষয়ক বিভিন্ন দুর্লভ দলিল, চিঠিপত্র, পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র, হাতে আঁকা ছবি এবং অন্যান্য তথ্য নির্দেশ। একাডেমি ও মিউজিয়ামটি সম্পূর্ণ বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয়।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় স্বল্প সময়ে মাত্র ৪টি নাটক ও দুটি প্রহসন রচনা করেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এর মাধ্যমেই বাংলা নাটককে অবিস্মরনীয় ঐশ্বর্যমন্ডিত করেছিলেন। দৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করেছিলেন আধুনিক বাংলা নাটককে। অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত মেঘনাদবধ কাব্যের স্রষ্টা মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মধুসূদন ছিলেন বাংলা সাহিত্যের যুগপ্রবর্তক কবি। তিনি তাঁর কাব্যের বিষয় সংগ্রহ করেছিলেন প্রধানত সংস্কৃত কাব্য থেকে। কিন্তু পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শ অনুযায়ী সমকালীন ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালির জীবনদর্শন ও রুচির উপযোগী করে তিনি তা কাব্যে রূপায়িত করেন। যুগান্তকারী এই সৃষ্টির মধ্য দিয়েই বাংলা সাহিত্যে এক নবযুগের সূচনা হয়। উনিশ শতকের বাঙালি নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ মধুসূদন তাঁর অনন্যসাধারণ প্রতিভার দ্বারা বাংলা ভাষার অন্তর্নিহিত শক্তিকেই আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনন্য উৎকর্ষ সাধন করেন। একারণেই তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘মধুকবি’ নামে পরিচিত। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত জীবনের অন্তিম পর্যায়ে জন্মভূমির প্রতি তাঁর সুগভীর ভালোবাসার চিহ্ন রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় পংক্তিমালায়। তাঁর সমাধির গায়ে এই কবিতাটি লেখা রয়েছে :
"দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধি স্থলে
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি
বিরাম)মহীর পদে মহা নিদ্রাবৃত
দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!
যশোরে সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ-তীরে
জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী"

যশোরের সাগরদাঁড়ির দত্ত বাড়ির জমিদার রাজনারায়ণ দত্তের বিশাল অট্টালিকা, দেব মন্দির, ধন ও প্রাচুর্যে ভরা পরিবারেই জন্ম হয়েছিল মাইকেল মধুসূদন দত্তের। বাংলা সাহিত্যে অমিত ঐশ্বর্য দান করেছেন যিনি, তাঁকে শেষ জীবন কাটাতে হয়েছে আত্মীয়-পরিজন পরিত্যক্ত, কপর্দকহীন, চিকিৎসাহীন এক নিঃসঙ্গ গ্রন্থাগারের কক্ষে। তারপর দাতব্য চিকিৎসালয়ে। তাঁর জীবনকাহিনীও যেন আশ্চর্য বেদনাভরা এক বিয়োগান্তক নাটকের ইতিহাস।

মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেন নি। তাছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন(অর্থাভাবে) অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মহাকবি জীবনের অন্তিম পর্যায়ে জন্মভূমির প্রতি তাঁর সুগভীর ভালোবাসার চিহ্ন রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় পংক্তিমালায়। তাঁর সমাধিস্থলে নীচের কবিতাটি লেখা রয়েছে :

 
'দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব 
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধি স্থলে 
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি 
বিরাম)মহীর পদে মহা নিদ্রাবৃত 
দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!
যশোরে সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ-তীরে 
জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি 
রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী'
 

তথ্যসূত্র :
১ . মধুসূদন রচনাবলী - ড.ক্ষেত্র গুপ্ত সম্পাদিত (সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)
২ . সাহিত্যসাধক চরিতমালা - ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
৩ . মধুসূদন স্মৃতি - ইন্দুভূষণ দাস
৪ . বাংলা সাহিত্যেরর সম্পূর্ণ ইতিহাস - অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
৫ . রঙ্গালয়ে বঙ্গনটী - অমিত মৈত্র

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত