একুশে পদক পেলেন মঈনুল আহসান সাবের

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৭:১৩

আমাদের কথাসাহিত্যের বিস্ময়কর প্রতিভা, শক্তিমান লেখক মঈনুল আহসান সাবের ‘ভাষা ও সাহিত্য’ বিশেষ অবদান রাখায় চলতি বছর (২০১৯) একুশে পদক পাচ্ছেন। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে একুশে পদক তুলে দেবেন।

বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে।

মঈনুল আহসান সাবেরের পিতা স্বমহিমায় বিখ্যাত কবি আহসান হাবীব ছিলেন আমাদের সাহিত্যের সত্যিকার অভিভাবক ও জ্ঞানতাপস। সম্পাদক হিসাবে তিনি ছিলেন চুড়ান্ত নির্মোহ এবং আপোষহীন। তাঁর এই আপোষহীন মানসিকতা তাঁকে এমন এক স্থানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল যে আজও পর্যন্ত্য তাঁর প্রতিতূল্য ব্যক্তি একমাত্র তিনি নিজেই। অনবদ্য এই গুণের জন্য দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদনার ইতিহাসে তাঁর বিকল্প খুঁজে পাওয়া বিরল। অতোবড় কবি ও সম্পাদকের সন্তান মঈনুল আহসান সাবের কবিতাকে বেছে না নিয়ে পেশা হিসেবে নিলেন সাংবাদিকতাকে। কালক্রমে তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলা মূলধারার কথা সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় কথাশিল্পী। এছাড়া প্রকাশক হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি রয়েছে।

মঈনুল আহসান সাবের ১৯৫৮ সালের ২৬ মে ঢাকাতে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ঢাকাকে কেন্দ্র করেই তাঁর সবকিছু। আর তাই নগর জীবনকে দেখেছেন খুব কাছ থেকেই। তাঁর পিতা বাংলাদেশর অন্যতম খ্যাতিমান কবি আহসান হাবীব। পৈত্রিক বাড়ি পিরোজপুরের শংকরপাশা গ্রামে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরেছেন তিনি। তবে যাওয়া হয়নি পিতার জন্মস্থানে। ওই স্থানটিকে তিনি মনের কোনে সাজিয়ে রেখেছেন কল্পনার সবটুকু রং দিয়ে।  

১৯৭৩ সালে ঢাকা ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৭৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান এ স্নাতক সম্মান ও ১৯৭৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

বড়দের জন্য প্রথম লেখালেখি শুরু করেন ১৯৭৪ সালে। ওই বছর ২৮ জুন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ছাপা হয়েছিল প্রথম গল্প ‘মোহনী তমসা’। ১৯৮২ সালে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘পরাস্ত সহিস’ প্রকাশিত হয়েছিল।

কর্মজীবনে সাংবাদিকত, লেখালেখির মধ্য দিয়ে পার করেছেন জীবনের বেশিটা সময়। আর এখন সময় কাটে ভ্রমন করে। যুক্ত আছেন অর্থনৈতিকভাবে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করার সংগঠন ‘জেগে আছি’ তে। 

পেয়েছেন বাপী শাহরিয়ার শিশুসাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১), ফিলিপস পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৬)।

প্রকাশিত গ্রন্থ
পরাস্ত সহিস (১৯৮২), অরক্ষিত জনপদ (১৯৮৩), স্বপ্নযাত্রা (১৯৮৪), আগমন সংবাদ (১৯৮৪), মামুলী ব্যাপার (১৯৮৪), চারদিক খোলা (১৯৮৫), একবার ফেরাও (১৯৮৫), আদমের জন্য অপেক্ষা (১৯৮৬), আগামী দিনের গল্প (১৯৮৭), পাথর সময় (১৯৮৯), এসব কিছুই না (১৯৮৯), লাল বাড়ির অদ্ভুত ভূত (১৯৮৯), ভিড়ের মানুষ (১৯৯০), এরকমই (১৯৯০), কেউ জানে না (১৯৯০), কোনো একদিন (১৯৯০), মানুষ যেখানে যায় না (১৯৯০), এক রাত (১৯৯০), চার তরুণ-তরুণী (১৯৯০), কয়েকজন অপরাধী (১৯৯০), পরাজয় (১৯৯০), লিলিপুটরা বড় হবে (১৯৯০), বাংলাদেশের ফুটবল তারকা (১৯৯০), সীমাবদ্ধ (১৯৯১), অচেনা জায়গায় (১৯৯১), কয়েকটি প্রেমপত্র (১৯৯১), সতের বছর পর (১৯৯১), এ এক জীবন (১৯৯১), অপরাজিতা (১৯৯১), ফেরা হয় না (১৯৯১), অগ্নিগিরি (১৯৯১), ধারাবাহিক কাহিনী (১৯৯২), অপেক্ষা (১৯৯২), কবেজ লেঠেল (১৯৯২), হারানো স্বপ্ন (১৯৯২), দুই বোন (১৯৯২), নীল খাম (১৯৯২), না (১৯৯২), সে তোমাকে পাবে না (১৯৯২), মুন্নী (১৯৯২), লজ্জা (১৯৯২), ভূতের থাকা না থাকা (১৯৯২), সুদূর (১৯৯৩), প্রেম ও প্রতিশোধ (১৯৯৩), স্বজন (১৯৯৩), তুমি আমাকে নিয়ে যাবে (১৯৯৩), মঈনুল আহসান সাবেরের প্রেমের গল্প (১৯৯৩), এক ঝলক আলো (১৯৯৪), দুপুর বেলা (১৯৯৫), মৌমাছি ও কাঠুরিয়া (১৯৯৬), তিন সাংবাদিক ভূত (১৯৯৭), মুক্তিযোগ্দধা আব্দুল মালেকের হাসি (১৯৯৭), সংসার যাপন (১৯৯৭), মৃদু নীল আলো (১৯৯৭), রেলস্টেশনে অজানা গল্প (১৯৯৮), জ্যোতির্ময়ী, তোমাকে বলি (১৯৯৮), যোগাযোগ (১৯৯৮), নির্বাচিত প্রেমের উপন্যাস (১৯৯৯), ঠাট্টা (১৯৯৯), অবসাদ ও আড়মোড়ার গল্প (১৯৯৯), ফিরে আসা (১৯৯৯), নির্বাচিত গল্প (১৯৯৯), ব্যক্তিগত (২০০০), বৃষ্টির দিন (২০০০), খুনের আগে ও পরে (২০০০), সবচেয়ে সুন্দর (২০০০), এটা আমার একার গল্প (২০০১), কেউ একত্রে অপেক্ষা করছে (২০০১), উপন্যাসসমগ্র (২০০১), কিশোর সমগ্র (২০০৩), ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ (২০০৩), আমাদের খনজনপুর (২০০৪), পরের ঘটনা (২০০৪), শরীরের গল্প (২০০৪), যে কেউ না, তার সঙ্গে (২০০৫), সুকুমারের লজ্জা (২০০৫), তিলকের গল্প (২০০৬), দূরের ঐ পাহাড়চূড়ায় (২০০৬), এই দেখা যায় বাংলাদেশ (২০০৬), ঋষি ও নারী (২০০৫), আখলাকের ফিরে আসা (২০১৪)।

লেখা নিয়ে নির্মিত নাটক
পাথর সময়, না প্রভৃতি

নির্মিত চলচ্চিত্র
লিলিপুটেরা বড় হবে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত