চতুর্থ বারের মত

আজ বরগুনায় জোছনা উৎসব

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০১৮, ১১:২৬

সাহস ডেস্ক

বরগুনা জেলায় আজ শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ জোছনা উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বরগুনা জেলা প্রশাসন। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় বরগুনার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যকে দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে এ উৎসবে রয়েছে নানা আয়োজন।

বরগুনার খড়স্রোতা পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদী যেখানে সাগরে মিশেছে ঠিক সেখানে নবগঠিত তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের স্নিগ্ধ বেলাভূমি ‘শুভ সন্ধ্যার’ বিস্তীর্ণ বালুচরে চতুর্থ বারের মত এ উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একদিকে সীমাহীন সাগর। আরেকদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। একদিকে দীর্ঘ ঝাউবন, আরেকদিকে তিন তিনটি নদীর বিশাল জলমোহনা। সবমিলিয়ে নদ-নদী আর বন-বনানীর এক অপরূপ সমাহার- শুভ সন্ধ্যার চর! শুক্রবার ভরাপূর্নীমায় এখানেই জলজোছনায় একাকার হবে জোছনাবিলাসী হাজারো মানুষ। এ উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যেই শুভ সন্ধ্যা সৈকতে বাহারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে স্টল বানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

বরগুনা জেলা প্রশাসনসূত্রে জানা গেছে, এবারের জোছনা উৎসবে বরগুনা থেকে দুটি দ্বোতলা লঞ্চ সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুর দেড়টায় (১.৩০মিনিট) বরগুনা লঞ্চঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যাবে। বরগুনার খাগদন নদী হয়ে বাইনচটকীর স্নিগ্ধ বনভূমির পাশ দিয়ে কুমীরমারা আর গোড়াপদ্মার নয়নাভিরাম বনবনানীর কোল ঘেষে বিকেল পাঁচটার দিকে লঞ্চ পোঁছবে শুভসন্ধার চরে। এরপর সেই স্নিগ্ধ বালুচরে শেষ বিকেলের ঘোরাঘুরির পর রাতভর জোছনার গান, রাখাইন নৃত্য, বাউল সঙ্গীত, মোহনীয় বাশি, পুঁথী এবং কবিতা আবৃত্তির সাথে সাথে জলজোছনায় অবগাহন হবে সবার। থাকবে লোভনীয় পুরস্কারের আকর্ষণীয় লটারী। গভীর রাত পর্যন্ত জোছনাস্নাত হয়ে রাত ৩ টায় পূণরায় বরগুনার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়বে। সকাল ৬টা নাগাদ লঞ্চ ভিড়বে বরগুনার ঘাটে।

জোছনা উৎসবে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ রাজধানী ঢাকা এবং দেশ বিদেশের ২০ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক ভিড় জমাবেন বলে ধারণা করছে আয়োজক কমিটি। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ সময়, নদনদীর মোহনা এবং শীতের হিম হাওয়ার কথা ভবনায় রেখে এ উৎসবে ১০ বছরের কমবয়সী শিশুদের নিয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তাছাড়া যেহেতু দীর্ঘ সময় বালুচরে ঘোরাঘুরি করতে হবে। সেহেতু বেলাভূমিতে নিজেদের মত করে আড্ডা জমাতে হলে ভ্রমনের আগে প্রয়োজনীয় মাদুর, বিছানার চাদর, শীতের কাপড়, বিশুদ্ধ পানি, গামছা বা তোয়ালে, টিস্যু পেপার এবং লাইট স্ন্যাক্স সাথে নিয়ে আসার জন্য আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যারা ডাক্তারি পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন তাদের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে দরকারি সব ওষুধ সাথে নিতে।

বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি নারী ও পুরুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে। মূল স্টেজের পেছনেই থাকছে নারীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার। স্টেজ থেকে একটু দখিনে ঝাউবন ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে নারী ও শিশুদের জন্য বিশ্রামাগার। থাকছে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃংখলাবাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। চাদনী রাতে তিন নদীর জলমোহনায় ছোট ছোট ট্রলার ভাড়া করে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর জন্য থাকছে ভাড়ায় চালিত ট্রলারের সুব্যবস্থাও। বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’টি নির্ধারিত হটলাইন নম্বর জানিয়ে দেয়া হয়েছে (০১৩১৮৬৫৫৬৩৬/০১৩১৮৬৫৫৬৩৬)। এ নম্বরে যোগাযোগ করে রেজিস্ট্রেশনসহ জোছনা উৎসব সংক্রান্ত সকল তথ্য জানা যাবে। একই সাথে জোছনা উৎসব সংক্রান্ত সকল তথ্য উপাত্ত দিয়ে খোলা হয়েছে একটি ফেইসবুক পেইজও। যেখানে জোছনা উৎসব সংক্রান্ত সকল তথ্যসহ আকর্ষণীয় সব ডকুমেন্টারী শেয়ার করা হয়েছে।

জোছনা উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা সাংবাদিক সোহেল হাফিজ জানিয়েছেন, স্থানীয় সমমনা বন্ধুদের নিয়ে যে উৎসবটি আমরা শুরু করেছিলাম তা আজ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কাছে একটি প্রিয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। বরগুনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ উৎসবটি ধীরে ধীরে দেশ-বিদেশেও ব্যপক পরিচিতি পাবে বলে আমরা আশাবাদী।

বরগুনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুনীর জামান জানান, ২০১৫ সালে বরগুনায় শুরু হয় জোছনা উৎসব। বিষখালীর মোহনায় প্রথমবারের সে জোছনা উৎসবকে ভালবেসে ফেলে স্থানীয় উৎসবপ্রিয় মানুষ। সেই থেকে প্রতিবছর ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বরগুনায় পালিত হয়ে আসছে জোছনা উৎসব। এবারেই প্রথমবারের মত বরগুনার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

বরগুনা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বরগুনা জেলার সভাপতি অ্যাড. মোঃ শাহজাহান বলেন, বরগুনার মানুষ উৎসবপ্রিয়। এখানে বৈশাখী মেলা থেকে শুরু করে নবান্ন উৎসব, বসন্ত উৎসব ইত্যাদি সকল উৎসবগুলো নিয়মিত উদযাপিত হয়ে আসছে। ২০১৫ সাল থেকে বরগুনায় শুরু হয় জোছনা উৎসব। সেই থেকে আজ অবধি এ উৎসবটি বরগুনায় নিয়মিত উদযাপিত হয়ে আসছে।

জোছনা উৎসব আয়োজক কমিটি ২০১৮-এর আহবায়ক ও বরগুনার জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, বরগুনায় যোগদান করেই এখানকার প্রতিটি পর্যটন স্পট আমি ঘুরে দেখেছি। বরগুনা হল এমন একটি জেলা যেখান থেকে নৌপথে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের দূরত্ব মাত্র ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার। এছাড়া বরগুনায় রয়েছে নয়নাভিরাম স্নিগ্ধ বনভূমী আশারচর, লালদিয়ারচর, হরিণঘাটার বন, টেংড়াগিরির বনভূমি এবং শুভসন্ধ্যার বীচ পয়েন্টসহ অনেক আকর্ষণীয় বনবনানী ও নদনদীর মোহনা। এসব বনাঞ্চলে রয়েছে হরিণ, বানর, শুকরসহ শতেক প্রজাতীর প্রাণীবৈচিত্র। বরগুনার এসব আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা গেলে পর্যটন শিল্প বিকাশের সাথে সাথে এখানকার অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। 

তিনি আরও বলেন, বরগুনার মানুষ উৎসবপ্রিয়। জোছনা উৎসবের মত একটি উৎসবকে দেশ ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে প্রচার করা গেলে প্রতিবছর এ উৎসবকে ঘিরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় বাড়বে। আর এভাবেই এগিয়ে যাবে বরগুনা। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত