প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবি ডঃ শামসুজ্জোহা

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:০৬

১৯৬৯ মালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ছিল মঙ্গলবার। এর দু'দিন আগেই সার্জেন্ট জহুরুল হক (আগরতলা মামলার অন্যতম আসামি)-কে হত্যা করা হয়েছিল। দেশ ছিল তাই উত্তপ্ত। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। তবুও এই হত্যার প্রতিবাদ করতে দেশের প্রত্যেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ফলে তাদের ওপর চলে পুলিশি হামলা। আরও ক্ষেপে যায় ছাত্রসমাজ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছিল একই অবস্থা। পুরো ক্যাম্পাস ঘিরে রেখেছিল সেনাবাহিনী। পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ছুটে বেড়াচ্ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের রিডার ডঃ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা। একবার সামরিক অফিসারদের সাথে কথা বলে আরেকবার ছাত্রদের বুঝিয়ে শান্ত হবার জন্য। কিন্তু কোনো কথাই তখন ছাত্ররা শুনতে নারাজ। সেনাবাহিনীর মধ্যেও যখন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে তখন ডঃ জোহা বলেন, 'আমি বলছি গুলিবর্ষণ হবে না, যদি গুলিবর্ষণ হয় তা হলে কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে সেটা আমার গায়ে লাগবে।' ঠিক এ সময়েই পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা খাদেম ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। বাঙালি সৈনিকরা গুলি চালাতে পারে নি খাদেমের কথা শুনে। তখন খাদেম নিজেই রিভলবার দিয়ে ডাঃ জোহার ওপর গুলি চালায়। মাঠের মাটিতে পড়ে যান তিনি। এরপর তাকে বেয়নেটের আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করা হয় গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই। আহত অবস্থাতেই তাকে পৌরসভা ভবনের একটি ঘরে ফেলে রাখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। কয়েক ঘন্টা পর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।

এরপর পাকিস্তানিদের জন্য দেশের অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে যায়। ওই ঘটনার পর সারা দেশ আরও উত্তাল হয়ে যায়। পরের দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে পালিত হয় হরতাল। ওই দিনই তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের পাশে দাফন করা হয়। তার কবরের গায়ে লিখে দেওয়া হয় ওই উক্তি- 'কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে সেটা আমার গায়ে লাগবে।'

ডঃ জোহা এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। তার মৃত্যুর দিন থেকেই সূচনা হয় নতুন এক অধ্যায়। ছাত্রদের প্রতি ভালবাসা আর দায়িত্ববোধের কারণেও কেউ নিজের জীবন দিতে পারেসেটা তিনি দেখিয়েছেন। নিজের জীবন দিয়ে বাঁচিয়েছিলেন হাজার হাজার প্রাণ।

সেদিন সেই বুলেট শুধুমাত্র ডঃ জোহাকেই বিদ্ধ করে নি। বরং বিদ্ধ করেছিল এদেশের মুক্তিকামী শিক্ষক সমাজ এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের। প্রিয় ছাত্রদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য জীবন দেবার ঘটনা বিরল। এজন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দিনটি-কে 'জোহা দিবস' বা 'রাবি শিক্ষক দিবস' হিসেবে পালিত করা হয়।

সারাদিনে পালিত হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। তবে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এই দিনটি-কে স্মরণ করা দরকার। ডঃ জোহা-কে নতুন শিক্ষক এবং ছাত্রদের সামনে উদাহারণ হিসাবে তুলে ধরা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত