নবীনচন্দ্র সেন

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:১৮

সাহস ডেস্ক

নবীনচন্দ্র সেন বাংলা সাহিত্যের একজন উল্লেখযোগ্য কবি। তিনি ১৯০৯ সালের ২৩ জানুয়ারি আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সমৃদ্ধকরণে এক অনবদ্ধ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

প্রাথমিক জীবন
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত পশ্চিমগুজরার (নোয়াপাড়া) সুপ্রসিদ্ধ প্রাচীন জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম গোপীমোহন রায় এবং মাতার নাম রাজরাজেশ্বরী।

শিক্ষা জীবন
পাঁচবছর বয়সে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম স্কুল (বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল) থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় প্রথমশ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতা যান। ১৮৬৫ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এফএ এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইন্সটিটিউশন (স্কটিশচার্চ কলেজ) থেকে ১৮৬৯ সালে বিএ পাশ করেন।

কর্মজীবন
বি.এ. পাশ করার পরে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ সাট্ক্লিফ এর সুপারিশে নবীনচন্দ্র কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে তৃতীয় শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। কিছুদিন পরে বেকার হয়ে পড়েন। পরে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হন। প্রথমে ১৭ জুলাই ১৮৬৮ বেঙ্গল সেক্রেটারীয়েটের এসিষ্ট্যাণ্ট পদে যোগ দেন। ২৪ জুলাই ১৮৬৯ যশোরে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে তাঁকে পদায়ন করা হয়। কর্মজীবনে তিনি বাংলা, বিহার, ত্রিপুরার অনেকস্থানে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুই দফায় মোট প্রায় আটবছর ফেনীতে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি অনন্য কর্মদক্ষতায় একটি জঙ্গলাকীর্ণ স্থানকে মনোরম শহরে পরিণত করেন। ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ফেনী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল। প্রায় ছত্রিশ বছর সরকারি চাকুরি করার পরে ১ জুলাই ১৯০৪ অবসর গ্রহণ করেন।

সাহিত্যকর্ম
নবীনচন্দ্রের প্রথম কবিতা 'কোন এক বিধবা কামিনীর প্রতি' তৎকালীন অন্যতম খ্যাতনামা পত্রিকা এডুকেশন গেজেট নামক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তখন তিনি এফ.এ (বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক) শ্রেণীর ছাত্র। তাঁর প্রথম বই "অবকাশরঞ্জিনী"র প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় ১২৭৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ এবং এর দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ২৯ জানুয়ারি, ১৮৭৮এ। নবীনচন্দ্রের কাব্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে
পলাশির যুদ্ধ (১৮৭৫)
রৈবতক(২রা ফেব্রুয়ারি ১৮৮৭)
কুরুক্ষেত্র( ১৮ই জুলাই ১৮৮৩)
প্রভাস(১৮৯৭)

রৈবতক, কুরুক্ষেত্র, প্রভাস মূলত একটি বিরাট কাব্যের তিনটি স্বতন্ত্র অংশ। এই কাব্য তিনটিতে কৃষ্ণচরিত্রকে কবি বিচিত্র কল্পণায় নতুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কবির মতে আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির সংঘর্ষের ফলে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধ হয়েছিল। এবং আর্য অনার্য দুই সম্প্রদায়কে মিলিত করে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমরাজ্য স্থাপন করেছিলেন। নবীনচন্দ্রের অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ক্লিওপেট্রা (১৮৭৭), অমিতাভ (১৮৯৫), অমৃতাভ, রঙ্গমতী উল্লেখযোগ্য। নবীনচন্দ্র 'ভগবতগীতা' এবং 'মার্কণ্ডেয়-চণ্ডীর'ও পদ্যানুবাদ করেছিলেন।

নবীনচন্দ্রের কবিত্ব জায়গায় জায়গায় চমৎকার কিন্তু কবি এই চমৎকারিত্ব সব জায়গায় বজায় রাখতে পারেন নি। এই কারণে এবং কাব্য বাঁধুনি না থাকায় নবীনচন্দ্রের কবিত্বের ঠিকমত বিচার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নবীনচন্দ্র কিছু গদ্যরচনাও করেছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত