উদীচীর সম্মেলন : সফিউদ্দিন সভাপতি, তপন সাধারণ সম্পাদক

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০১৯, ২২:৫৫

অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদকে সভাপতি এবং জামসেদ আনোয়ার তপনকে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে।

২৮, ২৯ ও ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিন সাংগঠনিক অধিবেশনে ৯১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তাদের মধ্যে ৮৫ জনের নাম সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয় এবং বাকি ৬ জনকে পরবর্তীতে কো-অপ্ট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই কমিটি পরবর্তী দুই বছর দেশে ও বিদেশে উদীচী’র সাড়ে তিনশ’র বেশি শাখা সংসদেও সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করবে। 

নতুন কমিটিতে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন পারভেজ মাহমুদ। এছাড়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন অমিত রঞ্জন দে, সঙ্গীতা ইমাম এবং ইকবালুল হক খান। এছাড়া, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন প্রদীপ ঘোষ, সুরাইয়া পারভীন, মারুফ রহমান, বিজন রায়, রহমান মুফিজ, কংকন নাগ, হালিমা নূর পাপন, মিজানুর রহমান সুমন, আরিফ নূর এবং বিমল মজুমদার। এছাড়াও নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৯ জন সহ-সভাপতি এবং ৪৯ জন সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। উদীচী’র একবিংশ জাতীয় সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিন সাংগঠনিক অধিবেশনে সম্মেলন ঘোষণা পাঠ করেন প্রবীর সরদার, সাংগঠনিক প্রস্তাব উত্থাপন করেন অমিত রঞ্জন দে এবং সাধারণ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সঙ্গীতা ইমাম। পরে, সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব তিনটি পাশ করা হয়। 

“সময়ের ভ্রান্তিতে টলো না, লড়াইটা কখনোই ভুলো না”- এই শ্লোগানকে ধারণ করে গত ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় উদীচী’র একবিংশ জাতীয় সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. অজয় রায়। এসময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, শ্রমিক নেতা কমরেড শহীদুল্লাহ চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন। 

২৯ মার্চ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় সাংগঠনিক অধিবেশন। এ পর্বে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন, সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন উপস্থাপন ও অনুমোদন, অর্থ প্রতিবেদন উপস্থাপন ও অনুমোদন করা হয়। তৃতীয় দিনেও ছিল সাংগঠনিক অধিবেশন যেখানে উত্থাপিত প্রতিবেদনগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বিভিন্ন জেলা ও শাখা থেকে আগত প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা। এরপর সেগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। পরে, তৃতীয় দিন বিকালে শপথ বাক্য পাঠের মাধ্যমে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। এছাড়া, সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষদিনে উদীচীর গৌরবময় পঞ্চাশ বছরের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস-গ্রন্থ ‘উদীচী: বিপ্লবী ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এই বইতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ এবং উদীচী’র ৫৩টি জেলা ও শাখা সংসদের ইতিহাস সন্নিবেশিত হয়েছে। 

এবার উদীচী’র একবিংশ জাতীয় সম্মেলনের পাশাপাশি একইসাথে আয়োজিত হয় দশম সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা। এবারের প্রতিযোগিতায় তিনটি একক ও একটি দলীয়- মোট চারটি বিভাগে বিভক্ত হয়ে জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন সারাদেশের উদীয়মান শিল্পীরা।

প্রতিযোগিতায় ‘ক’ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, উদীচী মৌলভীবাজার জেলা সংসদের শিল্পী রুবাইয়াত ইউসুফ অর্ণি। দ্বিতীয়, উদীচী মৌলভীবাজারের শিল্পী স্বস্তিকা চৌধুরী। আর তৃতীয় স্থান অর্জন করে উদীচী খুলনা জেলা সংসদের শিল্পী শ্যামা দে। ‘খ’ বিভাগে প্রথম হয়েছেন, উদীচী সিরাজগঞ্জ শাখার শিল্পী মেহেদী হাসান, দ্বিতীয় উদীচী যশোরের ওয়াজীহা তাসনীম এবং তৃতীয় উদীচী নেত্রকোনার তন্যা চন্দ। ‘গ’ বিভাগে সেরা হয়েছেন, উদীচী ঠাকুরগাঁওয়ের শিল্পী জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন, দ্বিতীয় বাঁধন দাস এবং তৃতীয় হয়েছেন, শ্যামা রানী দেব।

এছাড়া, দলীয় বিভাগ অর্থাৎ ‘ঘ’ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে উদীচী মাদারীপুর জেলা সংসদ, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে নারায়ণগঞ্জের শিশুশিল্পীদের সংগঠন ‘যোদ্ধা’ একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং তৃতীয় হয়েছে উদীচী উলিপুর শাখা সংসদ, কুড়িগ্রাম। এবার চারটি আলাদা বিভাগে গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুরা ‘ক’ বিভাগ, ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিল্পীরা ‘খ’ বিভাগ, ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা ‘গ’ বিভাগ এবং ‘ঘ’ বিভাগে দলীয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। গণসঙ্গীতের প্রচার ও প্রসার এবং একে একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ১০ বছর ধরে সারাদেশে জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত