শততম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

নেলসন ম্যান্ডেলা

‘শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীকে বদলে ফেলা যায়।’- ম্যান্ডেলা

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০১৮, ১৩:০৫

১.
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা, অনুকরণীয় মানবতাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নেলসন ম্যান্ডেলা। মানবতাবাদী নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এবং এক নোবেল পুরস্কার বিজয়ী নাগরিক। ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই। শততম জন্মদিনে মানবতাবাদী মহান এই নেতার স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। উল্লেখ্য যে, তিনি ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ৯৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ‘অ্যাপার্টহাইড’ নামে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই-এর কারণে ২৭ বছর জেল খেটেছেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তিনি ১৯৯০ সালে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন, এর চার বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং মাত্র একটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন, যা আফ্রিকার রাজনীতিতে বিরল এক ঘটনা। নেলসন ম্যান্ডেলা সবসময়ই ছিলেন বিশ্ববাসীর হৃদয়ে, মননে, যেমনটি তিনি আজো আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকাবাসীর মতো বিশ্ববাসীও আজ মনে করবে এই মহানায়ককে, প্রিয় মাদিবাকে। ৯৫ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে ম্যান্ডেলা ৬৭ বছর ব্যয় করে গেছেন মানবসেবায়। বর্ণবাদের নিগড় থেকে দেশকে মুক্ত করতে দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে ২৭ বছর কারাভোগ করেন ম্যান্ডেলা। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে মুক্তি দেয় তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকার। এরপর ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে জয় পেয়ে ইতিহাসে নাম লেখান নেলসন ম্যান্ডেলা। ১৯৯৪ সালের ১০ মে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি। প্রতিশ্রুতি মতো মাত্র এক মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে ১৯৯৯ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অব্যাহতি নেন তিনি। এর আগে ১৯৯৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা এক বিবৃতিতে বিশ্বের বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী আন্দোলনের প্রবাদপ্রতিম নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা স্মরণে যথার্থই বলেছেন, ‘প্রিয় মাদিবাকে স্মরণের আগে চলুন আমরা সবাই আরও একবার এই অঙ্গীকার করি-একতা, শান্তি, উন্নতি, অগ্রগতি ও পুরো দক্ষিণ আফ্রিকাবাসীর জন্য একটি সুন্দর জীবনের যে স্বপ্ন তিনি দেখতেন, তা নিজেদের মধ্যে ধারণ করব।’ উল্লেখ্য, বর্ণবাদ বিরোধিতার নামে তিনি জীবনভর লড়েছেন বিচিত্র রঙে রঙিন এক পৃথিবীর স্বপ্ন বুকে নিয়ে। ছিলেন বৈচিত্র্যের উপাসক, তাকে চিনেছিলেন সুন্দরের উৎস হিসেবে। প্রতিশোধ আর ঘৃণায় উন্মত্ত পৃথিবীতে তিনি হিংসার আগুনে ঢেলেছিলেন শান্তির জলধারা, উদাহরণ হাজির করেছিলেন ‘সমন্বয়’র এক বাস্তবতা প্রতিষ্ঠা করে। আমৃত্যু বিচিত্র পৃথিবীর সত্য-সুন্দর-শুভ আর মঙ্গলের পক্ষে লড়াই করা সেই মানুষ নেলসন ম্যান্ডেলার শততম জন্মবার্ষিকী আজ। আজ থেকে ১০০ বছর আগের আজকের এই দিনে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন পৃথিবীকে আলোকিত করতে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ম্যান্ডেলার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার দেশে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সে দেশে গেছেন ম্যান্ডেলার শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে। জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্বই আজ স্মরণ করছে কিংবদন্তি ম্যান্ডেলাকে। ম্যান্ডেলার শততম জন্মদিনে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গে এক বিশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। সফররত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন। জাতিসংঘ দিনটিকে উদযাপন করবে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে। ২০১০ সালে জাতিসংঘ ১৮ জুলাইকে ম্যান্ডেলা দিবস ঘোষণা করে। সারা বিশ্বেই স্মরণ করা হবে ম্যান্ডেলার স্মৃতি। 

২.
‘এই পৃথিবীকে যে রকম দেখছ, তোমাকে সেটাই মেনে নিতে হবে- এমন কোন কথা নেই। আমাদের কাজ হবে আমরা যে রকম পৃথিবী চাই, যে পৃথিবী আমাদের পছন্দ, তা খুঁজে নেয়া।’ এ উক্তিটির মাধ্যমে আজকের তরুণ সমাজকে সুন্দর বিশ্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। জীবন্ত কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলা সারাবিশ্বের সকল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, জাতির কাছে অন্যায়ের প্রতিবাদের এক মূর্ত প্রতীক। তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে সুন্দর সকল সৃষ্টির এক অনুপ্রেরণাকারী ব্যক্তিত্ব। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি পদক্ষেপ, কর্মসূচী, উক্তি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অনুপ্রাণিত করে; সাহস যোগায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার। শোষণ-বঞ্চনাহীন, শ্রেণী-বর্ণ বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার জন্য মনে সৃষ্টি করে এক গভীর প্রত্যয়। 

৩.
আজন্ম সংগ্রামী দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী কিংবদন্তি নেতা ও বিশ্বের শোষিত মানুষের কণ্ঠস্বর নেলসন ম্যান্ডেলা। দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে যিনি কখনও বিশ্রাম নিতে চাননি। ম্যান্ডেলাকে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সংগ্রামটা শুরু করেছিলেন সেই ২২ বছর বয়সে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে। ১৯৪৮ সালের পর তিনি দক্ষিণ আফ্র্রিকার ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল পার্টির বর্ণবাদ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তথাকথিত রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ম্যান্ডেলাকে ১৯৫১ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গ্রেফতার ও বিচার হয়। বিচারে তাকে নির্দোষ বলে রায় দেন আদালত। এরপর তিনি সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা আবার গ্রেপ্তার হন। তাকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৬৩ সালে এএনসি ও উমখনতু উইসিজির অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তাদের সঙ্গে ম্যান্ডেলাকেও সহিংসতার মাধ্যমে সরকার উৎখাতের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। কাঠগড়ায় তার দেওয়া বক্তব্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম বিশেষ গুরুত্ব সহকারে প্রচার করে। ১৯৬৪ সালের ১২ জুন আদালত ম্যান্ডেলাসহ তার সহযোগী আটজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। শ্বেতাঙ্গ শাসনামলে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগ করেন তিনি। ১৯৬২ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত তিনি কেপটাউনের রোবেন দ্বীপে নির্জন কারাবাসে কাটান। ১৯৮৮ সালে তাকে মূল ভূখণ্ডের ভিক্টর ভাস্টার কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যেই ১৯৮০ সালে ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্র“য়ারিতে তিনি কারামুক্ত হন। এর পর তিনি তাঁর দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সাথে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। এর ফলশ্র“তিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটে এবং সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে ১৯৯৪ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বরে পরিণত হন বর্ণবাদবিরোধী এই কিংবদন্তি। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন। তার আগে ১৯৯৩ সালে বিশ্বশান্তিতে অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার পান তিনি।

৪.
নিজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন, সারা পৃথিবীর মানুষের মঙ্গলের জন্য তাঁদের অন্যতম নেলসন ম্যান্ডেলা। সারা পৃথিবী যখন শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ ছিল, তখন এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলা আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন গণতান্ত্রিক একটি দেশ এবং এমন একটি সমাজের, যেখানে সব মানুষের অধিকার থাকবে সমান। সবাই যেখানে বাস করবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির জনক হিসেবে খ্যাত ম্যান্ডেলা ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁকে সে দেশের আধুনিক গণতন্ত্রেরও জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তিনিই দেশটির প্রথম নির্বাচিত কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। ২০০২ সালের ৭ মে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল গ্রহণের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন ‘আমাদের এইসব মানুষ জাতি-বর্ণ-গোত্র-নির্বিশেষে শান্তি, নিরাপত্তা আর সমতার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করবে। যেই পৃথিবীর প্রতিটি দেশ, একেকটি জাতি পরস্পরের সঙ্গে শান্তিতে থাকবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হবে সমতা’। তিনি জীবনাদর্শ দিয়ে এই কথাগুলো প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশ তার আদর্শের অনুসারী থাকলে আর কোনো বিভেদ দেখা দেবে না, জাতিতে ও দেশের অভ্যন্তরের রাজনৈতিক হানাহানিতে।

৫.
নেলসন ম্যান্ডেলা বাবাকে হারান মাত্র ৯ বছর বয়সে। ম্যান্ডেলা ছিলেন তাঁর পরিবারের প্রথম সদস্য, যার স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। স্কুলেই এক শিক্ষক তাঁকে নেলসন নামটা দিয়েছিলেন। তাঁর আসল নাম রোলিলালা দালিভুংগা ম্যান্ডেলা। অফ্রিকার কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার কেমন ছিল ছেলেবেলা তা তাঁর আত্মজীবনী ‘লং ওয়াক টু ফ্রিডম’ থেকে জানা যায়। আর সব শিশুর মতোই সাধারণ ছিল তাঁর শৈশব। বেড়ে উঠেছেন এক আফ্রিকান গ্রামে। সেই গ্রামের নাম কুনু। তবে এখানে জন্ম নেননি তিনি। জন্মেছিলেন কেপ প্রদেশের মাভেজু গ্রামে। ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই। জন্মের সময় তাঁর নাম রাখা হয়েছিল রোলিলালা। আফ্রিকানদের কাছে এই কথাটার মানে, যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আদর করে রাখা নামটি অবশ্য বদলে দেওয়া হয়েছিল। সেটি করেছিলেন তাঁর এক শিক্ষক। ম্যান্ডেলার বাবা ছিলেন এক গোত্রপতি। পরিবার নিয়ে তিনি একসময় কুনু গ্রামে চলে আসেন। ছোট্ট এই গ্রামটা ছবির মতো সুন্দর। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা নদী। গ্রাম থেকেই দেখা যায় দূরের সবুজ পাহাড়ের সারি। মাত্র ১০০ গ্রামবাসীর বসবাস। খুব গরিব সবাই। নিজেদের জমিতে ফসল ফলিয়েই দিন কাটে। মেয়েরাই সব করে। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে চাষবাস- সবই। সে গ্রামেই মা আর দুই বোনের সঙ্গে বেড়ে উঠেছিলেন ছোট্ট ম্যান্ডেলা। সারা দিন মাঠে টইটই করে ঘুরে বেড়াতেন। কাদামাটি দিয়ে খেলনা পুতুল বানিয়ে খেলতেন বন্ধুদের সঙ্গে। গুলতি দিয়ে পাখি শিকার করতেন, মৌমাছির চাক ভেঙে জোগাড় করতেন মধু, মাটি খুঁড়ে তুলতেন শিকড়-বাকড়, মাছ ধরতেন নদীতে, সাঁতার কাটতেন যখন খুশি তখন। ছেলেবেলায় বন্ধুর অভাব ছিল না। আত্মীয়স্বজনের সমবয়সী ছেলেমেয়েরা তো বটেই, পাড়া-প্রতিবেশীর ছেলেমেয়েরাও ছিল তাঁর বন্ধুবান্ধব। বাড়িতে ফিরেও সবাই মিলে হৈচৈ করতেন। গ্রামের সবার মতো থাকতেন কুঁড়েঘরে। ম্যান্ডেলাদের ছিল তিনটি কুঁড়েঘর। একটায় ঘুমাতেন, অন্যটায় রান্না করতেন মা আর বাকিটায় স্তূপ করে রাখা হতো নানা জিনিস। সারা দিন খেলাধুলা শেষে সন্ধ্যা নামলে বাড়ি ফিরে আসতেন। খাবারদাবার খেয়ে মায়ের সামনে বসে যেতেন গল্প শুনতে। রূপকথার গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়তেন। ভোর হলে খেয়েদেয়ে চলে যেতেন মাঠে গরু-ছাগল চড়াতে। মারামারিও করতেন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। লাঠালাঠি ছিল ভীষণ প্রিয়। পরতেন ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান পোশাক। পোশাকগুলো ছিল খুবই পুরনো। এমনকি ছেলেবেলায় পায়ে দেওয়ার জুতাও ছিল না। জমিতে ফসল ফলিয়ে খেতে হতো। প্রধান ফসল ছিল ভুট্টা। অন্যান্য খাদ্যশস্যের মধ্যে ছিল শিম আর কুমড়া। ফসল ফলানোর কাজ করতেন মেয়েরা। পুরুষরা সারা বছরই থাকতেন গ্রামের বাইরে। দূর-দূরান্তের কাজের খোঁজে যেতে হতো তাঁদের। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ কিংবা মাইনিং করাটা ছিল তাঁদের পেশা। বাড়ি আসতেন বছরে কেবল দুবার- ফসল তোলার সময়। যে কুঁড়েঘরে ম্যান্ডেলারা থাকতেন, সেখানে আসবাবের বালাই ছিল না। মাদুর পেতে ঘুমাতেন সবাই। তবে তাঁদের বাড়িটা সব সময় শিশুদের কোলাহলে পূর্ণ থাকত। একসঙ্গে বড় হয়েছেন আত্মীয়স্বজনের ছেলেমেয়েরা। খাবার ভাগাভাগি করে খেতেন। রাতে ঘুমাতেনও একই কম্বলের তলায়। তবে অন্যদের মতো ছেলেবেলাটা বেশিদিন হেসেখেলে কাটানোর সুযোগ হয়নি। পাঁচ বছর বয়সেই ভেড়া-বাছুর মাঠে চড়াতে হয়েছে। সারা দিন টইটই করে বেড়ানো ছেলেটার মধ্যে সেই বয়সেই গড়ে উঠেছে আফ্রিকার তৃণভূমি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর দিগন্তের প্রতি ভালোবাসা।

৬.
বরাবরই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হন ১৯৪৩ সালে এএনসির সঙ্গে যুক্ত হয়ে। আন্দোলনে নিজেকে এতটাই উৎসর্গ করেছিলেন যে একসময় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনেরই প্রতীক হয়ে ওঠেন নেলসন ম্যান্ডেলা। দীর্ঘদিন তাই জেলে থাকতে হয়েছে আজীবন মানুষের মুক্তিকামী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে। তবে কোনো কিছুই তাঁকে বিন্দুমাত্র দমাতে পারেনি। মুক্তির সংগ্রাম থেকে এক পাও পিছু হটেননি তিনি। তাঁর আন্দোলনের ফলেই আফ্রিকায় অবসান হয় বর্ণবাদের। দেশটির অবহেলিত কৃষ্ণাঙ্গরা পেতে শুরু করেন শ্বেতাঙ্গদের মতোই সমান অধিকার। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ পায় তাঁদের নতুন প্রজন্ম। অসামান্য এ অর্জনের মূল কারিগর নেলসন ম্যান্ডেলা গত চার দশকে ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর সব অবদানের মূলে রয়েছে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। তিনি অত্যাচার, ঘৃণার জবাব কখনো হিংসা দিয়ে দেননি। তিনি আজীবন মানুষকে ভালোবেসেছেন, ভালোবাসতে বলেছেন। ১৯৯৯ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তিনি। রাজনৈতিক সংগ্রাম থেকে অবসর নিয়ে শুরু করেন এইডসের বিরুদ্ধে নতুন যুদ্ধ। একই সঙ্গে চালিয়ে যান দারিদ্র্যের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ। ভালোবেসে অনেকেই তাই তাকে মাদিবা বলে ডাকে। স্বপ্নবান ও আশাবাদী সেই তিনি লং ওয়াক টু ফ্রিডম গ্রন্থে ম্যান্ডেলা লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার জন্য আমাকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমি স্বাধীনতার সুউচ্চ পাহাড়ে আরোহণ করেছি। পাহাড়ে উঠে আমি দেখতে পেলাম, আশপাশে আরও অনেক পাহাড় আছে। সেগুলোতেও উঠতে হবে আমাকে। আমি এখন যে পাহাড়ে আছি সেটা একটু বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা মাত্র। আমাকে ছুটতে হবে আরও অনেক দূর। এ পথে আসবে অনেক বাধা-বিপত্তি। তবুও আমাকে ছুটতে হবে। বিশ্রাম নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে একরাশ দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালন করতে আমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। আমার পথ এখনও শেষ হয়নি।’ জীবন্ত এ কিংবদন্তি মহানায়ক তার মানব কল্যাণমূলক কাজের জন্য নোবেল পুরস্কারসহ ভূষিত হয়েছেন আরও নানা পুরস্কারে। বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে তিনি ইচ্ছা করলে আরও বেশি সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি গণতন্ত্রকে সমন্বত রাখার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু শুরু করেন অন্য এক লড়াই। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত সকল মানুষের উপকারের জন্য পালন করতে থাকেন নানা কর্মসূচী। এইডস-বিরোধী কর্মসূচী, শিশু অধিকার কর্মসূচীসহ নানা কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে তিনি নিবেদিত হয়েছিলেন সুন্দর এক পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যেÑ যেখানে থাকবে না কোন শ্রেণী-বৈষম্য, থাকবে না বর্ণ-বৈষম্য, থাকবে শুধু সম্প্রীতি ও ভালবাসার সেতুবন্ধন। আজ তিনি অসুস্থ হয়ে প্রিটোরিয়া হাসপাতালে থাকলেও তাঁর আদর্শ, মানুষের প্রতি ভালবাসা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, তার সংগ্রামী জীবন আমাদের অনুপ্রাণিত করবে মানবকল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত করতে। অনুপ্রাণিত করবে সুন্দর এক বিশ্ব গড়ার। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের প্রার্থনা: তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন আবার তাদের মাঝে; নির্দেশ দিন সমাজের সব বৈষম্য নির্মূলের।

৭.
১৯৬২ সালের ১২ জুন ইতিহাসের একটি কালো দিন। ওই দিন একজন বিচারক দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। তথাকথিত এক বিচারের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে এ রায় দেওয়া হয়, যেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম সুযোগও দেওয়া হয়নি। ‘রিভোনিয়ার মামলা’ নামে খ্যাত এ মামলায় ম্যান্ডেলাকেসহ এএনসির ৮ নেতার বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাত ও উচ্চ পর্যায়ের দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। ম্যান্ডেলা দেশদ্রোহিতার অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রিটোরিয়ার সুপ্রিম কোর্টে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ১৯৬৪ সালের ২০ এপ্রিল ম্যান্ডেলা ব্যাখ্যা দেন কেন তিনি সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন। ১৯৬৪ সালের ১২ জুন ম্যান্ডেলা ও তার ৬ সঙ্গীকে রাষ্ট্রদোহিতা ও অন্তর্ঘাতের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর দু’দিন পর ১৪ জুন তাকে রোবেন দ্বীপের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ দিনটি ম্যান্ডেলার কারাদণ্ড দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

৮.
১৯৬২ সালের ৫ আগস্ট। দক্ষিণ আফ্রিকায় তখন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। ঢালু রাস্তা ধরে হাউয়িক শহরের দিকে আগাতে থাকে পুলিশবোঝাই ভি-এইট মডেলের একটি ফোর্ড গাড়ি। গাড়িটি আরেকটি প্রাইভেট গাড়িকে থামায়। এই গাড়ির চালকের আসনে বসা দীর্ঘদেহী এক কালো যুবক। পুলিশ ওই যুবককে তুলে নেয়। যুবকের নাম নেলসন ম্যান্ডেলা। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদী নেতা, যাঁর দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাজীবনের শুরু ওই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। ওই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় আন্দোলনের নেতা, শ্বেতাঙ্গ সরকারের ‘মোস্ট ওয়ানটেড’ ম্যান্ডেলার খবরাখবর কিভাবে পুলিশের কাছে পৌঁছাল, তা নিয়ে নিয়ে আজও দেশটিতে নানা বিতর্ক আছে। তবে বেশির ভাগেরই বিশ্বাস পুলিশের একার পক্ষে ম্যান্ডেলার খবর রাখা সহজ ছিল না। তাদের খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এক কর্মী সম্প্রতি সরাসরিই বললেন, আসলেই ওই গ্রেপ্তারের পেছনে সিআইয়ের হাত ছিল। ডেনিস গোল্ডবার্গ নামের ওই কর্মীর বরাত দিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ডেনিস গোল্ডবার্গের দাবি, ম্যান্ডেলা কোথায় আছেন সে খবর দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে ফাঁস করে দেন সিআইএর কর্মকর্তারা। ওই সময়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির দিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা প্রত্যেকে প্রত্যেককে চিনত, একসঙ্গে মিলে মদ্যপান করত।’ এর আগেও সংবাদমাধ্যমে খবর বের হয়, ম্যান্ডেলার গ্রেপ্তারের সঙ্গে সিআইএ জড়িত ছিল। ম্যান্ডেলাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ওই সময়ে মার্কিন কূটনীতিক ডোনাল্ড রিকার্ডকে গর্ব করতেও দেখা গেছে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল রিকার্ডের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে ডেনিসের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। আর সিআইএ ব্যাপারটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। গ্রেপ্তারের দিন ম্যান্ডেলা ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন এক কম্পানির মালিকের ব্যক্তিগত গাড়ির চালকের। মালিককে জোহানেসবার্গে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে ম্যান্ডেলা তাঁর আত্মজীবনী ‘লং ওয়াক টু ফ্রিডম’-এ নিজের গ্রেপ্তারের জন্য কাউকে সরাসরি দায়ী করেননি। বরং বলেছেন, নিজের ভুলের কারণেই তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন, ‘ওই গ্রেপ্তারের জন্য আমি কাউকে দায়ী করতে পারি না। তবে ঘটনাটি বিস্ময়কর ছিল। অন্তত এত তাড়াতাড়ি আমার গ্রেপ্তার হওয়ার কথা ছিল না।’ 

৯.
বিশ্বের বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব নেলসন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদ-পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি। ২০০২ সালের ৭ মে নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল গ্রহণের অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথি, সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। আন্তরিক ধন্যবাদ। আজ আপনাদের সামনে কথা বলতে পেরে আমি আনন্দিত। সত্যি বলতে, আমি আজ রীতিমতো দ্বিধান্বিত। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রথিতযশা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন আমাকে সম্মানিত করতে যাচ্ছে আপনারা নাকি আমাকে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল প্রদান করবেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ কয়েদিকে কেন এই সম্মান দেবেন যার নেই কোনো অফিস, যে এখন শক্তিহীন, কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করার কোনোই ক্ষমতা নেই। সেই আমাকে কেন আপনারা সম্মানিত করছেন আপনাদের এই সম্মান আপনাদের বিনয়মাত্র। আমার মতো ধূসর চুলওয়ালা একজন বয়স্ক লোককে সম্মান দেখানোর জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমি আপনাদের বিনয়ের সঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা আজ নিউইয়র্কে জড়ো হয়েছি জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক বিশেষ অধিবেশনের জন্য। আমার মনে হচ্ছে, সেই অধিবেশন চলাকালে এই সম্মাননা আমার জন্য বিশেষ কিছু। আমি সারা বিশ্বের সব শিশুর হয়ে এই সম্মাননা নিতে চাই। এই শিশুরাই তো আমাদের আগামী। আমাদের স্বপ্ন আর প্রত্যাশা তো তাদের ঘিরেই। আমার প্রজন্মের লোকদের শুধু একটা কাজ গভীর মনোযোগ দিয়ে করে যেতে হবে। আর তা হলো, আমাদের শিশুদের জন্য আগামীর পৃথিবীকে সুন্দর করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। তারা যেন তাদের পৃথিবীতে খুব ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে, নিঃশ্বাস নিতে পারে, সেদিকেই আমাদের নজর দিতে হবে। একটা বিষয় আমাদের জন্য বেশ হতাশাজনক। একুশ শতকের প্রথম ভাগে পা রেখেও আমাদের ‘সবার জন্য সুন্দর পৃথিবী’ শ্লোগান নিয়ে আকুতি জানাতে হয়। বিশ শতকেই তো আমরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, জ্ঞানজগতে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলাম। তার পরও আমরা কেন পিছিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই নতুন পৃথিবী তৈরি করবেন বলে বিশ্বাস রাখেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা অন্যরকম এক সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করব। যেখানে থাকবে না কোনো দারিদ্র্য। সেই পৃথিবীতে অসাম্যের কোনো কু-ছায়া থাকবে না। আমাদের সেই পৃথিবীতে সব মানুষ জাতিবর্ণগোত্র-নির্বিশেষে শান্তি, নিরাপত্তা আর সমতার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করবে। যেই পৃথিবীতে প্রতিটি দেশ, একেকটি জাতি পরস্পরের সঙ্গে শান্তিতে থাকবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হবে সমতা। কিন্তু বর্তমানে আমরা সেই পৃথিবী থেকে অনেক দূরে বাস করছি। আমাদের বাস্তবতা এখন ভিন্ন কথা বলে। এই পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা আজ ক্রমাগত দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। বঞ্চনা আর অত্যাচারের মধ্যে কাটছে প্রতিটি মানুষের দিন। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ আর সংঘাত কেড়ে নিচ্ছে অজস্র প্রাণ। দেশে দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে ক্রমাগত। ধনী দেশগুলোর সঙ্গে গরিব দেশগুলোর দূরত্ব আজ সহস্র যোজন। সত্যিকারের সর্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমরা ক্রমাগত লড়ে যাচ্ছি। আমাদের শিশু, তরুণ প্রজন্ম এবং আগামী প্রজন্মকে এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে হবে। আমরা যা পারছি না, সেটা তাদের করে দেখাতে হবে। এই বাধা প্রতিবন্ধকতাকে তাদের জয় করতে হবে। এ জন্যই আমি আমার এই সম্মাননা আগামীর সেই যোদ্ধাদের উৎসর্গ করতে চাই। বর্তমান পৃথিবীর সার্বিক অবস্থার চিত্র আমাদের ধারণার থেকেও মলিন। সে জন্য আমাদের হতাশ হলে চলবে না। নিজেদের হতাশার চাদরে জড়িয়ে ফেললে চলবে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু করে যাওয়ার ক্ষমতা আছে। আমাদের সেই শক্তি সর্ম্পকে জানতে হবে, সেই কর্মক্ষমতা দেখিয়ে কিছু করতে হবে। পরির্বতন করতে হবে সমাজকে, সময়কে। আমাদের পৃথিবীতে জমে থাকা দারিদ্র্য আর অত্যাচারের মাত্রা বাড়ছে ক্রমাগত। উন্নয়নশীল দেশ ও আফ্রিকা মহাদেশের সাধারণ মানুষ দারিদ্র্যের ভার বহন করে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের কথা অবহেলার চোখে দেখা হতো। কিন্তু আস্তে আস্তে সেই ধারণা বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে বিভিন্ন দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাজনীতিবিদদের আচরণ। তাঁরা এখন দরিদ্র মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন। উন্নত দেশগুলোর মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ এখনো উপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এখনকার তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বই পারে সেই শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করতে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নাগরিকদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা আর অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে তারাই পুনঃ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বদলে দিতে পারে পৃথিবীকে। এই তরুণ নেতারাই হবে তাদের দেশের ভবিষ্যতের কারিগর। পারস্পরিক সহযোগিতা বর্তমান পৃথিবীর একটি আলোচিত ধারণা। আমরা সারা পৃথিবীর আলোচিত ব্যক্তিত্বদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাদের সহযোগিতায় আমরা দিকনির্দেশনা পেতে পারি। আমাদের শিক্ষা খাতে তারা অবদান রাখতে পারে। একটি দেশের প্রকৃত উন্নয়নে শিক্ষা খাতের উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। উন্নত শিক্ষাই পারে উন্নত নাগরিক তৈরি করতে। আফ্রিকার উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই। আফ্রিকাসহ সারা বিশ্বে যাঁরা শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন আমি তাদের ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের কাজ আমাকে বেশ উৎসাহ দেয়। আমি এই সম্মাননা পদক থেকেও আপনাদের কাজকে সম্মানের চোখে দেখি। আপনারা তো পৃথিবী বদলে দেওয়ার কাজ করছেন। আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনাদের সবাইকে আবারও ধন্যবাদ জানাই।’

১০.
এবার শিক্ষাব্রতী ম্যান্ডেলার কিছু কথা জানা যাক। ১৯৮৭ সালে ৬৯ বছর বয়সে ম্যান্ডেলা নতুন উদ্যমে পড়াশোনা শুরু করে ১৯৮৯ সালে ডিগ্রি লাভ করেন। নেলসন ম্যান্ডেলা ১৯৪০ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ফোর্ট হেয়ার থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকাতে নাম লেখান। একই সঙ্গে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাতেও যোগ দিতে শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব উইটওয়াটার্র্সযান্ড থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করে এলএলবিতে ভর্তি হন। ৩৬ বছর পর কারাগারে পরীক্ষা দিয়ে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। নেলসন ম্যান্ডেলা ৭১ বছর বয়সে গ্র্যাজুয়েশন করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে ল্যাটিন (স্ট্যান্ডার্ড) ওয়ান বিষয় অধ্যয়ন থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য যে আবেদন করেন তার গুরুত্ব বিবেচনা করে পত্রটি উল্লেখ করা হলো।- ‘টু দ্য ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা, ২২ ডিসেম্বর, ১৯৮৭, নিম্নলিখিত কারণে ল্যাটিন (স্ট্যান্ডার্ড) ওয়ান বিষয় অধ্যয়ন থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন করছি: আমি যদিও ১৯৩৮ সালে এ বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেছি এবং ১৯৪৪ সালে একই বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব উইটওয়াটার্র্সযান্ড থেকে বিশেষ কোর্স অধ্যয়ন করে পরীক্ষায় পাস করেছি, এখন কার্যত সবই ভুলে গিয়েছি। আমাকে যদি ল্যাটিন ওয়ান কোর্সটি করতে বাধ্য করা হয়, একেবারে প্রথম থেকেই শুরু করতে হবে। ৬৯ বছর বয়সে এই দায়িত্ব নেওয়া আমার জন্য বাস্তবিকই অত্যন্ত কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার হয়ে উঠবে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে নয় বছর আমি উকিল হিসেবে আদালতে চর্চা করেছি। আমি যদি আবার ওকালতি পেশায় ফিরে যেতে চাই, সবার আগে ল্যাটিন কোর্সের ডিগ্রির কোনো প্রয়োজনই হবে না। তবে প্রকৃত সত্য হচ্ছে, উকিল কিংবা অ্যাটর্নি হিসেবে ওকালতি চর্চার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আমি যদি ভবিষ্যতে ওকালতি করার কথা ভেবে থাকি, তা-ও কখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ, আমি কারাগারে যাবজ্জীবন দণ্ড ভোগ করছি। আপনি যদি অনুগ্রহ করে আমার আবেদন মঞ্জুর করেন, আমি ল্যাটিন ওয়ানের পরিবর্তে ‘আফ্রিকার রাজনীতি’ অধ্যয়নের প্রস্তাব রাখছি।’

১১.
এত ভালোবাসা তবু আমিনা হয়নি ম্যান্ডেলার। আমিনা ক্যাচালিয়া। হতে পারতেন নেলসন ম্যান্ডেলার জীবনসঙ্গী। নিজ মুখে ম্যান্ডেলা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। গ্রহণ করেননি আমিনা। সবিনয়ে বলে দিয়েছেন, না, ম্যান্ডেলা এ সম্ভব নয়। জগৎজোড়া খ্যাতি যার, যার মাথায় শান্তির নোবেল মুকুট সেই ম্যান্ডেলার বিয়ের প্রস্তাব মুখে মুখে ফিরিয়ে দিলেন আমিনা। কে এই আমিনা কেন তিনি ফিরিয়ে দিলেন ম্যান্ডেলাকে প্রথম প্রশ্নের উত্তর হয়তো অনেকেরই জানা। আমিনা ক্যাচালিয়া ছিলেন ম্যান্ডেলার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। যার রান্নাঘর পর্যন্ত প্রবেশ ছিল ম্যান্ডেলার। গভীর ভাবাবেগ নিয়ে আমিনার বাড়ি ছুটে যেতেন তিনি। আমিনার পক্ষেও তাই। কৃতিত্বে, অভিজ্ঞতায় ম্যান্ডেলা মহাসমুদ্র আর আমিনাকে বলা চলে নদী। তবুও সমুদ্র-নদীর মোহনায় শেষ জীবনের বসত গড়তে চেয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। আমিনা মোহনায় গাঁটছড়া বাঁধতে চাননি। তিনি ম্যান্ডেলা নামক মহাসমুদ্র জয় করতে চেয়েছেন। তবে অবশ্যই আপন বৈশিষ্ট্য অক্ষুণœ রেখে, ঠাই-ঠিকানার সুতো না ছিঁড়ে। এসব তথ্যের সত্যতা নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ আছে বৈকি। কিন্তু আমিনার আত্মজীবনী ‘হোয়েন হোপ অ্যান্ড হিস্ট্রি রায়িম’ এ বিভ্রান্তি দূর করে দেয়। আত্মজীবনীটি জুন, ২০১৩-এর গোড়ার দিকে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ম্যান্ডেলার সঙ্গে গভীর সম্পর্কের বিষয়টি অকপটে বলেছেন আমিনা। সম্পর্কের বিষয়ে আরও কিছু বলার আগে আমিনার পরিচয় যথাসম্ভব বলে নেয়া ভালো। আমিনা কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন। বেশি দিন নয় মাস পাঁচেক আগে তারিখ ৩১ জানুয়ারি, ২০১৩। বিদায়বেলায় আমিনার বয়স ছিল ৮২ বছর। এর ঠিক ১৮ বছর আগের ঘটনা। মে ১৯৯৫। আমিনার স্বামী ক্যাচালিয়া মারা যান। আমিনা তার স্বামীর প্রতি যথেষ্ট দায়িত্বশীল ছিলেন বলে জানা যায়। আমিনার ছেলে গালের ক্যাচালিয়া ও মেয়ে কো কো ক্যাচালিয়া তাদের বাবা-মায়ের সুসম্পর্কের কথা বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন। স্বামী হারানোর আঘাতে আমিনা যখন শোকের জলে ভাসছেন ম্যান্ডেলা তখন নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে দাঁড়ান তার সামনে। এখানে আরেকটু বলা প্রয়োজন, আমিনার স্বামী ক্যাচালিয়া ছিলেন ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক সঙ্গী। সেই সুবাদে আমিনার বাড়িতে যাতায়াত ছিল ম্যান্ডেলার। এম অ্যান্ড জি-তে দেয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে আমিনার মেয়ে কো কো বলেছেন, ‘আমরা জানতাম আমাদের মাকে ম্যান্ডেলা ভীষণ পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।’ কো কোর স্পষ্ট দাবি, তাদের বাড়িটি ছিল ম্যান্ডেলাময়। এমনকি তাদের বাবার মৃত্যুর সময়ও ম্যান্ডেলা সব সময় তাদের পাশে থেকেছেন। কো কো আরও বলেছেন, তার বাবার সঙ্গে নিবিড় রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও তার মায়ের সঙ্গে তার চেয়েও বেশি ব্যক্তিক সম্পর্ক ছিল। আমিনার ছেলে গালেব তার মায়ের আত্মজীবনী লিখতে সাহায্য করেছিলেন। সম্প্রতি দ্য মেইল এবং গার্ডিয়ান পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমিনা ম্যান্ডেলার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা জানাতে চাইলেও ম্যান্ডেলার দেয়া বিয়ের প্রস্তাব সম্পর্কে কিছুই তার আত্মজীবনীতে লিখতে চাননি। তবে তাদের দুই ভাই-বোনকে একদিন তাদের মা ডেকে বলেছিলেন, ‘মাদিবা (ম্যান্ডেলা) তাকে বিয়ে করতে চান।’ সে সময় ধীরচিত্তে আমিনা তার প্রস্তাবে সাড়া দেয়া থেকে বিরত থাকেন। গালেব বলেন, তার মা কখনোই তার অতীতকে, তার অস্তিত্বকে হারাতে চাননি। স্বামীর স্মৃতিটুকু আঁকড়ে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। তবে ম্যান্ডেলাকে নিয়ে আমিনার ভাবাবেগেরও অন্ত ছিল না। আমিনার স্বামী যখন মারা যান, সে সময় ম্যান্ডেলার দ্বিতীয় স্ত্রী উইনি মাদিকিজেলার সঙ্গে প্রায় ছাড়াছাড়ি অবস্থা। পরের বছরই ম্যান্ডেলা উইনিকে তালাক দেন এবং গ্রাসা ম্যাশেলকে বিয়ে করেন। কিন্তু এত ভালোবাসা জমিয়েছিলেন যার জন্য, সেই আমিনা হননি ম্যান্ডেলার। এতদিন এ নিয়ে আলাপ না হলেও আমিনার আত্মজীবনীই বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিল ম্যান্ডেলার গোপন ভালোবাসার কথা। অবশ্য এ নিয়ে ম্যান্ডেলা পরিবার কোন মন্তব্য করেনি।

১২.
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত প্রিয় এই নেতা বক্তা হিসেবে ছিলেন দারুণ। তার অন্যতম এক বিখ্যাত উক্তি ১৯৬৪ সালে রিভোনিয়া ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি চলাকালে প্রদান করা বক্তৃতা থেকে গ্রহণ করা হয়, যেটিতে তিনি বলেন। 'আমি সাদাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি এবং আমি কালোদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমি আদর্শিক গণতন্ত্র এবং মুক্ত সমাজের প্রশংসা করি, যেখানে সকল ব্যক্তি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে এবং সমান সুযোগ লাভ করবে। এটি হচ্ছে একটি আদর্শিক অবস্থান, যার মধ্যে দিয়ে বাঁচা দরকার এবং আমি তা অর্জনের আশা করি, কিন্তু এটি এমন এক আদর্শ, যদি প্রয়োজন পড়ে, তার জন্য আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত।' রিভোনিয়া মামলায় প্রদান করা বক্তৃতা ছাড়াও, সারা জীবন তিনি অনেক স্মরণীয় এবং জ্ঞানগর্ভ উক্তি করেছেন। মৃত্যুর পরেও তিনি টুইটার ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে তাঁর বাণী তুলে ধরছেন। নেলসন ম্যান্ডেলার ১৭টি জ্ঞানগর্ভ উক্তি যা সকলের পাঠ করা উচিত বলে মনে করি। 

সে রকমই জ্ঞানগর্ভ কিছু উক্তি পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো :

১. আমার সফলতার ভিত্তিতে আমাকে বিচার ক'রো না, আমাকে বিচার করো আমার ব্যর্থতা এবং ব্যর্থতার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ভিত্তিতে। ২. আমি সাধু নই, তবে যদি সাধুকে এমন এক পাপী হিসেবে বিবেচনা কর, যে সৎ হবার জন্য তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তাহলে আমি তাই। ৩. ঘৃণা মনকে অন্ধকার করে দেয়। কৌশলের পথ রুদ্ধ করে দেয়। নেতাদের ঘৃণা করা সাজে না। ৪. যদি কেউ ঘৃণা করতে শেখে তাহলে সে ভালোবাসা শিখে নিতে পারে। ঘৃণা নয়, মানব হৃদয়ে স্বাভাবিকভাবে ভালোবাসার জন্ম হয়। ৫. ঘৃণা নিয়ে কেউ জন্ম গ্রহণ করে না। ৬. সাহসী মানুষের শান্তির জন্য ক্ষমা করতে ভীত নয়। ৭. পৃথিবীতে প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যমে আপনি যতটা অর্জন করতে পারবেন, তার চেয়ে ঢের বেশি অর্জন করতে পারবেন ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে। ৮. যেখানে একসময় থাকে বেদনার বসবাস, খেলাধুলা সেথায় করতে পারে আশাবাদের চাষ। ৯. পেছন থেকে নেতৃত্ব দাও- আর সাথে অন্যদের বিশ্বাস দাও যে নেতার আছে সম্মুখসারিতে। ১০. আমি বর্ণবাদকে ঘৃণা করি কারণ এটা একটা বর্বর বিষয়, তা সে কালো বা সাদা যেকোনো মানুষের কাছ থেকে আসুক না কেন। ১১. সব সময়, যতক্ষণ না কাজ সমাধা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তা এক অসম্ভব বিষয় বলে মনে হয়। ১২. যেকোনো কিছুতে ভীত নয়; সে নয়, বরঞ্চ যে ভয়কে জয় করে সেই হচ্ছে প্রকৃত সাহসী। ১৩. সম্মান তাদের প্রাপ্য, যারা কখনো সত্যকে পরিত্যাগ করে না, এমনকি যখন পরিস্থিতি অন্ধকারচ্ছন্ন এবং বেদনাদায়ক। ১৪. কেবল শৃঙ্খলহীন হওয়া নয়, বরং স্বাধীন হওয়া মানে শ্রদ্ধা এবং অন্যের স্বাধীনতা বৃদ্ধির সাথে বসবাস। ১৫. শিক্ষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যার মধ্যে দিয়ে পৃথিবীকে বদলে ফেলা যায়। ১৬. বলা হয়ে থাকে যে সত্যিকার অর্থে কেউ একটি জাতিকে জানতে পারে না যতক্ষণ না কেউ একজন এর কারাগারে বন্দি থাকে। ১৭. যখন একজন মানুষ বিবেচনা করা যে নিজ জাতি এবং স্বদেশের প্রতি সে তার দায়িত্ব পালন করেছে, তখন সে শান্তিতে মৃত্যু বরণ করতে পারে।

(তথ্যসূত্র : বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত