পরম শ্রদ্ধায় রণেশ দাশগুপ্তকে স্মরণ উদীচীর

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৫১

পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ রণেশ দাশগুপ্তকে স্মরণ করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। 

রণেশ দাশগুপ্ত-এর ১০৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে উদীচী আয়োজন করে জয়ন্তী অনুষ্ঠান। শুরুতে আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ। এ পর্বে রণেশ দাশগুপ্ত-এর জীবন-সংগ্রাম, সাহিত্য চেতনা এবং তাঁর জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট লেখক-গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি রফিকুল হাসান জিন্নাহ এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। এ পর্বটি সঞ্চালনা করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান। 

আলোচনা পর্বের শুরুতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, সমাজতন্ত্রের দীক্ষায় দীক্ষিত রণেশ দাশগুপ্ত সারাজীবন মানুষকে সাম্যবাদী আদর্শে দীক্ষা দিয়ে গেছেন। কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর গড়ে তোলার পেছনে অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন রণেশ দাশগুপ্ত। তবে, সম্প্র্রতি বাংলাদেশে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের পাঠ্যপুস্তক থেকে রণেশ দাশগুপ্তসহ অন্ততঃ ২২ জন প্রগতিশীল লেখকের লেখা বাদ দেওয়া হয়েছে। যা, অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, আজীবন সংগ্রামী রণেশ দাশগুপ্ত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে মানব কল্যাণের ব্রত গ্রহণ করেন। ৪০’র দশকে গড়ে তোলেন প্রগতি লেখক সংঘ, যুক্ত হন শিশু-কিশোর এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর পাকিস্তান আমলেও তিনি সক্রিয় ছিলেন সব ধরনের শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর গড়ে তোলার পেছনে অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন রণেশ দাশগুপ্ত।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সারাদেশে উদীচীর বিস্তার এবং সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তোলার পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখেন রণেশ দাশগুপ্ত। উদীচীর গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের অন্যতম রচয়িতাও রণেশ দাশগুপ্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর অসাম্প্রদায়িক, মৌলবাদমুক্ত, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে সারাজীবন অসংখ্য মানুষকে মানব সেবার মহান ব্রত গ্রহণে উদ্বুব্ধ করে গেছেন রণেশ দাশগুপ্ত।

আলোচনা সভার পর এবারই প্রথমবারের মতো উদীচী আয়োজিত ‘রণেশ দাশগুপ্ত গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতা’-এর ঢাকা মহানগর সংসদের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। সব জেলাতেই রণেশ দাশগুপ্ত-এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিজয়ী প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। গত ১২ জানুয়ারি দেশের সব জেলায় একযোগে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

১৯১২ সালের (১৫ জানুয়ারি) ভারতের আসাম রাজ্যের ডিব্রুগড়ে জন্মগ্রহণ করেন রণেশ দাশগুপ্ত। একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ, মৌলবাদমুক্ত, সাম্যবাদী সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ১৯৬৮ সালের (২৯ অক্টোবর) শিল্পী, সংগ্রামী সত্যেন সেনসহ কয়েকজন প্রগতিশীল, মুক্ত চিন্তার মানুষের প্রচেষ্টায় ‘উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’ গড়ে তোলার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখেন রণেশ দাশগুপ্ত। তাঁর অসামান্য জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ও চিন্তাশীল উপস্থিতির মাধ্যমে উদীচী’র সংগ্রামকে নানা সময়ে বেগবান করেছেন রণেশ দাশগুপ্ত। ১৯৯৭ সালের (০৪ নভেম্বর) কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মনীষী রণেশ দাশগুপ্ত।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত