মন্ত্রী হয়ে কেনো আমি নিজের পায়ে কুড়াল মারবো: ছায়েদুল হক

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:৫৯

অনলাইন ডেস্ক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় দেশ জুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে থাকা মৎস‌্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক এবার সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলো।

তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন। আমার বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষের লোকজন উদ্দেশ‌্যপ্রণোদিতভাবে মিথ‌্যা ও বানোয়াট এই অভিযোগ ছড়াচ্ছে।

ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের তিন শতাধিক ঘরে ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। তাতে অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পরার পাশাপাশি মারধরের শিকার হন অনেকে। হামলার সময় স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ত থাকার কারণে সমালোচনা তৈরি হয়। 

এই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের পর দুই দিনেও ছায়েদুল হক এলাকায় না যাওয়ায় সমালোচিত হচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) মন্ত্রী এলাকায় গিয়ে হিন্দুদেরকে ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়ে আর ঘটনাটিকে অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করার পর নতুন করে সমালোচিত হন। পাশাপাশি তার পদত‌্যাগের দাবি তোলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পালসহ দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষ। 

এই প্রেক্ষাপটে রোববার (৬ নভেম্বর) নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ‌্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মন্ত্রী ছায়েদুল হক।

তিনি বলেন, “একটি শিশুও এ কথা বিশ্বাস করবে না যে আমার নিজ নির্বাচনী এলাকার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরিবর্তে আমি হিন্দুদের গালিগালাজ করে সাম্প্রদায়িক দঙ্গায় উসকানি দেব।”

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের এই উপদেষ্টার দাবি, “এ বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ‌্য, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক, যা আমার শত্রুপক্ষ ছড়াচ্ছে।”

এই ‘শত্রুদের’ নাম বলেননি ছায়েদুল হক। তিনি বলেছেন, বিএনপির কিছু লোক আওয়ামী লীগে ‘ভিড়তে চাইছে’, যাতে বাধা দেওয়ায় তাকে ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ হতে হচ্ছে।    

“বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে আমাকে অভিযুক্ত করায় আমি অত‌্যন্ত মর্মাহত,” বলেন ছায়েদুল।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এবং টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামালেরও  সমালোচনা করেন মৎস‌্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “রানা দাশগুপ্ত নিজেই সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনিও শোনা কথা ভিত্তিতে এই গুরুতরর অভিযাগ করেছেন। অথচ উক্ত নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার স্বার্থে আমার সাথে দেখা করে সহযোগিতাও করতে পারতেন।”

ছায়েদুল হক হিন্দুদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব‌্য করেছেন বলে প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এর আগেই জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। 

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ছায়েদুল হক বলেন, “আমি এ ধরনের কথা বলেছি প্রমাণ করতে পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব। আপনারাই বলুন, মন্ত্রী হয়ে আমি কেন নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারব?”

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “হিন্দু ভাইদের রক্ষা করার পরিবর্তে ষড়যন্ত্রের তীরটি কেন আমার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে- তা আপনারা জানান।”

যারা ভাংচুরে অংশ নিয়েছে তাদের ‘খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির’ মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।  

উল্লেখ্য, সাম্রদায়িক হামলার দায়ে ইতিমধ্যে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তিনজন- নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক আবুল হাসেম, হরিপুর ইউনিয়ন সভাপতি ফারুক মিয়া ও চাপরতলা ইউনিয়ন সভাপতি সুরুজ আলী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রাজনীতিতে এই তিনজনই মৎস‌্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।