খাজা নাসিরুদ্দিন আল তুসি

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০১৮, ১২:৫৬

পারস্যের সবচাইতে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী ও পণ্ডিতদের অন্যতম খাজা নাসিরুদ্দিন আল তুসি। তার সমস্ত প্রবন্ধ বা পুস্তিকা লেখা হয়েছিল আরবি ভাষায়। জ্ঞানের পরিধি ও গভীরতার দিক থেকে এই মহান মনীষীর জ্ঞানকে পারস্যের আরেক জগদ্বিখ্যাত মনীষী ইবনে সিনার সঙ্গে তুলনা করা হয়। এ দু’জনের মধ্যে ইবনে সিনা চিকিৎসা শাস্ত্রে বেশি পারদর্শী ছিলেন। অন্যদিকে নাসিরুদ্দিন আল তুসির দক্ষতা বেশি মাত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল গণিতে। গণিতের নানা বিষয়ে বেশ কয়েকটি মূল্যবান বই লিখেছিলেন তুসি। জ্যোতির্বিদ্যার ওপরও কয়েকটি মূল্যবান রচনা রেখে গেছেন ইরানের এই মনীষী। নাসিরুদ্দিন আল তুসির কোনো কোনো মূল্যবান বই বেশ কয়েকটি বিদেশী ভাষায় অনূদিত হয়েছিল। সেই সব অনূদিত গ্রন্থের কারণে ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরাও উপকৃত হয়েছিলেন ৷ জার্মান প্রাচ্যবিদ কার্ল ব্রোকেলম্যান মনে করেন তুসি বড় ধরনের অবদান রেখেছেন গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যায়। কার্ল ব্রোকেলম্যান তার বইয়ে এটাও উল্লেখ করেছেন যে নাসিরুদ্দিন আল তুসি বিজ্ঞান সম্পর্কিত অনেক বই অনুবাদ করেছিলেন এবং তিনিই প্রথমবারের মত ত্রিকোনোমিতিকে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

তিনি নাসিরুদ্দিন আল তুসি নামে বিখ্যাত হলেও তাঁর আসল নাম হল মুহাম্মদ ইবনে হাসান জাহরুদি তুসি। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন উত্তর-পূর্ব ইরানের তুস শহরে খ্রিষ্টীয় ১২০১ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে। খাজা নাসিরুদ্দিন আল তুসির কয়েকটি লেখায় তুস শহরকে তার জন্মস্থান হিসেবে উল্লেখ করা হলেও কোনো কোনো ইতিহাসবিদ বলেছেন, তুসি আসলে ওয়ারশাহ নামক গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। এই গ্রামটির অবস্থান ছিল জাহরুদ অঞ্চলের উপকণ্ঠে। যাই হোক তার পূর্বপুরুষরা তুসে আসেন এবং এই তুসেই তার জন্ম হয়েছিল বলে তিনি তুসি নামে খ্যাত হন। খাজা নাসিরুদ্দিন তুসির বাবার নাম ছিল মুহাম্মদ ইবনে হাসান। তিনি ছিলেন একজন ধর্মতাত্ত্বিক ও হাদিস-বিশেষজ্ঞ। খাজা তার বাবার কাছেই কুরআন ও ধর্মতত্ত্বসহ নানা শাস্ত্রের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেন। আর নিজের চাচা নুরুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আলীর কাছে পড়েন হাদিস শাস্ত্র। এরপর তিনি যুক্তিবিদ্যা ও দর্শন পড়েন এবং ধর্মীয় শিক্ষা ও বিজ্ঞানের প্রচলিত নানা শাখায় ব্যাপক দক্ষতা অর্জন করেন। তুসি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, ধৈর্যশীল, দয়ালু ও সুদর্শন। সুসংস্কৃতির বিকাশ ও দরিদ্রকে সহায়তার জন্য তিনি সম্ভাব্য সব কিছুই করতেন।

ক্যালকুলাস, জ্যামিতি ও অ্যালজাবরাতেও দক্ষতা অর্জন করেন নাসিরুদ্দিন আল তুসি। সঙ্গীত শাস্ত্রও আয়ত্ত করেছিলেন তিনি। এরপর তিনি যৌবনেই জন্মভূমি ছেড়ে চলে যান নিশাপুরে। তুসি সেখানে গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যায়ও পারদর্শী হন। উত্তর-পূর্ব ইরানে অবস্থিত প্রাচীন খোরাসানের অন্যতম প্রধান শহর নিশাপুর ছিল কয়েক শতক ধরে মুসলিম বিশ্বের জন্য জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এই মহান মনীষীর জীবদ্দশায়ও নিশাপুরের সেই খ্যাতি বজায় ছিল। তুসি নিশাপুরে অল্প কিছুকাল থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বহু শাখায় পারদর্শী হন। গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা ও ধর্মতত্ত্ব ছাড়াও আধ্যাত্মিক রহস্য, যুক্তিবিদ্যা, দর্শন, নীতি শাস্ত্র, সাহিত্য ও চিকিৎসা-বিজ্ঞানে অসাধারণ পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন তিনি।

নাসিরুদ্দিন আল তুসির নিশাপুর অঞ্চলে বসবাসের সময় মঙ্গোল হামলার শিকার হয় এই শহর। মঙ্গোলরা নিশাপুর ছাড়াও ইরানের অন্যান্য শহরগুলোকে একের পর এক গুড়িয়ে দেয়। কেবল ইসমাইলি দূর্গগুলোই এই সর্বগ্রাসী মঙ্গোল হামলাগুলোর সামনে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় তুসি নিশাপুর ছেড়ে চলে যান ইসমাইলি দূর্গে। সেখানে তিনি কয়েকটি বই লিখেছিলেন। মঙ্গোল কমান্ডার হালাকু খান ইরান অভিযান শেষ ও ইসমাইলিদেরকে বিতাড়িত করার পর নাসিরুদ্দিন আল তুসিকে তার দরবারের সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। ইসমাইলিদেরকে দমনের পর হালাকু খান বাগদাদে হামলা চালিয়ে আব্বাসিয় রাজবংশকে ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়। হালাকু খান এ বিষয়ে তুসির পরামর্শ চায়। তুসি এ বিষয়ে আগেই ভেবেছিলেন। তিনি তার দূরদর্শিতার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছিলেন যে আব্বাসিয় শাসকরা ভবিষ্যতে নানা সংকটের শিকার হবেন এবং ইরাক খুব সহজেই মঙ্গোলদের করায়ত্ত হবে। হালাকু খান প্রবলভাবে তুসিকে বিশ্বাস করতেন এবং বাগদাদ অবরোধের পদক্ষেপ নেন। অবশেষে ৬৫৬ হিজরিতে আব্বাসিয় খলিফা ও তার তিন পুত্র এবং অন্যান্য বড় কর্মকর্তাদের বাগদাদ থেকে বিতাড়িত করে মঙ্গোলরা। এভাবে বাগদাদ মঙ্গোলদের হস্তগত হয়। হালাকু খান খলিফাকে হত্যার নির্দেশ দেন।

মনীষী নাসিরুদ্দিন আল তুসির জীবন ও অবদান সম্পর্কে জানতে হলে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় জেনে রাখা উচিত বলে মনে করছি ৷ মধ্যযুগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইয়ের ভাণ্ডারটি ছিল বাগদাদে। নাম ছিল বাইতুল হিকমাহ বা 'হাউস অব উইজডম' । বিশ্বের তাবৎ পণ্ডিতকে এখানে আমন্ত্রণ জানানো হতো। জ্ঞানচর্চার ছিল এক মহামিলনক্ষেত্র। গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, ভূগোল ও মানচিত্র অঙ্কনবিদ্যা বেশি চর্চা হতো এখানে। ভারতীয়, গ্রিক ও পারস্যের অমূল্য গ্রন্থ সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া হতো। সংগ্রহের পর সেগুলো অধ্যয়ন ও আলোচনা চলত দিনের পর দিন। অনুবাদ করার কাজও চলত সমানতালে। প্রায় দেড় শ বছর ধরে বায়তুল হিকমাহতে গ্রিক ও সংস্কৃত ভাষার নানা বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদের কাজ চলে। পিথাগোরাস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, হিপোক্রিটাস, ইউক্লিড, চরক, আর্যভট্ট বা ব্রহ্মগুপ্তের লেখা অনুবাদ করা হয়েছে। হিকমাহর পণ্ডিতরা আবিষ্কারে উৎসাহী ছিলেন। তাঁরা প্রাচীন লেখনীগুলো বোঝার সুবিধার্থে টীকা-টিপ্পনী যোগ করতেন। ব্যাখ্যা হাজির করতেন। অনেক ক্ষেত্রে শিরোনাম ও পরিভাষাও বদল করেছেন। মঙ্গোলরা ১২৫৮ সালে খলিফা আল মুসতাসিমকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। খলিফা রাজি না হওয়ায় হালাকু খান বাগদাদ অবরোধ করেন। ১২ দিন অবরোধের পর মঙ্গোলদের কাছে বাগদাদ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এরপর মঙ্গোলরা বাগদাদে প্রবেশ করে নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে। খলিফাসহ শহরের অসংখ্য বাসিন্দাকে হত্যা করে। শহর জনশূন্য হয়ে পড়ে। বাগদাদের অন্য গ্রন্থাগারের সঙ্গে বাইতুল হিকমাহও আক্রমণকারীদের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এ সময় বাইতুল হিকমাহর অসংখ্য বই টাইগ্রিস নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। বলা হয়, এত বিপুল বইয়ের কালিতে টাইগ্রিস নদীর পানি কালো হয়ে যায়। তবে অবরোধের আগেই মনীষী নাসিরুদ্দিন আল তুসি প্রায় ৪০ হাজার পাণ্ডুলিপি অন্যত্র সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।

মঙ্গোলদের বাগদাদ বিজয় সম্পন্ন হলে তুসিকে উত্তরপূর্ব ইরানের মারাকেহ শহরে একটি মানমন্দির বা মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন নাসিরুদ্দিন আল তুসি নিজেই এই বিজ্ঞান মানমন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ ধরনের মানমন্দির নির্মাণের নানা কল্যাণ ও সুবিধা সম্পর্কে হালাকু খানকে অবহিত করেছিলেন তুসি। হালাকু খান প্রকল্পটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল জানতে পেরেও তুসির পরামর্শ গ্রহণ করে।

অন্য একদল ঐতিহাসিক মনে করেন এই মানমন্দিরটি নির্মাণের পরিকল্পনাকারী ছিলেন মঙ্গোল শাসক মানাকু কাআন। এই মানাকু কাআনই হালাকুকে ইরান আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা আরও মনে করেন হালাকু ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক এবং হালাকু নিজে ইউক্লিডিয় জ্যামিতিতে কিছুটা দক্ষ ছিলেন। মানাকু খাজার ব্যাপক জ্ঞানের কথা জানতে পেরে তাকে মঙ্গোলিয়ায় পাঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ পাঠান হালাকুর কাছে যাতে সেখানে একটি মানমন্দির নির্মাণ করা যায়। কিন্তু মঙ্গোল শাসক সে সময় দক্ষিণ চীনে অভিযান চালানোর কথা ভাবছিলেন। আর হালাকু খাজার গভীর জ্ঞানের ব্যাপারে আস্থাশীল ছিল বলে মঙ্গোল রাজা ইরানেই ওই মানমন্দির নির্মাণ করা বেশি যৌক্তিক হবে বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছেন।

মারাকেহ শহরের একটি পাহাড়ের ওপর ওই মানমন্দির নির্মাণের জায়গা ঠিক করা হয়। তুসির দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী এই মানমন্দির নির্মাণের জন্য সে যুগের বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার বা স্থাপত্যবিদ আবুল সা’দাত আহমাদ ইবনে ওসমান মারাকিহকে নিয়োগ দেয়া হয়। এই মানমন্দিরের উন্নয়নের কাজও সরকারি অর্থে পরিচালিত হত। মানমন্দিরের নির্মাণ কাজ তদারকের জন্য তুসি তিন বার সফর করেছিলেন। এইসব সফরে তিনি ওই মানমন্দিরের জন্য কয়েকটি বই ও পর্যবেক্ষণের যন্ত্রপাতিও সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের জন্য জ্যোতির্বিদ্যায় ব্যবহৃত কয়েকটি সারনিও রচনা করেন।

গণিতে অসাধারণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন নাসিরুদ্দিন আল তুসি। তিনি এ বিষয়ে কয়েকটি বই লিখে গেছেন। এ বইগুলো ছিল সৃষ্টিশীলতা ও উদ্ভাবনে ভরপুর। তুসি-ই প্রথমবারের মত তার একটি বইয়ে ত্রিকোনোমিতি শাস্ত্রকে জ্যোতির্বিদ্যার আশ্রয় না নিয়েই বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। গনিতের সূত্র বা বিধানগুলো ও সেসবের নানা রূপ নির্ণয়ে তিনি অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। সমতল জ্যামিতির নানা মূলনীতি ও তত্ত্ব পুরোপুরি আয়ত্ত্ব করেছিলেন তুসি, সমান্তরাল জ্যামিতির রেখাগুলো সম্পর্কিত তত্ত্বকে তিনি বিন্যস্ত করেছেন নানা যুক্তি ও সম্ভাবনার ভিত্তিতে যা তার আগের গণিতবিদরা ধারণা করতে পারেননি। তুসি ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বৃত্তাকার বা গোলক-আকৃতি বিশিষ্ট ক্ষেত্রের ত্রিভূজে আয়তক্ষেত্রের ৬ ধরনের অবস্থা নির্নয় করেন। তিনি ত্রিকোনোমিতি বিষয়ে যেসব গবেষণা করেছেন তা আধুনিক যুগের এ সংক্রান্ত গবেষকদের গবেষণার সঙ্গে মিলে যায়। আর এ জন্যই ত্রিকোনোমিতি শাস্ত্রের আলোচনায় নাসিরুদ্দিন আল তুসির নাম অমর হয়ে আছে।

নাসিরুদ্দিন আল তুসি ইউক্লিড, আর্কিমিডিস ও টলেমির মত বড় বড় গণিতবিদের গাণিতিক কর্মের ওপর ব্যাখ্যামূলক বই লিখেছেন। তুসি তাদের গাণিতিক কর্মগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং অর্থ অত্যন্ত সহজ ভাষায় তুলে ধরেছেন এইসব বইয়ে। এভাবে তিনি তার যুগের ও পরবর্তী যুগের গণিত-শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের জন্য গণিত শাস্ত্রকে অপেক্ষাকৃত সহজ করে দিয়ে গেছেন। তুসি অতীতের গণিত বিষয়ের অনুবাদ বইগুলোর অনেক কিছুই সংশোধন করেছেন। এইসব বই অনুবাদ করা হয়েছিল গ্রিক থেকে আরবি ভাষায়।

জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে নাসিরুদ্দিন আল তুসির সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দু’টি বই হল ‘জিজে ইলখানি’ বা ইলখানি সারণী এবং ‘তাজকিরা ফি ইলমুল ইলাহিয়্যাত’ বা আসমানি বিদ্যার কথা। শেষোক্ত বইটি তথা ‘তাজকিরা ফি ইলমুল ইলাহিয়্যাত’ শীর্ষক বইটিতে খাজা টলেমির জ্যোতির্বিদ্যার সমালোচনা করেছেন। টলেমির জ্যোতির্বিদ্যার এমন পরিপূর্ন সমালোচনা আর কোথাও দেখা যায় না। ফলে তুসির এ বইটি গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি সম্পর্কিত গণিতের আদর্শ বই হিসেবে বিবেচিত হয়। এ বইটি খুব সম্ভবত বাইজান্টাইন জ্যোতির্বিদদের লেখনীর সূত্রে কোপার্নিকাসের কাছে পৌঁছেছিল। আর কোপার্নিকাস তাতে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত নতুন কিছু তথ্য যুক্ত করেন। অবশ্য সূর্য যে আমাদের এই সৌরজগতের কেন্দ্র -এই ধারণাটি এ বইয়ে উল্লেখ করা হয়নি।

নাসিরুদ্দিন আল তুসির তৈরি-করা জ্যোতির্বিদ্যার সারণিগুলো ছিল মানের দিক থেকে অনন্য। মারাকেহ’র মানমন্দিরে কাজ করেছেন বিপুল সংখ্যক গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ। এই পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সুবিধার একটি বড় দিক ছিল এটা যে এখানে একটি বড় লাইব্রেরি ছিল যাতে চার লাখেরও বেশি বই ছিল। এই বইগুলোতে ছিল শিক্ষামূলক নানা বিষয়। তুসি তার এই বিজ্ঞান-গবেষণাগার ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ব্যবহার করতে বিশ্বের নানা দেশের জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত, বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। নাসিরুদ্দিন আল তুসির এই প্রতিষ্ঠানে মূলত তাত্ত্বিক বিজ্ঞান ও গণিতের ওপর জোর দেয়া হত যা জ্যোতির্বিদ্যার মূল ভিত্তি। এখানে দর্শনের ছাত্রদেরকে দৈনিক তিন দিরহাম, চিকিৎসা শাস্ত্রের ছাত্রদের দুই দিরহাম এবং ধর্মতত্ত্বের ছাত্রদের দেয়া হত এক দিরহাম। আর হাদিসের ছাত্রদের দেয়া হত দৈনিক আধা দিরহাম। তুসির উদ্যোগে চালু হওয়া এই বৃত্তি ১৩ বছর পর্যন্ত চালু ছিল।

তুসির বিজ্ঞান-কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার আগেই মারা যায় হালাকু খান। ফলে রাজ-সিংহাসনে বসেন যুবরাজ। প্রথম দিকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে চেয়েছিল এই যুবরাজ। কিন্তু তুসির চেষ্টা ও পরামর্শে যুবরাজ ক্ষমতা গ্রহণ করে। আর এর পাশাপাশি মানমন্দির নির্মাণের কাজ চালিয়ে যান তুসি ও তার সহকর্মীরা। খাজা নাসিরুদ্দিন আল তুসি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এই গবেষণা-কেন্দ্রের তৎপরতাকে সম্ভাব্য যে কোনো বাধা ও বিপত্তি থেকে রক্ষার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করে যান।

তথ্যসূত্র :

"Tahdhib al-Ahkam & al-Istibsar"
-by I.K.A. Howard.

"Nasir al-din Tusi & his socio-politicalrole in thirteenth century"
- by Abbas Ali Shameli

এবং ইন্টারনেট ৷

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত