জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খান

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০১৮, ১১:১৯

১.
অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খান। অনালোচিত এই আলোকিত, সুশিক্ষক-লেখক সর্বোপরি ধ্রুপদি মানুষটিকে ভালোবাসার আলোয় অন্ধকার সময়ে খুঁজে নিতে হয়। কলেজের শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু করে হয়েছিলেন গৌরবময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বনামধন্য অধ্যাপক। কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবেও সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশা আর নেশা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলো জীবনে তাঁর। ফলে সৃজনশীল সাহিত্য যেমন রচনা করেছেন, তেমনি ছাত্র-ছাত্রীদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে করেছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভিন্ন ভাষার বইয়ের সাবলীল বাংলা অনুবাদও। জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন সারাজীবন, করেছেন মায়া-মমতার আলোয় আপন জীবন যাপন। অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খান ১৯২৬ সালের ২৭ আগস্ট (১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ১৩ ভাদ্র) বাগেরহাটের কচুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। জ্ঞানের নিরব ও একনিষ্ঠ সাধক অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খানের স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। উল্লেখ্য যে, নানা কারণে মনে রাখবার মতোন মহান এই মানুষটি ১৯৮২ সালের ১৭ জুন (২ আষাঢ়, ১৩৮৯ বঙ্গাব্দ) মাত্র ৫৬ বছর বয়সে অকালে মৃত্যুবরণ করেন।

২.
বিস্ময়করই বটে, যে বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৬৯ সালে এবং ১৯৮৪ সালে তাঁর অনুদিত জন স্টুয়ার্ট মিলের গুরুত্বপূর্ণ বই ‘প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার’ প্রকাশিত হয়, সেই বাংলা একাডেমির চরিতাভিধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বনামধন্য অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খানের কোন জীবনীই ভুক্তিতে নেই। স্যার টমাস মুর-এর 'ইউটোপিয়া' গ্রন্থটিও অনুবাদ করেছেন তিনি। বর্তমানে 'ওয়ার্ল্ড ক্ল্যাসিক' হিসেবে চিরন্তনতা অর্জন করা স্যার টমাস মুর-এর 'ইউটোপিয়া' গ্রন্থটি সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন আমাদের জন্য মূল্যবান। এই বইটিও আমরা পাঠ করেছি শিক্ষকদের প্রেরণায়। রাষ্ট্রদর্শনের শিক্ষার্থীদের জন্য অতি মূল্যবান সহায়ক এ দু’টি গ্রন্থ। আমরা জানি, জন স্টুয়ার্ট মিল ছিলেন ঊনবিংশ শতকের ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত দার্শনিক, যুক্তিবিদ, অর্থনীতিবিদ এবং নীতিশাস্ত্রবেত্তা। তাঁরই অনুদিত গ্রন্থ ‘প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার’ পাঠকালে সমকালীন সরকার ব্যবস্থা ও প্রকৃতি নিয়ে মনে নানা প্রশ্নও জাগে। এখানেই অনুবাদকের কৃতিত্ব যে তিনি পাঠককে সময়ের কাছে নিবেদনে একনিষ্ঠ করেন। যে কারো মনেই ভাবনার উদয় ঘটে স্বাভাবিকভাবেই যে, প্রজাতন্ত্রের সর্বস্তরে জনগণের প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রপরিচালনার অন্যতম মূলনীতি। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্যই ছিল জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারব্যবস্থা কায়েম করা। গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকেই আমাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা। ১৯৭০-এর নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বেরই বিজয় হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবমর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারব্যবস্থা কায়েম করার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হলেও প্রতিনিধিত্বমূলক প্রজাতন্ত্র বা প্রশাসন কতটুকু অর্জিত হয়েছে এটি আজও একটি বড় প্রশ্ন।

৩.
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের (সরকার ও রাজনীতির) একজন নগণ্য ছাত্র হিসেবে আমার কাছে অনুবাদক ও লেখক হিসেবে অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ তাঁর উপরোক্ত অনুবাদ গ্রন্থ দু’টি ছাড়াও ‘প্লেটো ও এরিস্টটলের রাজনৈতিক চিন্তা’ নামে একটি একাডেমিক গ্রন্থ আছে, যেটি রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস পাঠকালে আমাদের অবশ্যপাঠ্য গ্রন্থ হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলো। বাংলঅ ভাষায় সুশিক্ষা বিস্তারের ব্রত নিয়ে করা এই মূল্যবান অনুবাদটি চিন্তাশীল পাঠকের কাছে আজো সমানভাবে সমাদৃত। আর তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বনামধন্য অধ্যাপকের পরিচয় ছাড়াও মোহাম্মদ দরবেশ আলী খান তাঁর 'ইউটোপিয়া', ‘প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার’ এবং ‘প্লেটো ও এরিস্টটলের রাজনৈতিক চিন্তা’, এই মূল্যবান বইগুলির কারণেই আমার কাছে একজন গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় লেখক হিসেবে সব সময়ের জন্য সম্মানিত ও স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। অত্যন্ত ছাত্রপ্রিয়, শিক্ষানুরাগী, সরল ও নির্লোভ সেই আলোকিত অধ্যাপকের, লেখকের কোন জীবনী কোথাও খুঁজে না পেয়ে আমি তাই যারপর নাই ব্যথিত, আশাহত।

৪.
তাঁর একসময়ের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন, আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সকলের পরম প্রিয়, শ্রদ্ধেয় শিক্ষক (প্রয়াত) অধ্যাপক ড. আজিজুল হক স্যারের কাছে অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খানের পাণ্ডিত্যের, সরলতার অনেক গল্প শুনেছি। তাঁরা দু’জনেই বৃহত্তর বরিশালের পিরোজপুর-বাগেরহাট এলাকার মানুষ হওয়াতে ড. আজিজুল হক স্যারের সাথে তাঁকে নিয়ে আলোচনাকালে আবেগ ও স্মৃতিকাতরতার পরিমাণ বেশিই দেখেছি। তার অবশ্য কারণও আছে, অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খান যথন পিরোজপুর কলেজে অধ্যক্ষ ছিলেন, তখনও তাঁর একান্ত সান্নিধ্য নিত্য পেয়েছিলেন আজিজ স্যার। আবার, আমার প্রাক্তণ কর্মস্থল মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের আমারই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার সুবাদে অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খানের সরাসরি স্নেহ-সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। সুভাষ স্যারের কাছেও একজন প্রকৃত জ্ঞানী শিক্ষকের যাবতীয় গুণাবলীর প্রশংসাও সবসময় শুনেছি।

৫.
আমি আমার স্কুল জীবনেই লেখক-অনুবাদক হিসেবে অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খানের নাম জানার সুযোগ পাই তাঁরই অনুদিত ‘বিজ্ঞানের মানসপুত্র বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন’ বইটি পাঠের মাধ্যমে। বইটি পাঠের পর থেকে বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিনের একটি বচন সবসময়ই মনে পড়ে, ‘যারা অজুহাত তৈরিতে ভালো, তারা অন্য কিছুতে খুব একটা ভালো হয় না।’ সেই কিশোরকালে বইটির স্বপ্ন মাখানো, আশাবাদ জড়ানো আবেগময় ভাষা আমার মনকে দারুণভাবে স্পর্শ করে। যেহেতেু ছোটবেলা থেকেই বইপড়ার প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ ছিলো, বিশেষত জীবনীর প্রতি এক ধরণের আসক্তিই ছিলো বলা চলে। তাই মানব সভ্যতার ইতিহাসে আলো জ্বালানো মহান মানুষদের জীবনীর প্রতি বেশি টান অনুভব করতাম। ফলে অন্য সব শ্রেণির বইয়ের চেয়ে জীবনী পাঠেই বেশি মনোযোগ দিতাম। আর এভাবেই ‘বিজ্ঞানের মানসপুত্র বেনজামিন ফ্রাঙ্কলিন’ বইটি স্কুল জীবনে পড়তে গিয়ে নামটি মনে গেঁথে থাকে, আমার আপনজন-স্বজন হয়ে ওঠেন এর সরল-সাবলীল ও মনকাড়া অনুবাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ দরবেশ আলী খান। 

৬.
অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খান কবিতা লিখেছেন, লিখেছেন গানও। একজন প্রকৃত সৃজনশীল মানুষের মানবিক সত্ত্বার, শৈল্পিক মানসিকতার যাবতীয় অনুভবকেই তিনি ধারণ করতেন বলেই আমার বিশ্বাস জন্মেছে। আর তাই আমার নিজস্ব একান্ত অনুভবে তিনি হয়ে ওঠেন ‘রেনেসাঁস ব্যক্তিত্ব’ কিংবা ‘ধ্রুপদি’ মানুষ।

৭.
অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খান কেবল শিক্ষার্থী বৎসল একজন শিক্ষক হিসেবেই নন, দায়িত্বশীল পিতা হিসেবেও তিনি সফল। তাঁর ছেলে-মেয়েরা সবাই সুশিক্ষিত-উচ্চশিক্ষিত এবং দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিতও। আপন দাযিত্ব যথাযথভাবে পালনের ক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রী বেগম হোসনে আরা খান তাঁকে সবসময়ই সকল কাজে যেমন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তেমনি জুগিয়েছেন নিরন্তর অনুপ্রেরণাও। এই অনুপ্রেরণাদায় মহান মানুষটি, আমার প্রিয় খালাম্মা হোসনে আরা খান আজো আমাদের মাঝে তাঁর স্নেহ-ভালোবাসা-প্রীতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন দেখে আমার মতোন খুশি সবাই। এই সুযোগে তাঁর সুস্থ ও আনন্দময় দীর্ঘায়ু কামনা করি।

৮.
তাঁর জীবনী অনুসন্ধানে জানতে পারি, অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খানকে কঠোর জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই লেখাপড়া করতে হয়। ছাত্রজীবনেই আদর্শিক কারণে ভাসানী ন্যাপ বা বাম রাজনীতির সাথেও গভীরভাবে জড়িত হয়ে পড়েন তিনি। ফলে সারাটি জীবনই তিনি যাপন করেছেন উচ্চায়ত চিন্তন চর্চার মধ্য দিয়েই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মেধাবি ছাত্র হিসেবে মাস্টার্স পাস করেই ১৯৫৪ সালে তিনি বাগেরহাট পি.সি কলেজে শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন। পরে সাতক্ষীরা কলেজ এবং পিরোজপুর কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালনকালে তিনি দক্ষতার-যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন। মুহাম্মদ দরবেশ আলী খান পিরোজপুরের সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে ১৯৬৫ সালের ০৯ অক্টোবর থেকে ১৯৭২ সালের ২১ আগস্ট সময়কালে অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেন। অত:পর ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পদে যোগদান করেন।

৯.
অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খান সৈয়দ আমির আলির ‘দ্য স্পিরিট অব ইসলাম’সহ আগেই উল্লেখিত গ্রন্থগুলির পাশাপাশি আরো কিছু বইয়েরও অনুবাদ করেন। এসব ছাড়াও ‘যুদ্ধ, রাজনীতি ও দর্শন’ নামে একটি রচনা সংকলনও ছাপা হয়েছে তাঁর। সেই সাথে বাংলা বিশ্বকোষের জন্য সহস্রাধিক এট্রিও রচনা করেন তিনি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন নানা বিষয়েও। 

১০.
বিপাশা আইচ (Bipasha Aich), সুশিক্ষক পিতা অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খানের সুযোগ্য কন্যা। যিনি বিশ্ববরেণ্য বাঙালি জাদুশিল্পী জুয়েল আইচের ‘অর্ধেক আকাশ’। কন্যা বিপাশা আইচ কিছুদিন আগে পিতার স্মৃতি নিয়ে ছোট পরিসরে একাধিক রচনা ফেসবুকে লিখেছিলেন। সেখান থেকে পিতা হিসেবে, পারিবারিক মানুষ হিসেবে অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খানের পরিচয় তুলে ধরার লোভ সামলানো দায়। পিতৃস্মৃতির কিছুটা সবার সাথে ভাগ করে নেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। আর তাই এবার ‘আমার পিতার মুখ’ শিরোনামের সেই স্মৃতিচারণার বিশেষ কিছু অংশ পাঠ করা যাক। 

১১.
বিপাশা আইচ লিখছেন, ‘আমার আব্বা রাশভারী পন্ডিত মানুষ, ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ।একদিন সকালে ভার্সিটিতে যাবেন বলে তৈরি হচ্ছেন। হঠাৎ শুনলাম তার রাগী গলার ডাক। সবাই ছুটলাম তার ঘরে। কি হয়েছে? তোয়ালে হারিয়েছে। 'এইমাত্র ছিল। এইখানেই ছিল।' গর্জন শোনা গেল। মা বুঝাতে চেষ্টা করলেন যে তার তোয়ালে কেউ নেয়নি। এমনকি কেউ তার ঘরে ঢোকেনি। আব্বাই হয়তো মনের ভুলে পাশের ঘরে কোথাও রেখেছেন। আব্বা আরো রেগে গেলেন। বল্লেন 'বাথরুম থেকে বেরিয়ে আমি কোথাও যাইইনি।'
মা বললেন 'তাহলে দেখ বাথরুমেই আছে।' ঘরের লাগোয়া বাথরুম, খোঁজা হল - না নেই। পাশের ঘরে কেন সব ঘরেই খোঁজার চুড়ান্ত করা হলো। কিন্তু তোয়ালেটি কোথাও পাওয়া গেল না। আব্বা শীতের সকালে স্যুটকোট পরা অবস্থায় রাগে কাঁপতে এবং ঘামতে লাগলেন।
মা বললেন 'ক্লাসের সময় হয়েছে, ক্লাসে যাও। তোয়ালে দিয়ে কি করবে? '
'কি করব মানে? ঠিক জায়গায় রেখে তো যাব।'
'তাই বলে ক্লাস বাদ দিয়ে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করবে? '
আব্বা রেগেমেগে বেরিয়ে গেলেন। আমরা ঘরের আনাচে কানাচে তন্নতন্ন করে হারানো তোয়ালে খুঁজতে লাগলাম। যাতে আব্বা ফিরে আসার আগেই জায়গা মতো রাখা যায়। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। আব্বা ফিরলে আবার একটা হইচই হবে ভেবে সবাই ভয়ে ভয়ে রইলাম।
আব্বা থমথমে মুখে বাসায় ফিরলেন। মার ডাক পড়লো, আমরাও ভয়ে ভয়ে উঁকি দিলাম। গম্ভীর মুখে কোটটা গা থেকে খুলে হ্যাঙ্গারে রাখতে যাচ্ছেন। কোট খুলতেই দেখা গেল আব্বার কাঁধের উপর তোয়ালেটা ঝুলছে।
মা বলে উঠলেন ' ঐ তো তোমার তোয়ালে।' আব্বা তোয়ালের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। হাসতে হাসতে সবার চোখে পানি চলে এলো।
আমার মনভুলো বাবা আধভেজা তোয়ালেটা কাঁধে নিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিয়েছেন।
আমার আব্বা মোঃ দরবেশ আলী খান ছিলেন একই সঙ্গে কঠোর, কোমল, রাগী ও হাসিখুশি মানুষ। এখন থেকে তেত্রিশ বছর আগে মাত্র ছাপ্পান্ন বছর বয়সে এই মানুষটি চলে যান না ফেরার দেশে। তারপর অনেক কেঁদেছি। তিনি ফিরে আসেন নি। অনেক দেশ ঘুরেছি। সব জায়গায় গিয়ে মনে হয়েছে আহা, আব্বাকে যদি নিয়ে আসতে পারতাম! পারিনি, আব্বাকে কোনো দিন বলা হয়নি কত ভালবাসি তাকে।’

১২.
অধ্যাপক মোহম্মদ দরবেশ আলী খান আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন, থাকবেন তাঁর নানান সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়েই। তাঁর মতোন মহান শিক্ষকদের, লেখক-অনুবাদকদের জীবন-দর্শন-কর্ম তুলে ধরার দায়িত্ব পালনে তাই আমাদের সকলেরই আরেকটু বেশি যত্নবান ও মনোযোগি হওয়াটা জরুরি বিবেচনা করি। বিশেষত: এই লোভের-পুঁজিবাদের পাথর সময়ে, সর্বগ্রাসী অন্ধকারের ক্ষণে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত