লড়াই ভিন্ন মুক্তি নাই

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০১৮, ১২:২৭

সামনে জাতীয় নির্বাচন, এই নির্বাচনকে ঘিরে বেশ দৌঁড়ঝাঁপ শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে। বিএনপি মনোনীত ও উতখাৎকৃত সাবেক প্রেসিডেন্ট ডাঃ বি. চৌধুরী এই ফ্রন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছেন। যদিও আমরা ডঃ বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনকে সহাস্য বদনে ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আশাবাদী হতে দেখেছি, মহাশূন্যের দিকে হাত উঁচু করে দুজনকেই শপথ নিতে দেখেছি। তাঁরা তাঁদের শপথ ভেঙেছেন, কোন সুতোর টানে তাঁদের ছিটকে যেতে হলো তা হয়তো ভবিষ্যতে জানা যাবে। এই ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে যাওয়া নিয়ে অল্প বিস্তর আলাপ আমরা দেখেছি, ডাঃ বি. চৌধুরী জামাত প্রশ্নে ও ড. কামালের অসৌজন্যতাকে দায়ি করেছেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও, সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশে হাজির থাকেনি ডাঃ বি. চৌধুরীর বিকল্পধারা।

ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি হচ্ছে বড় দল, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে জামাতই হচ্ছে বাকি দলগুলোর চাইতে সাংগঠনিক ভাবে শক্তশালী। ঐক্যফ্রন্টে জামাত নেই বলা হচ্ছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে জামাত আছে, সে জোটও অটুট আছে ভেঙে দেয়া হয়নি। যেমন ক্ষমতাসীন দলের সাথে ১৪ দলীয় জোট আছে, জান্তা এরশাদের জাতীয় পার্টি নেই, মহাজোটে জান্তা এরশাদের জাতীয় পার্টি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক চাতুরীর খেলা, যা রাজনীতি সচেতন কর্মী ও সমর্থককে আহত করে।

জামাত প্রশ্নে ডাঃ বি. চৌধূরী এবার বেশ কড়া অবস্থান বজায় রেখেছেন। সামরিক জান্তা জিয়ার দল বিএনপির মহাসচিব থাকার সময় তিনি জামাতের রাজনীতি উত্থানের জন্য কাজ করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জান্তা জিয়ার রাজনীতিকে তিনি টেনে নিয়ে গেছেন। ডাঃ বি. চৌধুরীর চেম্বারে গেলে রবীন্দ্র সংগীতের গান শোনা যেত। তিনি মহাসচিব থাকার সময়টিতেই রমনা বটমূলে ছায়ানটকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে অসহযোগীতা করেছেন, বিএনপির সংস্কৃতি বিকাশে সহায়তাকারী জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস)কে দিয়ে রমনা বটমূল দখল করিয়েছেন। এ সবই হচ্ছে রাজনৈতিক ভন্ডামি।

এখন রাজনীতির মাঠে ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য ছেড়ে দিয়েছে। প্রথম দফাটিতেই রয়েছে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, যিনি জেলে রয়েছেন দুর্নীতির দায়ে, তাঁকে ঐক্যফ্রন্ট রাজবন্দী হিসাবে দাবি করছে। এই একটি দাবিই হচ্ছে ঐক্যফ্রন্টের ৪ নাম্বার লক্ষের সাথে সাংঘর্ষিক, যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। গঠিত হয়েছে আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট সেটির আহবায়ক করা হয়েছে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে। সেটির সমাবেশ থেকে ড. কামাল হোসেনের পক্ষ থেকে সাতটি দাবি জানিয়েছেন এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, তার মধ্যে খালেদা জিয়া মুক্তি সহ তারেক জিয়ার মুক্তির দবিও রয়েছে। 

ঐক্যফ্রন্টের সিলেটের সমাবেশ থেকে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছে, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করেছেন, তাই তাঁকে ছেড়ে দেয়া হোক’। ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর মান্নাও দাবি করেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বয়স ৭৩ তাঁকে ছেড়ে দিতে হবে’।
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সুশাসনের কথা বলছেন, একই সাথে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ছেড়ে দিতে বলছেন। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে জিতলে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন কেউ যদি দুর্নীতি করেও থাকেন, আর তাঁর বয়স যদি ৭৩ হয়, তাহলে নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট জিতলে তাঁদের ছেড়ে দেয়া হবে কী?

ঐক্যফ্রন্টের সাংবাদিক সম্মেলনে ডা. কামাল হোসেন দাবি করেছিলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী, তারেক রহমানসহ অন্য কোনো বিশেষ নেতার প্রতি সমর্থন হিসেবে ঐক্যফ্রন্টকে দেখার সুযোগ নেই’। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট ও ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন নেতাদের বক্তব্য এটিই প্রমাণ কড়ছে ডা. কামাল হোসেন ঐক্যফ্রন্টের সাংবাদিক সম্মেলনে কথামালার বাহাস ফুটিয়ে সত্যকে আড়াল করেছিলেন মাত্র। তিনি জাতির উদ্যেশ্যে যা বলেছিলেন, তাঁর সাথে থাকা বাকিরা তা বিশ্বাস করেন না, অথবা কৌশগত কারণে তিনি মিথ্যার ফুলঝুড়ি ঝেড়ে দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ পরিবর্তন চাচ্ছে, সম্প্রতি কিশোর ছাত্রদের আন্দোলন সে চাওয়াকে অল্প বিস্তর ঝাঁকি দিয়ে, তার অস্তিত্ত্বকে জানান দিয়েছে। দেশে সুশাসনের অভাব রয়েছে, ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়া হয়েছে, দেশ থেকে পুঁজি পাচার হচ্ছে, দেশের তাবৎ প্রতিষ্ঠানই দলদাসদের ভারে ভারাক্রান্ত, আইনের শাসন নেই, বিচারালয়ে নিয়ে যাওয়ার চাইতে ক্রসফায়ার ভালো, এই মতবাদ বাড়ছে, এটি কেউ অস্বীকার করছে না। বাংলাদেশ যে পরিবর্তন চাচ্ছে সে পরিবর্তনের সাথে ড. কামাল হোসেন গং কতটা আন্তরিক? বাংলাদেশে সামরিক জান্তার হাত ধরে বিএনপি – জামাত জোট যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরী করে দিয়ে গেছে, সেখান থেকে দেশ বেরুতে পারছে না। বর্তমান ক্ষমতাসীন মহলও সেই একই বৃত্তে হাঁটছে। বাড়ছে রাজনীতিতে লুটেরা ব্যবসায়ীদের প্রভাব, বাড়ছে বিভিন্ন গ্রুপের নানান বায়না, একে একে সাবাড় হচ্ছে নদী ও বনভূমি এবং জলাশয়। ঐক্যফ্রন্টের একটি দাবিতেও প্রাণ – প্রকৃতি রক্ষার আহবান নেই।

রাজনীতিতে পট পরিবর্তনের নামে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতা পরিবর্তনের আওয়াজ তুলছে, সেই একই চোর – মহাচোরদের ক্ষমতায় বসানোর আয়োজনে শরিক হয়েছেন মাহমুদুর রহমান মান্না সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, ও ড. কামাল হোসেন। দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে থাকা একটি দলের সাহায্যে ড. কামাল হোসেন গং আইনের শাসন ও সুশাসন কায়েম করবে, তা পাগলা গারদে আটকে থাকা কোন পাগলেও বিশ্বাস করবে না।

পরিবর্তনের পক্ষে থাকার যে জোর লড়াই, সেটি থেকে ড.কামাল হোসেন গং দেশকে একধাপ পিছিয়ে রেজিম চেঞ্জের খেলায় ফেলে দিয়েছেন। যেখানে জনতার মৌলিক আদর্শ ও চাওয়ার বিস্তর ফারাক রয়েছে। রেজিম চেঞ্জের খেলায় আমজনতার কোনই লাভালাভের হিসাব নেই।

দোজখ ও নরকের কোন অবস্থানে আপনি আছে তাতে কি আসে যায়, যখন আগুনই তার একমাত্র উপাদান?
দুর্নীতি ও দুঃশাসনের যাঁতাকলে নিস্পেষ্ট জনতার কাছে যাবার লড়াইটি ভিন্ন, সেখানে ড. কামাল হোসেন গং দুর্নীতিবাজদের পক্ষে স্নো, পাউডার ও আলতা মাত্র।

লড়াই ভিন্ন মুক্তি নাই, সে লড়াইয়ে ড. কামাল হোসেন গং আপনার মিত্র না।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত